ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

তবে কী মৃত্যুই থামিয়ে দিল সৌদি যুবরাজকে?

  সার্জিন শরীফ

প্রকাশ : ২২ মে ২০১৮, ১৪:২৫

তবে কী মৃত্যুই থামিয়ে দিল সৌদি যুবরাজকে?

গত মার্চে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন, কেবলমাত্র মৃত্যুই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে। এর দু'মাস পর সম্প্রতি হঠাৎ করেই বিন সালমানের 'মৃত্যু' নিয়ে চলছে জোর জল্পনা-কল্পনা। মূলতঃ গত ২১ এপ্রিল সৌদি রাজপ্রাসাদের কাছে গোলাগুলির ঘটনার পর ক্রাউন প্রিন্সের দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি সামনে নিয়ে এসেছে একটি বড় প্রশ্ন- 'তবে কি ওইদিনের গোলাগুলির ঘটনায় মারা গেছেন তিনি?' কারণ এত দীর্ঘসময় গণমাধ্যমের সামনে না আসাটা সৌদি যুবরাজের স্বভাব বিরুদ্ধ।

বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে সৌদি আরবের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। অনেকে দেখছেন বিদেশি যোগসাজশও। ইউসেফ আল-হাজেরি নামের দেশটির একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট টুইটারে লিখেছেন, 'যদি সালমানের মৃত্যুর খবর সত্যি হয়, তার মানে দাঁড়ায় ব্যবহারের পর তাকে শ্যাম্পুর খোসার মতো ছুঁড়ে ফেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।'

সৌদি রাজপরিবারের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বিন সালমানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অপর এক অ্যাক্টিভিস্ট রাশেদ আল-দোসারি। তবুও তিনি খোদ সৌদি বাদশার মুখ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ঘোষণা চান।

এছাড়া, মোহাম্মদের মৃত্যুর গুঞ্জন ওঠার পর সৌদি কর্তৃপক্ষের কোনো দায়িত্বশীল সূত্র এখন পর্যন্ত তার বেঁচে থাকার কোনো জোরালো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

এই গুঞ্জন ওঠার পর দেশটির সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে ভাইরাল হয়েছে #ডেথঅবক্রাউনপ্রিন্স হ্যাশট্যাগটি। সেইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে একাধিক প্রিন্স এবং মন্ত্রীকে। আতঙ্কে রয়েছেন বেশকিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

এদিকে, সালমানের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন পশ্চিমা অ্যাক্টিভিস্টরাও। তারা বলছেন, সৌদি আরবে হঠাৎ করেই নারী অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রমাণ করে বিন সালমানের মৃত্যুর খবরটি স্রেফ গুঞ্জন নয় অথবা রাজপরিবারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি।

বেকার ইন্সটিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক ক্রিস্টিয়ান উলরিকসেন লিখেছেন, 'মোহাম্মদ বিন সালমান কি এখনও দায়িত্বে আছেন? তিনি কি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন? কোথায় তিনি?'

এর প্রত্যুত্তরে জার্ড ন্যুনেম্যান লিখেছেন, 'ভাল প্রশ্ন। কয়েক সপ্তাহ ধরে তাকে দেখা যায়নি এবং সাম্প্রতিক সময়ে সিসি, এমবিজেড এবং রাজা হামাদের সঙ্গে তার যে ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে তা সম্ভবত কয়েক বছর আগের। রমজানের কোনো অনুষ্ঠানে এখনও তাকে দেখা যায়নি, যা বেমানান।'

গত সপ্তাহে ইরানি গণমাধ্যম কায়হানের এক প্রতিবেদনে সৌদি যুবরাজের মৃত্যুর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে একাধিক যুক্তি তুলে ধরে কায়হান

এছাড়াও, সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণের ডাক দিয়েছেন জার্মানিতে নির্বাসিত দেশটির ভিন্নমতাবলম্বী প্রিন্স খালেদ বিন ফারহান। চাচা প্রিন্স আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ ও প্রিন্স মাকরিন বিন আব্দুল আজিজের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিন্স খালেদ জানিয়েছেন, যদি প্রিন্স আহমেদ ও মাকরিন বাদশাহ সালমানের বিরুদ্ধে এক হোন, তাহলে রাজপরিবার, নিরাপত্তাবাহিনী ও সেনাবাহিনীর ৯৯ শতাংশই তাদের সমর্থন দেবেন।

২০১৩ সাল থেকে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন প্রিন্স খালেদ। সাক্ষাৎকারে এই প্রিন্স জানান, বাদশাহ সালমান বড় ভাইদের মধ্যে একমাত্র বেঁচে থাকা মামদুহ বিন আব্দুল আজিজের সম্প্রতি দেয়া বক্তব্য রাজপরিবারের বড় ধরনের অসন্তোষের ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, রাজপরিবার ক্ষোভে ফুঁসছে। আমি এই তথ্য জেনেছি এবং আমার চাচা আহমেদ ও মাকরিনকে আহ্বান জানিয়েছি। এই দুজনেই আব্দুল আজিজের ছেলে এবং শিক্ষিত। তারা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবেন। আমরা সবাই তাদের সমর্থন দেবো।

এসব কারণে সঙ্গতভাবেই বিন সালমানের মৃত্যুর বিষয়টি স্রেফ গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

এসএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত