ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঐক্যফ্রন্টের ‘ঘরে তালা’

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:২৯  
আপডেট :
 ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৩৬

ঐক্যফ্রন্টের ‘ঘরে তালা’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত কয়েক দিনের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এ চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের দলগুলো পায় মাত্র ৮ আসন। এর মধ্যে ৬টি পায় বিএনপি এবং বাকি ২টি পায় গণফোরামের প্রার্থীরা।

ভোট শেষ হওয়ার পর ওই দিন রাতেই বিএনপি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে এবং পুন: নির্বাচনের দাবি জানায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্য দলগুলোও বিএনপির সঙ্গে এ সময় একমত পোষণ করে। বিএনপির পক্ষ থেকে পরে জানানো হয় তাদের নির্বাচিতরা কেউ শপথ নেবে না। কিন্তু গণফোরাম বিএনপির এমন সিদ্ধান্তে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও গোপনে তারা ভিন্ন মনোভাব দেখায়। মূলত তখন থেকেই বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি দূরত্ব শুরু হতে থাকে। কেননা ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। দিন যত যাচ্ছে দূরত্ব হওয়ার বিষয়টি আস্তে আস্তে পরিস্কার হচ্ছে। এ ছাড়া জামায়াত প্রশ্নেও বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দূরত্ব বাড়ছে।

জানা গেছে, নির্বাচনে ভরাডুবির পর চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন। বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যদলগুলোর নেতারা উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিল প্রধান শরিক দল বিএনপির শীর্ষ নেতারা। ওইদিন বিকাল ৫টায় রাজধানীর মতিঝিলে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে জোটের স্টিয়ারিং কমিটির এ বৈঠক হয়।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী এই জোট গঠনের পর এবারই প্রথম জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপির কাউকে দেখা যায়নি।

জোটের নেতাদের দাবি, অসুস্থতার কারণে বৈঠকে যোগ দেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে দলটির অন্য কোনো প্রতিনিধিকে কেন বৈঠকে দেখা যায়নি-এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, মির্জা ফখরুল অসুস্থ থাকায় তিনি আসতে পারেননি। আসার কথা ছিল আবদুল মঈন খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়েরও। তারাও একটা জায়গায় আটকা পড়েছেন। হয়তো পরবর্তী বৈঠকে আমরা একসঙ্গে বসব।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে আমাদের মহাসচিব সবসময় যান। তিনি বলতে পারবেন কেন যাননি। ঐক্যফ্রন্ট থেকে তার এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে-এ ব্যাপারে মঈন খান বলেন, আমি সঠিক জানি না। আর গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাকে শেষ মুহূর্তে বলা হয়েছে। তখন যাওয়ার মতো কোনো ওয়ে ছিল না।

বিএনপি নেতারা বলছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিদের্শনা অনুযায়ী তারা ঘর গোছানোর কাজে বেশি ব্যস্ত। দলের স্থায়ী কমিটির পদসহ কেন্দ্রীয় যেসব পদ খালি আছে সেগুলো দ্রুত কীভাবে পূরণ করা যায় এবং কিভাবে সরকার বিরোধী আন্দোলন সফল করা যায় সে বিষয়ে তারা এখন বেশি মনোযোগী। ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বিএনপি নতুন কর্মকৌশল ঠিক করছে। শিগগিরই এসব কৌশলের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

আর ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলছেন, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে সংলাপের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী বাদে দেশের অপরাপর রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের এতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এই সংলাপকে ‘গণসম্মিলন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন, কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ও গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চ-এই তিনটি ভেন্যুই প্রাথমিকভাবে ঠিক করে রেখেছেন তারা।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলছেন, বিএনপির আসলে লেজেগবোরে অবস্থা। তাদের ঐক্যফ্রন্টেও ভাঙনের সুর বেজে গেছে।

এদিকে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় পদে পরিবর্তনের গুঞ্জন ধীরে ধীরে সত্যি হতে যাচ্ছে। সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার না করার ব্যর্থতাকে সামনে এনে বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সরানো হচ্ছে। তাকে সরিয়ে কাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেবেন বিএনপির হাই কমান্ড?

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, দলটির সিনিয়র একটি গ্রুপ আর কোনভাবেই মহাসচিব পদে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেখতে চাচ্ছেন না। তাছাড়া ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে দিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে অনেক নেতা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি তাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে ড. কামালের উপর নির্ভর ছিলো। বিএনপি ভেবেছে ড. কামাল সাহেবের ওপর ভর করে ক্ষমতায় চলে যাবে। কিন্তু নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি পর ‘দোষ’ ড. কামালের উপর এসে পড়লো। মূলত বিএনপির স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় তারা ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে দিতে চাইছে।

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত