ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

'তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিক আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন'

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০১৮, ১২:৩৮

'তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিক আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন'

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেননি। তিনি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।

বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন ‘লন্ডন হাই কমিশনে নিজের পাসপোর্ট জমা দিয়ে তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন। সে কিভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়’। আসলেই সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও অনর্গল মিথ্যা বলার যে একটি ‘সেন্টার অব এক্সসিলেন্স’ সেটি আবারও প্রমাণ করলেন সেই কেন্দ্রের একজন সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে, যে তিনি বাংলাদেশে নাগরিকত্ব বর্জন করছেন। এই বিতর্ক করে তারা (সরকার) সদস্যার পড়েছে। আমি বলতে চাই, কোন মতেই না, তিনি নাগরিকত্ব বর্জন করেননি। সম্পূর্ণভাবে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।

সরকার নির্বাচনের কথা বলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, খালেদা জিয়াকে মুক্তি, সকল রাজবন্দিদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। তাহলেই নিরপেক্ষ অবস্থা তৈরী হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ও জাতিকে জানাতে চাই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বৃহৎ জাতীয় ঐক্য হড়ে তুলে বেগম জিয়াকে মুক্ত ও গণতন্ত্রকে মক্ত করবো। আবারও সকল রাজনৈতিক দলসহ সকল সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ পরিস্থিতিতে আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে। আপনারা অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন, বিভিন্ন অপপ্রচার ও নির্যাতনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের অন্যাভাবে গ্রেপ্তার করছে। আজকে অনুমতির পরে পুলিশের যে আচারণ, সেটা কোন ক্রমেই গণতন্ত্রের পক্ষে নয়। সুতরাং এই পরিস্থিতি আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন করতে হবে। আর আন্দোলনেই মধ্যে দিয়েই দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। আমরা মুক্তি চাই। আর তার মুক্তিই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।

তিনি বলেন, আমরা জানি, সরকার কেন বেগম জিয়াকে আটকে রেখেছে। কারণ তারা (সরকার) আতঙ্কিত। যদি বেগম জিয়া বাইয়ে থাকেন তাহলে গণতন্ত্রের জন্য যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনকে সরকার আটকে রাখতে পারবে না এবং তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা প্রসঙ্গে মির্জা আলমগীর বলেন, আজকে প্রায় আড়াই মাস হতে চলছে বেগম জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এই কারাগারের মধ্যে তিনি প্রতিদিন অসুস্থ্য হচ্ছেন। প্রতিদিন ক্রমান্বয়ে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে। গত ১৪ দিন যাবৎ তার পরিবারের সদস্যরা এবং আমরা কেউ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারিনি। শুধুমাত্র গতকাল তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করেছেন। আমরা জানতে পেরেছি, তিনি এতই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যে, ২য় তলা থেকে এক তলায় আসতে পারছেন না! আমরা বারবার বলেছি, তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে এবং বিশেষ করে ইউনাইটেড হাসপাতালে তার চিকিৎসা অত্যন্ত প্রয়োজন।

মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার বেগম জিয়া ও বিএনপিকে বাইয়ে রেখে ৫ জানুয়ারির মত আরেকটি পাঁতানো খেলা করতে চায়। কিন্তু ৫ জানুয়ারি আর এখনকার সময় এক নয়। কারণ বারবার জনগণকে বোকা বানানো যাবে না। এমন একটি আন্দোলন গড়ে তুলবো যাতে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হয়।

দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, গণতন্ত্রকে আজ নির্বাসিত এবং বন্দি করা হয়েছে। যার ফলে আজ আমরা আজ কথা বলতে পারি না। যার যার এলাকায় নিজেদের সংগঠিত করুন। একদিন সময় আসবে যখন গণজোয়ারে এ সরকার ভেসে যাবে যাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজ বাংলাদেশে স্বৈর-শাসন চলছে। যার কারণে আজকে কোন নাগরিক অধিকার নেই। জনগণের নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।দেশে আজ কোন সংবিধান নেই- বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দলের পূর্ব ঘোষিত এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল পৌনে ১০ টা থেকেই দলটির অফিসের নিচে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ব্যানার হাতে নিয়ে জোমায়েত হতে থাকে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে ১০ টার মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মীরা জোমায়েত হন। পরে সকাল ১১ টায় মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয়। এসময় তারা বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তুলেন।

এদিকে বিএনপি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং এর আশেপাশে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলেছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, অ্যাডভোকেট আহমহ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নাল আবেদীন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সাহেল প্রিন্স, বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, আব্দুস সালাম আজাদ, মহিলা নেত্রী সুতলানা আহমদে, ছাত্রদল নেতা নাজমুল হাসানসহ দলটির অংশ-সংগঠন ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

গত রোববার খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে গত রবিবার ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি এবং সোমবার নগর বিএনপি দক্ষিণের উদ্যোগে রাজধানীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

কেএস/এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত