ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ফিরতে চাই ‘তিতুমীর ক্যাম্পাসে’

  রাব্বি হাসান

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২০, ০৯:১৬

ফিরতে চাই ‘তিতুমীর ক্যাম্পাসে’

প্রত্যেকের কাছেই প্রিয় তার স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। হোক তা টিনের চাল বা ভাঙা দরজার, ভাঙা জানালার- তবুও প্রতিটি ক্যাম্পাস একেকটি দুর্বলতার স্থান। এইতো বেশ কিছুদিন আগের কথা, যখন দেশে করোনাভাইরাস দেখা মেলেনি, প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন নতুন সুরের বার্তা জানান দিত তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে।

প্রধান গেইট থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের প্রতিটি গাছপালা, চেয়ার, টেবিল, নতুন কিংবা পুরাতন দালানে যত্ন করে গাঁথা প্রতিটি ইট শিক্ষার পতাকা তুলে ধরে রাখত। তিতুমীরে সপ্তাহের প্রায় সকল দিনই পাখির সুরের সাথে তাল মিলিয়ে বাজতো নানা রকম সুর। সকাল শুরু হতো ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ শব্দের সুরে। প্রতিটি ক্লাস, ক্লাসের বেঞ্চ যেন পূর্নতা বহণ করত।

অডিটোরিয়াম থেকে ভেসে আসত শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের কবিতার সুর, নাট্য দলের নাটকের সংলাপের সুর, বিতর্ক মঞ্চে বিতার্কিকদের ঝাঁঝাল বক্তব্য। ক্লাস থেকে মাঠ, দালান থেকে দুর্বা ঘাস, নিয়ম থেকে অনিয়ম তুলে ধরাই ছিল সাংবাদিক সমিতির প্রতিদিনকার রুটিন। ক্যাম্পাসের আকাশ বাতাসে উচ্চারিত হতো ছাত্রলীগের ‘জয় বাংলা’ সুর। স্কাউট, ক্যাডেটদের পায়ের তীব্র শব্দে জানান দিতো উদ্যম, তেজ আর মহত্ত্ব। এমনই তিতুমীরের অভিন্নতায় মিলিত শব্দের সুর থমকে আছে করোনার প্রভাবে।

শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া, ক্লাস, ক্লাব গুলোর নতুন নতুন সুর থমকে গেলেও থমকে যায়নি, তিতুমীরের কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোঁটা, আকাশমনি গাছের আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, কোকিল ডাকার শব্দ।

ক্যাম্পাসের কলাভবনের ঠিক সামনে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হওয়া শিউলি ফুল গাছে এখন হয়তো নতুন কুড়ি জন্মেছে। শেখ রাসেল পুষ্প কাননে হয়তো নতুন নতুন অজানা ফুলের মেলা চলছে। হয়তো দুপুর হলেই বিতর্কমঞ্চে চলে কাকের খোশগল্পের আড্ডা। ওদের বিরক্ত করার এখন কেউ নেই।

খা খা করছে চিরচেনা সেই বাদাম বিক্রির জায়গাটা, কিশোর ছেলে মেয়েগুলো গোলাপ, বেলি ফুলের মালা নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস হেঁটে হেঁটে বিক্রি করে দু’বেলা দুমুঠো আহার জোগাতো। প্রায় দেখা যেত ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় গেটের দিকে পথ শিশুদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটা হচ্ছে। আচ্ছা শূন্য ক্যাম্পাসে এখনও কি ছেলে মেয়ে গুলো আসে? নাকি নতুন কোন মাঠ, নতুন কোন ঘাঠের সন্ধান পেয়েছে তারা?

কবে হবে ফিরে যাওয়া সেই চিরচেনা প্রিয় ক্যাম্পাসে, কবে আবার পাখির সুরের সাথে তাল মিলিয়ে শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের গান, বিতর্ক মঞ্চের যুক্তিনির্ভর বিতর্কে প্রতিপক্ষকে লেঙ মেরে ফেলে দেয়া শব্দ, কবে আবার সাংবাদিক সমিতির সেই তরুণরা মাঠে বিচরণ করবে, কবেই বা ‘জয় বাংলা’ শব্দে মুখরিত হবে ক্যাম্পাস?

এমনই হাজারো প্রশ্নের দানা বেঁধে আছে তিতুমীরের হাজারো শিক্ষার্থীর মনে। অপেক্ষা একদিন সুস্থ পৃথিবীর বুকে, ফিরো যাব তিতুমীরের সবুজ সুরের ক্যাম্পাসে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত