ঢাকা, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

লন্ডন ছাড়ছেন আশরাফকন্যা!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:১৬  
আপডেট :
 ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৩৯

লন্ডন ছাড়ছেন আশরাফকন্যা!

মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মা-বাবা দু'জনকেই হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সদ্য প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একমাত্র মেয়ে সৈয়দা রীমা ইসলাম। লন্ডনপ্রবাসী রীমা দেখেছেন তার বাবার প্রতি দেশের মানুষের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এ থেকেই ভাবছেন দেশে ফিরে আসার কথা। মনকে শক্ত করে কাটিয়ে উঠতে চান শোক। লন্ডনের কর্মস্থলে কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর মমতাময়ী মা শীলা ইসলামকে হারান রীমা ইসলাম। জীবনের প্রথম সেই ধাক্কাটি সামলে উঠেছিলেন বাবা সৈয়দ আশরাফের স্নেহের স্পর্শে। কিন্তু বছর পেরোতেই শেষ আশ্রয় বাবাকেও হারালেন তিনি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফ ৩ জানুয়ারি ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে জন্ম এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন রীমা। সেখানেই এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। লেখাপড়া শেষ করে লন্ডনেই ব্যাংকে চাকরি করছেন। হংকং-সাংহাই ব্যাংক করপোরেশনে (এইচএসবিসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। গত বছরের ৩ জুলাই সৈয়দ আশরাফ গুরুতর অসুস্থ হয়ে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি হন। অসুস্থ বাবার শুশ্রূষার জন্য কর্মস্থল ছেড়ে ব্যাংককে ছুটে আসেন রীমা। আশা ছিল উন্নত চিকিৎসায় অচিরেই পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে আবার তার বাবা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগের মতোই ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ওপারে পাড়ি জমান আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা সৈয়দ আশরাফ।

সৈয়দ আশরাফের পরিবারের সদস্যরা জানান, রীমা জানতেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার বাবা একজন জনপ্রিয় মানুষ। কিন্তু এতটা জনপ্রিয় ছিলেন, তা কখনও ভাবেননি। ব্যাংকক থেকে বাবার মরদেহ নিয়ে ঢাকায় অবতরণের পর শোকার্ত হাজারো নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষের আহাজারি দেখে রীমার চোখে জমেছিল শোক-বিহ্বল গর্বের অশ্রুবিন্দু। জাতীয় সংসদের উত্তর প্লাজায় প্রথম জানাজায় হাজার হাজার মানুষের ঢল, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে দ্বিতীয় জানাজায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি এবং ময়মনসিংহ শহরে তৃতীয় জানাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণ দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি রীমা। এমন একজন বাবার সন্তান হতে পেরে যুগপৎ গৌরব ও অহঙ্কারও অনুভব করেন।

কর্তব্যের টানে মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারী) বাবার শেষ চিকিৎসাস্থল ব্যাংকক গেছেন তিনি। সেখানে হাসপাতালের বকেয়া দেনা ও বকেয়া বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করে ফিরে যাবেন নিজের কর্মস্থল লন্ডন শহরে।

রীমা ইসলামের চাচাতো ভাই সৈয়দ তারেকুল ইসলাম ভিক্টর জানান, বাংলাদেশের আপামর মানুষের ভালোবাসা দেখে এবং পিতার প্রতি জনগণের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা দেখে রীমা অচিরেই দেশে ফিরে আসার চিন্তা করছেন। লন্ডনে চাকরি ছাড়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সহসাই তার ফিরে আসার কথা রয়েছে।

বাবার মতোই মৃদুভাষী, শান্ত ও ধৈর্যশীল তরুণী রীমা। শোলাকিয়া মাঠে বাবার জানাজার সময় পাশেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন তিনি। এ সময় তাকে দেখে আগামীর সম্ভাবনার ইঙ্গিত খুঁজে পান উপস্থিত মানুষ। কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে রীমা তার বাবার উত্তরসূরি হতে পারেন- এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে। তাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর আলম জাহান বলেন, সৈয়দা রীমা ইসলামই হতে পারেন কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের যোগ্য উত্তরসূরি। তার মধ্যে প্রয়াত পিতার ব্যক্তিত্ব এবং দেশপ্রেম স্পষ্ট। যা আগামীর স্বচ্ছ রাজনীতিকে আরও বিকশিত করতে পারে।

এদিকে দেশে এসে রীমার রাজনীতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। রাজনীতিতে আসার বিষয়ে, রীমা ইসলামের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এখনই এমন কিছু চিন্তা করেননি তারা। মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে পরিবারে এ নিয়ে তেমন কোনো আলাপও হয়নি।

এ বিষয়ে রীমা ইসলামের চাচা সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম বলেন, আমাদের পরিবারের অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যদি চান, আমাদের পরিবার থেকে কিশোরগঞ্জ-১ এ কাজ করার সুযোগ দেবেন।

তবে, শেখ হাসিনা যেভাবে চান সেভাবেই হবে বলেও জানান সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে এবং আমাদের পরিবার যতদিন থাকবে ততদিনই আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকতে চাই।

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত