ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিলাইছড়িতে ধর্ষণ ও চাকমা রানির ওপর হামলার বিচার দাবি

  রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩১

বিলাইছড়িতে ধর্ষণ ও  চাকমা রানির ওপর হামলার বিচার দাবি

রাঙামাটির বিলাইছড়ির ওরাছড়ি গ্রামে দুই বোনকে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাকমা সার্কেলের রানি য়েন য়েনের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিন (চাকমা, মং, বোমাং) সার্কেলের প্রজারা।

সোমবার সকাল থেকে তিন সার্কেলের থেকে হাজারো প্রজা বিভিন্ন তাদের দাবি সংবলিত ফেস্টুন- ব্যানার নিয়ে রাজবাড়িতে হাজির হন। এ সময় তারা চাকমা রানি ও রাজ পরিবারের প্রতি সংহতি জানিয়ে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। এরআগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে রানির ওপর হামলা করা হয়।

সংহতি অনুষ্ঠানে প্রজারা বলেন, ‘রানির ওপর আঘাত করা মানে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রথাগত আইন ব্যবস্থার প্রতি আঘাত করা। যারা রানির ওপর হামলা চালিয়ে তারা আদিবাসী ও আদিবাসীদের প্রথাগত আইনের প্রতি হামলা করেছে। এ হামলা মেনে নেওয়া যায় না। এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, ‘ দুই বোন যে নিপীড়নের শিকার হল আমরা তার বিরুদ্ধে কথা বলছি। না হলে এ ধরণের ঘটনা আরো হতো।’

রাজা আরো বলেন, ‘ধর্ষণ করে হামলা করে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা আরো সংগঠিত হব। যারা জোর করে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার দুই বোনকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেছে এবং যারা রানি ও স্বেচ্ছাসেবকদের উপর হামলা করেছে তারা কাপুরুষের কাজ করেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’

রানি য়েন য়েন বলেন, ‘ওই দিন আমরা আদিবাসী দুই বোন যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে তার বিচার চেয়েছি। আমরা আইন মেনেই তার প্রতিকার চেয়েছি। আমরা যেকজন অন্যায় মেনে নিতে পারি না তারা হাসপাতালে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে যারা ছিল তাদের সবকিছুই ছিল। যখন আমাদের সাথে তারা বুদ্ধিতে, কৌশলে পেরে উঠতে পারছিল না তখন তারা হামলার পথ বেছে নেয়। তারা সেখানে জিতে গেছে বলে আমাদের লড়াই থেমে যাবে, তা নয়। ঘটনার সময় আমাদের যে মনোবল ছিল তা এখন আরো বেড়েছে, আরো সুদৃঢ় হয়েছে। তারা যখন আমাদের ওপর হামলা করেছিল তখনও ওই দুই বোন আমাদের সামনে ছিল। এর অর্থ ছিল ওই দুই বোনকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, যাদের প্রতি তাদের আস্থা তারা আসলে কিছুই না। অর্থাৎ তারা চাইলে সব কিছু করতে পারে। এ লড়াই আমাদের থেমে যায়নি। আমরা এর ন্যায় বিচার চাইব।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, রানির ওপর হামলা মানে আমাদের সবার উপর হামলা। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, ‌‌‘বিলাইছড়িতে দুই বোন ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হল। তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। তাদের পাশে রানি হাসপাতালে ছিলেন। আদালত ভিকটিমদের তার মা বাবার হেফাজতে দেওয়ার জন্য রায় দিয়েছে। কিন্তু তারা মা-বাবার সাথে যেতে রাজি হয়নি। তারা রানির হেফাজতে যেতে রাজি ছিল। কিন্তু তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রানির ওপর হামলা করে জোর করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দুই বোনকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী বল প্রয়োগ করে।’

সংহতি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, বোমাং সার্কেল প্রতিনিধি চলাপ্রু মারমা, অধ্যাপক মংসানু চৌধুরী প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত ২১ জানুয়ারি বিলাইছড়ি উপজেলার ওরাছড়ি গ্রামে দুই মারমা তরুণীর একজন ধর্ষণ ও অন্যজন যৌন হয়রানির শিকার হয়। এ ঘটনার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যর ওপর অভিযোগ ছিল। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় তারা রাঙামাটি হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসা শেষে তারা মা বাবার জিম্মায় যাওয়ার অপারগতা প্রকাশ করে চাকমা সার্কেলের রানির জিম্মায় যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু তাদের রানির জিম্মায় দেয়নি প্রশাসন। এ বিষয়টি আদালত পর্যায় পর্যন্ত গড়ায়। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত তাদের মা বাবার জিম্মায় যাওয়ার নির্দেশ দিলেও ভুক্তভোগী দুই তরুণী মা-বাবার জিম্মায় যেতে অপারগতা জানালে সন্ধ্যায় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে হাসপাতালে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রানির ওপর হামলা করে দুই তরুণীকে হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয়। তবে তা পুলিশের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।

মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি গঠন

এদিকে বিলাইছড়ি দু বোন ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক বাঞ্চিতা চাকমাকে আহবায়ক করে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মানবাধিকার কমিশনের ঢাকা কার্যালয়ের অভিযোগ ও তদন্ত বিভাগের কমিশনার শরিফ উদ্দিন এবং কমিশনের রাঙামাটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের কমিশনার গাজী সালাউদ্দিন।কমিটির আহবায়ক বাঞ্চিতা চাকমা কমিটি গঠনের কথা স্বীকার করে বলেন, এ কমিটি আগামী ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

এস/এ/জে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত