ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাক্ষাতকারে বাহাউদ্দিন নাছিম

ব্যক্তির অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ বহন করবে না

  শেখ তৌফিকুর রহমান

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২০, ১৯:৩৮  
আপডেট :
 ১৬ আগস্ট ২০২০, ২১:২৭

ব্যক্তির অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ বহন করবে না

আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম। আওয়ামী লীগে এক সুপরিচিত নাম। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে, জেল-জুলুম-নির্যাতন ভোগ করে আজ এ পর্যন্ত এসেছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন নাছিম।

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের সুপ্রতিষ্ঠিত নেতা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল এ সৈনিক শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর থেকেই ছিলেন তার ছায়াসঙ্গী। স্পষ্টভাষী নাছিম দলীয় কোনো অসঙ্গতি থাকলে অকপটে বলতে দ্বিধা করেন না। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। দলীয় বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

’১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে মাদারীপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচত হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন নাছিম। গত নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রীর পরামর্শে প্রার্থী না হয়ে তিনি দলীয় নির্বাচনী পরিচালনা কমিটিতে থেকে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত বিভিন্ন দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেছেন।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেশের রাজনীতির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ জার্নালের সাথে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। বাহাউদ্দিন নাছিমের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলাদেশ জার্নালের নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ তৌফিকুর রহমান। স্বাক্ষাতকারের চুম্বক অংশ আজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশ জার্নাল: দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে ব্যবসায়ী এবং পেশাজীবীদের বেশ প্রধান্য দেখা যাচ্ছে। যারা রাজনীতিতে নতুন আসছেন তারা কি সত্যিকারভাবে গণমানুষের নেতা হতে পারছেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম: রাজনীতিবিদরাই রাজনীতি করেন। এটা ঐতিহ্যগতভাবে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে স্বীকৃত। এটিই হওয়া উচিত। সব শেষে রাজনীতিবিদরাই দেশের মানুষের কথা ভাবেন, দেশের কল্যাণে কাজ করেন। এটাই শেষ জায়গা। রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব রাজনীতির জায়গাটা রক্ষা করা। এটা তাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্বপালনে রাজনীতিবিদরা যদি ব্যার্থ হয়, তাহলে জনগণ তাদের ভোটের অধিকারের মধ্যদিয়ে সেটির জবাব দেয়। ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি আমলা কিংবা অনান্য পেশাজীবীরা কর্মজীবন শেষে রাজনীতি করতে চায়। এটা করতে তো কারো কোনো বাধা নেই। সচেতন নাগরিকের সে অধিকার আছে। কিন্তু রাজনীতির নেতৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ করার দৌরত্তটা এদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তবে সেটা বাস্তবসম্মত নয়। জনগণের জন্য সঠিক হবে না। এখন আমরা দেখি অনেকে ব্যবসা করে ব্যবসায়ীদের নেতা হবেন, আবার রাজনৈতিক নেতা হবার জন্যও অনেকের দৌঁড়ঝাপ। আমরা দেখেছি ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করে যখন দেশের হর্তাকর্তা হন, তখন তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আমলাদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা রাজনীতিকে কলুষিত করুক সেটা জনগণ চায় না। রাজনীতি যদি রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তখন সেটি ভয়াবহ হয়। কোনো নজির নেই যে অগণতান্ত্রিক শক্তি কোনো দেশকে কল্যাণকর জায়গায় পৌছে দিতে পেরেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: টানা তিন মেয়াদে সরকার গঠন করায় দলে বহু অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। দলের পক্ষ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়াটার অগ্রগতি কতদূর?

বাহাউদ্দিন নাছিম: রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। এর গতি কখনো কমে কখনো বাড়ে। কিন্তু কখনো বন্ধ হয় না। আওয়ামী লীগে যেসব অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে আমরা দেখতে পেয়েছি তাদের তালিকা নেত্রী নিজেই তৈরি করে আমাদেরকে দিয়েছেন। প্রত্যেকটি বিভাগীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে উনি সরবরাহ করেছেন বিগত কাউন্সিলেরও ছয় মাস আগে। উনার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি এবং অনেক অনুপ্রবেশকারীদের আমরা বের করে দিয়েছি। এটা ছিলো নেত্রী সরাসরি নির্দেশ। এই নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন করে অন্য কোনো অনুপ্রবেশকারী আবার ঢুকতে না পারে এটাও ছিলো উনার নির্দেশ। সেই বিচেনায় খুব বেশি অনুপ্রবেশকারী আছে সেটাও বলতে পারিনা। এতটুকু বলতে পারি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা আমরা কমিয়ে এনেছি। আরও কিছু অনুপ্রবেশকারী আছে কিনা আমরা সেটা দেখছি। যদি থাকে তাদেরকেও চিহ্নিত করে আমরা বের করে দেবো।

যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে, আবার দলীয়ভাবেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের নেত্রীর অবস্থান জিরো টলারেন্স। দলের পক্ষ থেকে সেটি অব্যাহত রয়েছে। আমরা সতর্ক রয়েছি। কোন ধরনের স্বার্থান্বেষী মহল কিংবা আদর্শহীন ব্যক্তিদের দ্বারা আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয়, জনপ্রিয়তায় কোনো ধরনের আচড় না পড়ে সে বিষয়টি আমরা সর্বচ্চভাবে সর্বাধিক তাগিত দিয়ে দেখছি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের রাজনৈতিক সংগঠন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধরনের নেতা, কর্মী সমর্থক আছে। এই দলে এতবেশি মানুষ তৃণমূলে রাজনীতি করে এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিরল। সেই বিবেচনায় আওয়ামী লীগে যদি এমন লোক ঢুকে পড়ে তাহলে পাহারা দেয়া যথেষ্ট কষ্টকর। এই সত্যতা তুলে ধরতে হবে। দুই চারটা লোকের অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। ব্যক্তির দায় ব্যক্তিকে বহন করতে হবে। অপরাধীদের বিষয়ে আমাদের নেত্রী অত্যান্ত কঠোর।

দলের মধ্য থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। অনেকেই বলে ধরা পড়ার পরেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাদের ধরেছে কে, সেই সরকারটা কার? সেই সেরকার প্রধান কে? আমাদের নেত্রী যেটা করেছেন অতীতের কোন সরকার কি সেটা করেছে? সেটা কিন্তু কেউ বলে না। এটা সরকারের কৃতিত্ব, আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব। অতীতে বিএনপি জামাত যখন ক্ষমতায় ছিলো, তখন এই অপরাধীরাই অপকর্ম করেছে, তাদেরকে তখন ধরা হয়নি। আওয়ামী লীগের সরকার অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: সরকার মাঝে মধ্যে যে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছে সেটা জনগণের মাঝে প্রশংসিত হয়েছে। তবে দেখা গেছে যে শুদ্ধি অভিযানের আওতায় শুধুমাত্র রাজনীতিবিদদেরকে আনা হয়েছে। দুর্নীতির যে চক্র সেই চক্রের সব থেকে সুবিধাভোগী কিছু অসাধু সরকারী আমলা ও কর্মকর্তারা। এদের দিকে কেন এই শুদ্ধি অভিযানটা এখনো যাচ্ছে না?

বাহাউদ্দিন নাছিম: দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। যারাই দুর্নীতিতে জড়াবে তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। শুদ্ধি অভিযান নিজের ঘর থেকে শুরু করেছেন, এটাই নেত্রীর মহানুভবতা। এটা সর্বস্তরে চলবে। অপরাধী সরকারে হোক, রাজনৈতিক পরিচয়ধারী হোক, আমলা হোক তাতে রেহাই পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। একজন ব্যবসায়ী বা আমলা এসে দলের নেতৃত্ব দেব, দলের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবে, এটা কোন দেশে ভালো ফল বয়ে এনেছে এটার নজির নেই।

বাংলাদেশ জার্নাল: কথা প্রসঙ্গে যতটুকু বুঝলাম অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে বেশ কঠোর অবস্থানেই আছে আওয়ামী লীগ। তবে অনুপ্রবেশকারীদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে নীতিগত কোন ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে দল কি ভাবছে?

বাহাউদ্দিন নাছিম: এই বিষয়টা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এটা নিয়ে আলোচনা হবে। অনুপ্রবেশকারীদের যদি কেউ পৃষ্ঠপোষকতা করে, লালন-পালন করে নিজের দলভারী করে বা নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করার জন্য দলে ভেড়ায় তাদের ব্যাপারেও দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে।

বাংলাদেশ জার্নাল: তৃণমূলে দ্ব›েদ্বর কারণে অনুপ্রবেশকারীরা দলে ভেড়ার সুযোগ পাচ্ছে কিনা?

বাহাউদ্দিন নাছিম: তৃণমূলে আসলে কোনো দ্বন্দ্ব নাই। আওয়ামী লীগ একটি জনপ্রিয় দল। তৃণমূলের শক্তিতেই দলটি পরিচালিত হয়। তৃণমূলে এতবেশি জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে অতীতে কোন দল পায়নি। এটা পাকিস্তান আমলেও ছিলো না, এমন কি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কেউ অর্জন করতে পারেনি। যখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলো, তখনও আওয়ামী লীগ তৃণমূলের শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবেই পরিচিত ছিলো। তখন দেশিবিদেশী সংবাদ মাধ্যম আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে উপস্থাপন করেছে। এটা কারো অজানা নয়। সেই বিবেচনায় তৃণমূলে প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমাদের দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এত সক্রিয়, সংখ্যায় এত অধিক, সেখানে নেতৃত্বের একটা প্রতিযোগিতা থাকবে। এই প্রতিযোগিতাটাই আমাদের চোখে পড়ে। সেটাকে দ্ব›দ্ব হিসেবে দেখা হয় তাহলে সেখানে প্রতিযোগিতা আর থাকবে না।

বাংলাদেশ জার্নাল: এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। এখন শোকের মাস চলছে। ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়নি আওয়ামী লীগ। কারণটা কী?

বাহাউদ্দিন নাছিম: এটা সত্য। প্রতিবাদ হয়েছে; কিন্তু প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। এই ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে। তৎকালীন যারা নেতা ছিলেন, যাদের উপর দায়িত্ব বেশি ছিলো, যাদের উপর বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব ছিলো তারা কি দায় এড়াতে পারে? তবে এটা সত্য একটা অংশের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, ভীতি ছিলো। আরেকটা অংশ ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে জড়িত। সব কিছু মিলিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা দরকার। কমিশন করে কারা এ ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলো তাদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার। কারণ এদের অনেকেই বেঁচে নেই এখন। কেউ কেউ বেঁচেও থাকতে পারে। তারপরও এদের বিষয়টা ক্লিয়ার হওয়া দরকার। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর গঠিত নতুন সরকারের যারা মন্ত্রী হয়েছেন তারা কি সবাই ভয়ে ওই দলে দলে গেছেন? যারা বলে ভয়ে ওই দলে গিয়েছিলো তাদের কথা দায় সারা। আজকে যখন পরিস্থিতি উল্টে গেছে, এখন এই সমস্ত কথা বলে অনেকে দায় সারার চেষ্টা করছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেকের কাছে শূনেছি, তারা বলেছে ভুল হয়ে গেছে, জীবনে একটা ভ‚ল করেছি। মন্ত্রী হয়ে কেন শপথ নিলাম বুঝলাম না.. অনেকক কথাই বলেছেন। এটা কি বিশ্বাস করা যায়? এটা কি মেনে নেয়া যায়? এই বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার হওয়া দরকার। কারণ ষড়যন্ত্র বহুবার হয়েছে, আবার যে হবে না এটা কি বলা যায়? সুতরাং যড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ তুলে ধরতে পারলে কোন ষড়যন্ত্রই বারবার ঘটানো সম্ভব হবে না।

শুধু খুনিদের বিচার করলে হবে না। এই খুনিদের কারা সংগঠিত করেছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাস ১৫ আগস্টের আগের রাতে ওই দিন সারারাত খোলা ছিলো। ওই ষড়যন্ত্রের সাথে যারা জড়িত ছিলো, তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে নির্দেশ দেয়া ছিলো। এগুলো ঘটনা। অনেকে আমেরিকান এম্বেসিতে গিয়ে আশ্রয় চেয়েছে, আবার অনেকে খুনিদের পক্ষ থেকে যারা খুন করেছে তারাও কেউ কেউ আশ্রয় চেয়েছে। আবার অন্যদিক থেকে কেউ কেউ তাদের সাথে যোগাযোগ করে আশ্রয় চাওয়ার চেষ্টা করেছে। আমি শুনেছি তাদেরকে দেয়া হয়নি। এগুলো বের হবে।

১৫ আগস্টের ভোর রাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো। তারপরপরই কে কে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো? সৌদি আরব, চীন ওই সময় স্বীকৃতি দিলো, এর কারণটা কি? শুধুমাত্র বাংলাদেশের ষড়যন্ত্রই ছিলো না, এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও ছিলো। সম্রাজ্যবাদীদের, আধিপত্যবাদিদের ষড়যন্ত্র ছিলো। সেই ষড়যন্ত্র কি বন্ধ হয়েছে? এখনো চলছে। আইএসআই বাংলাদেশে অর্থের বিনিয়োগ করে। সেই রাজনৈতিক দলগুলো হচ্ছে জামায়াত-শিবির, বিএনপি এই ঘরানার রাজনৈতিক দল। এক সময়ের প্রাক্তন মসুলম লীগার যারা, সেই পরিবারের বনেদি রাজনীতিক যারা আছে তারাই সেই টাকা বিনিয়োগ করে। তারাই বাংলাদেশের উপর ভর করে আমাদের দেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে। এতে শুধু বাংলাদেশের নয়, প্রতিবেশী দেশকেও অস্থিতিশীল করতে চায়।

বাংলাদেশে সব সময় আইএসআইয়ের প্রভাবিত একটি গোষ্ঠী আছে। এরা সংকুচিত হবে। সময় সুযোগ পেলে আবার এরা প্রসারিত হয়। এটা ওদের আজীবনের আয়ের জায়গা, ব্যবসা। আইএসআইয়ের এজেন্ট হয়ে পয়সা খাওয়া, টাকা নেয়া, দেশের ক্ষতি করা। এরা শুধু রাষ্ট্রদ্রোহী না, এরা দেশের শত্রু।

বাংলাদেশ জার্নাল: বঙ্গবন্ধুর হত্যার ঘটনায় ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কবে নাগাদ কমিশন গঠন হতে পারে?

বাহাউদ্দিন নাছিম: এটা আমাদের আহবান। এটা সরকার গ্রহণ করেছে। আইনমন্ত্রী আরো এক দু বছর আগে বলেছেন এই ধরনের চিন্তা ভাবনা চলছে। আজকে মানুষের মধ্যে এই জায়গাটা তৈরি হয়েছে। এটা এক দু বছরে হয়নি। ধীরে ধীরে হয়েছে। যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, কার্যক্রমটা এক দিনে হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেকেই বলেছে, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কি ঘটেছে... এখন জাতিকে ভাগ করার কী দরকার। এই বিষয়টা বিএনপি জামায়াতিরা প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিলো। তারা বলতো এই দেশ একটা ছোট দেশ, ভাগাভাগীর দরকার কী? ৭১ সালে যারা অপকর্ম করেছে, তাদের বিচার করার দরকার কী? এই অপপ্রচারটা প্রতিষ্ঠা হয়ে গিয়েছিলো। এটা সঠিক ছিলো না। আবার পরবর্তিতে এই দেশের মানুষের সমর্থন নিয়েই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে সুশাসনকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সেই জায়গায় এক বছর পার করে দ্বিতীয় বছরে সরকার। দেশ কি প্রতিশ্রুতি সুশাসনের দিকে এগুচ্ছে?

বাহাউদ্দিন নাছিম: সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রশাসনের গুরুত্ব অপরেসীম। প্রশাসনকে গুরুত্ব না দিয়ে কোনো কিছুই করার সুযোগ নেই। দেশ প্রশাসনিক দায়িত্বে যারা থাকবেন তারা চালাবেন, এটাই নিয়ম। সেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নতুন কিছু করা যাবে না। সিস্টেমের কিছু পরিবর্তন হতে পারে। প্রশাসনকে গুরুত্ব না দিয়ে চলা যাবে না। তবে প্রশাসনের লোকজন যেন তাদের দায়িত্ব গুরুত্বের সাথে পালন করে সেটার দিকে নজর রাখা সরকারের দায়িত্ব। প্রশাসনের জায়গায় প্রশাসন থাকবে। সততার সাথে নিষ্ঠার সাথে, জনগণের সেবক হিসেবে সেবকের মত তারা দায়িত্ব পালন করে কিনা সেটা সরকারের। সেই দায়িত্বটা সরকার পালন করে কিনা সেটা দেখার বিষয়। আমি মনে করি এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সরকার কোন অসুবিধায় পড়ছে কিনা আমার মনে হয় না।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসটি/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত