ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

সমালোচনার জবাব দিলেন মাশরাফি

  স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৩৬  
আপডেট :
 ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৪৩

সমালোচনার জবাব দিলেন মাশরাফি

নিজের ক্যারিয়ারের দুইশতম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেছেন মাশরাফি, অথচ সেটা নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা গেল না খুব বেশি মানুষের মধ্যে। গত কিছুদিন ধরেই মাশরাফির নির্বাচনে অংশ নেয়ার খবরে তোলপাড় পুরো দেশ, মাশরাফির দিকে সবার আগ্রহ বরং অন্য কারণে ছিল।

প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে নাম লেখানোর পরে এটাই মাশরাফির প্রথম ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ, সেখানে তার পারফরম্যান্স কেমন হয়, এটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা তো কম হয়নি। মাশরাফির রাজনীতিতে আসাটা যারা ভালোভাবে নিতে পারেনি, তারা মোটামুটি ছুরিতে শাণ দিয়েই রেখেছিলেন, একটু উনিশ বিশ হলেই সমালোচনার কোপ একটাও মাটিতে পড়তে দিতেন না তারা৷ কিন্ত সব গুবলেট করে দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা নিজেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইশোর নীচে আটকে রাখার পেছনে সবচেয়ে বড় কৃতিত্বটা তার, আজকের দিনে দলের সেরা বোলারও তিনিই!

দশ ওভারে ত্রিশ রান দিয়ে মাশরাফি আউট করেছেন তিন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানকে। ইকনোমি রেট মাত্র তিন, এই যুগের ক্রিকেটে ওয়ানডে ম্যাচে দশ ওভার বোলিং করে তিন ইকনোমি রেট রাখাটা ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকারের চেয়েও বোধহয় কঠিণ। মাশরাফি বোধহয় নিজের নির্বাচনী প্রচারণাটা মিরপুরের হোম অফ ক্রিকেট থেকেই শুরু করতে চাইলেন, নইলে প্রতিপক্ষকে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেয়ার মানসিকতা কেন ম্যাচের শুরু থেকেই?

তিন পেসার নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ দল, তবুও প্রথম নয় ওভার শেষ করলেন দুই স্পিনার সাকিব-মিরাজ মিলেই। আর তাতেই শুরুতে বোতলবন্দী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাশরাফি নিজে বল হাতে নিলেন পনেরোতম ওভারে, কভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ককে স্বাগতম জানিয়েছিলেন ব্রাভো। বড়দের সাথে বেয়াদবি করলে যা হয়, সেই ব্রাভোকে এরপরে একটানা ঘোল খাইয়েছেন মাশরাফি। টানা ডট বলে বিপর্যস্ত করেছেন, বার দুয়েক তো ক্যাচ তুলেও বেঁচে গেছেন ব্রাভো। শেষমেশ তামিমের দুর্দান্ত ক্যাচে ইতি ঘটেছে ব্রাভোর ইনিংসের, বোলারের নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা৷

অফস্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে ছুটে যাওয়া বলে ব্যাট চালাতে বাধ্য হয়েছেন শাই হোপ, মিরাজের হাতে পড়েছেন ধরা। মাশরাফির দ্বিতীয় শিকার তিনি। এরপরে প্রতিপক্ষের অধিনায়ককেও প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছেন মাশরাফিই। লিটনের হাতে ধরা পড়া আগে রান তোলার সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়েছিল তাকেও। নিজের দুইশোতম ওয়ানডেটা বল হাতে দারুণ স্মরণীয় করে রাখার জন্যে এর বেশি কিছু করার দরকার ছিল না মাশরাফির।

তবে আজ কিছু মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন মাশরাফির বাজে পারফরম্যান্সে। তারা অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছিলেন, বোলিংটা একটু খারাপ হলেই গালি দিয়ে উড়িয়ে দেবেন বাংলাদেশের অধিনায়ককে৷ এরাও কিন্ত বাংলাদেশী, কয়দিন আগেও তারা মাশরাফিকে ‘অষ্টম বীরশ্রেষ্ঠ’ মনে করতো৷ তবে যেইনা মাশরাফি রাজনীতিতে আসার ঘোষণা দিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে তারা রঙ পাল্টে ফেলেছে গিরিগিটির মতো। মাশরাফি এখন তাদের চোখে দেশদ্রোহী হয়ে গিয়েছেন, তাদের মনে রাজাকারের চাইতেও বেশি ঘৃণা নাকি মাশরাফির জন্যে!

এরাই বলার চেষ্টা করেছিল, রাজনীতিতে এলে ক্রিকেটার মাশরাফি হারিয়ে যাবেন। এরাই বলেছিল, নির্বাচনের ডামাডোলে ক্রিকেটে নাকি মন দিতে পারবেন না মাশরাফি! এরা শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল, একটা ম্যাচ, একটু বাজে পারফরম্যান্স হলেই এরা ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করতো মাশরাফিকে, যা নয় তাই বলতো এই মানুষটার নামে। মাশরফির ফেসবুক পেজে গালিগালাজের ঝড় বয়ে যেতো।

সেই সুযোগটা মাশরাফিই এদের দেননি, নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছেন সবার৷ আজ মাশরাফির বোলিঙে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যতটা না পুড়েছে, তারচেয়ে বেশি পুড়েছে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এসব কুলাঙ্গারের মন। মাশরাফির বলে আউট হয়ে শাই হোপ, রোভম্যান পাওয়েল কিংবা ব্রাভো যতটা না মন খারাপ করেছেন, তারচেয়ে বেশি হৃদয়ভঙ্গের বেদনা সয়েছে মাশরাফির ব্যর্থতার প্রতীক্ষায় বসে থাকা এই লোকগুলো। মাশরাফির একেকটা বল যেন শেল হয়ে বিঁধেছে এদের বুকে।

চার দিয়ে শুরু, ছক্কা দিয়ে শেষ। আর মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, সঙ্গ দিয়েছেন বাকিরাও। শেষ বলে ওই ছক্কাটা হজম করতে না হলে, শেষ ওভারে এগারোটা রান না এলে মাশরাফির বোলিং ফিগারটা বাঁধিয়েই রাখা যেতো স্বর্ণ দিয়ে। যেটুকু হয়েছে সেটাই বা কম কি? ১৯৫ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বেঁধে রাখার মূল কৃতিত্বটা তো মাশরাফিরই। নিজের বোলিংটা বাদই দিলাম, যেভাবে তিনি বোলিং পরিবর্তন করেছেন, রুবেল-মুস্তাফিজ আর মিরাজকে ব্যবহার করেছেন, ম্যাচটা তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাত থেকে অনেকটা বেরিয়ে গেছে সেখানেই। এরপরেও নাকি মাশরাফি ক্রিকেট ভুলে যাচ্ছেন! যারা এসব বলে, ওরা জানে না, যে পারে, সে সবই পারে। আর ওদের মতো যারা পারে না, তারা কিছুই পারে না।

সাতটা মেজর ইনজুরি যাকে ক্রিকেট থেকে দূরে সরাতে পারেনি, দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ার বেদনা যাকে ক্রিকেট থেকে আলাদা করতে পারেনি, জোর করে দল থেকে অবসর নিতে বাধ্য করার কষ্টটা চেপে রেখে যিনি দলের জন্যে ওয়ানডেটা খেলে যেতে পারেন, সেই মানুষটা রাজনীতিতে এসে ক্রিকেট ভুলে যাবেন- এমনটা যারা বলে তারা আসলে মূর্খ নয়, তারা গণ্ডমূর্খ, তারা মহামূর্খ। তাদের মূর্খতার প্রমাণটা মাশরাফি তার পারফরম্যান্স দিয়েই দিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত।

(সংগৃহীত)

  • সর্বশেষ
  • পঠিত