ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘আপনি পুলিশ না, আল্লাহ আমাদের জন্য ফেরেশতা পাঠাইছে’

‘আপনি পুলিশ না, আল্লাহ আমাদের জন্য ফেরেশতা পাঠাইছে’

শুক্রবার সন্ধ্যায় আমি ও রবিন লায়লা ক্লাবের সামনে ছিলাম। হঠাৎ মানুষের কান্না এবং ভয়ঙ্কর চিৎকারের শব্দ শুনার পর দৌড়াইয়া যেয়ে দেখি মারাত্মক এক্সিডেন্ট। রাঙ্গুনিয়া পোমরা সত্যর পিরের মাজার গেইটের পর সৈয়দা সেলিমা কাদের চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের সামনে। একটা সিএনজি উল্টায় পরে খাদে যেয়ে গাছের সাথে বেজে আছে। ভিড় ঠেলে কাছে যেয়ে দেখে, বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। স্বামী-স্ত্রী ও দুই বাচ্চাসহ পুরো এক পরিবার রাস্তায় উপর ছিটকে পড়ে আছে। সবার শরীর রক্তে মাখামাখি করতেছে। মহিলাটার কপালের পাশে গভীরভাবে কেটে ভিতরে ডুকে গেছে। বিশেষ করে পুরুষ লোকটার পা হাঁটু থেকে প্রায় আলগা অবস্থায় ঝুলতেছে। গড়াইয়া রক্ত পড়তেছে। সবাই এরকম মনে করতেছে যে, লোকটা মনে হয় মরে যাবে।

তাদের চারিপাশে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু একটা লোকও এগিয়ে আসছিলো না। সবাই বলতেছিলো, যদি কেউ তাদেরকে ধরে এবং তার হাতে ওই লোকদের মৃত্যু হয়, তাহলে নাকি বিপদে পড়তে হবে। খুব খারাপ লাগতেছিলো যে, চোখের সামনে লোকটা মরে যাবে।

আরও পড়ুন: ভেরিফিকেশনে ফুল মিষ্টি নিয়ে এএসপি

এমন সময় একটা পুলিশের গাড়ি আসে। পরে জানতে পারি, গাড়িতে ছিলেন, রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম স্যার। উনি এসেই তাদের অবস্থা দেখে এক মুহূর্ত সময় দেরি না করে পাশের এক রিকশাচালক ভাইয়ের কাছ থেকে গামছা নিয়ে রানের উপর শক্ত করে বাঁধছিলেন। তারপর অনুরোধ করলেন, কেউ কি উনাকে সাহায্য করবে নাকি? কেউ তো সাহায্য করলোই না, উল্টো উনাকে নিষেধ করতে লাগলো, যেন মারাত্মক এই আহত রোগীদেরকে না ধরে। কারণ যেকোনো সময় রোগীরা মারা যেতে পারে। তখন সাহায্য করতে আসবে, তারা নাকি বিপদে পড়বে। তাই সবাই বলে, ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিতে।

পুলিশের এএসপি হওয়ার কারণে আনোয়ার হোসেন শামীম স্যার তাদেরকে পাত্তা দেয় নাই। উনি বললো, ফায়ার সার্ভিসের জন্য অপেক্ষা করলে তো লোকটা নিশ্চিত মারা যাবে। তাই তাদেরকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য নিজেই গাড়িতে তোলা শুরু করে। সবাই খালি উপদেশ দেয় কিন্তু কাছে আসে না। শুধু আমি এবং আমার বন্ধু রবিন স্যারের সাথে কাজ করলাম। একবারও ভাবি নাই যে, করোনা মহামারীর দিনে এত মানুষের মধ্যে কাজ করায় আমাদের করোনা সংক্রমণ হতে পারে। আমরা নিজের চিন্তা না করে ওদেরকে গাড়িতে তুললাম। শুধু তাই নয়, স্যার অনুরোধ করার পর তাদের সঙ্গে হাসপাতালেও গেলাম। রোগীদের সকল সেবা স্যারকে নিয়ে আমরাই করলাম। পরে সাইরেন বাজিয়ে তাড়াতাড়ি রাঙুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ নিয়া যাওয়ার পর ডাক্তার বলল, দ্রুত তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যেতে হবে। এখানে নাকি রাখা যাবে না। কিন্তু সরকারি এ্যাম্বুলেন্স নাই। আর আহতদের কাছে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নেই। তাই সার্কেল এএসপি স্যার ফোন দিয়ে রাহাতিয়া দরবার শরিফ থেকে ফ্রি একটা এ্যাম্বুলেন্স'র ব্যবস্থা করে দিলেন। আমরা সবাই মিলে তাদেরকে এ্যাম্বুলেন্স-এ তুলে বাড়িতে আসলাম। পুরো সময় স্যারসহ আমরা নিজের হাতে রোগীকে উঠানো নামানোসহ সব কাজ করি।

আরও পড়ুন: আনোয়ার শামীম: এক মানবিক পুলিশ অফিসারের গল্প

খুব ভাল লাগল এরকম একটা কাজ করতে পারলাম। আরো বেশি ভাল লাগল যে, একজন পুলিশ হয়েও সার্কেল এএসপি স্যারের এই কাজ দেখে। এই রোগীটা স্যারকে চিৎকার করে বলতেছিলো, আপনি পুলিশ না, আল্লায় আমাদের জন্য ফেরেশতা পাঠাইছে। আমরা কেউ ভাবি নাই যে, এত বড় অফিসার হয়েও উনি নিজের হাতে আহত লোকদের টেনে তুলবেন আর ঝুঁকি নিবেন। যদি ওই লোকটা উনার গাড়িতে মারা যাইত, তাহলে যে কী হতো!

(জয়নাল আবেদীন জয়ের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত