ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত; অভাবনীয় সৌন্দর্যের হাতছানি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০১৮, ১৭:১৬

সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত; অভাবনীয় সৌন্দর্যের হাতছানি

বঙ্গোপসাগরের নোনা পানির ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। পাখির দল উড়ছে যাচ্ছে এদিক সেদিক। বড়বড় ট্রলার নিয়ে জেলেরা ছুটছে গভীর সাগরের দিকে। এমন মন ভোলানো অনেক দৃশ্য চোখে পড়বে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠা সোনাকাটা বনে।

বরগুনার নবগঠিত তালতলী উপজেলারসদর থেকে থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে ফকিরহাট বাজার। বাজারের পাশেই গহিন বন। ছোট্ট একটি খাল মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে বনটিকে। ভূখন্ডটি স্থানীয়দের কাছে ‘ফাতরার বন’ হিসেবে পরিচিত। তবে বন বিভাগের খাতায় এটি ‘টেংরাগিরি’ সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আয়তন ৯,৯৭৫.০৭ একর। নবগঠিত সোনাকাটা ইউনিয়নের অন্তর্গত এ দ্বীপটি এখন ‘সোনাকাটা বন’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।

বনের পূর্বে কুয়াকাটা, পশ্চিমে সুন্দরবন আর হরিণবাড়িয়া, উত্তরে বিশাল রাখাইন পল্লী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এ বন থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটিই উপভোগ করা যায়। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া এ বনে আছে নানা জাতের গাছপালা। আছে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখির বিচরণ। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ট্রলারে সোনাকাটা যেতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগে।

সোনাকাটা বনের মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট খাল। ট্রলার নিয়ে এই খালে ভ্রমণ আর চরের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার মজাই আলাদা। সোনাকাটার আশপাশে আরো বেশ কয়েকটি ভ্রমণ স্পট রয়েছে । সেগুলোর মধ্যে গইয়ামতলা ও আশারচর শুভ সন্ধ্যা চর উল্লেযোগ্য। সমুদ্র ভ্রমণ, গভীর জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর অবারিত সুযোগ রয়েছে সেখানে। অসংখ্য বানর, শূকর, হরিন, বনমোরগ, মদনটাক, কাঠবিড়ালি, মেছোবাঘ, লাল কাঁকড়া, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি আর সাপের অবাধ বিচরণ রয়েছে সোনাকাটা বনে। সেখানে ছোট-বড় ১২টি কিল্লা ও সাতটি মিঠা পানির পুকুর রয়েছে।

সোনাকাটা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অভ্যন্তরে পর্যটকদের চলাচলের জন্য দুই কিলোমিটারের বেশি সিসি রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া হরিণ ও বাঘের বেষ্টনী এবং কুমির প্রজনন কেন্দ্র সহ বন্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।

সোনাকাটার পাশেই আশার চরের অবস্থান। অসংখ্য মৎস্যজীবীর বসবাস এই চরে। আবার শীতের মৌসুমে পর্যটকরাও সেখানে যান। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, গভীর অরণ্য, বিশাল শুঁটকিপল্লী রয়েছে আশার চরে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাওয়া মানুষ শুঁটকি উৎপাদনের জন্য চরটিতে ঘর বাঁধে। বছরে সাত থেকে আট মাস থাকে শুঁটকি উৎপাদনের ব্যস্ততা। তালতলী রাখাইন পল্লী আশার চরের কাছেই রয়েছে তালতলীর বিশাল রাখাইন পল্লী। বঙ্গোপসাগরের তীরে এ পল্লী কুপিবাতি জ্বালিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাঁতে কাপড় বোনার কাজ। তাঁতশিল্প ছাড়াও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দিরও অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হতে পারে।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক কিংবা নৌপথে আপনি যেতে পারবেন। তবে নৌপথের যাত্রা অনেক আরামদায়ক। ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য এটা হতে পারে নতুন অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকালে একে একে নৌযান যাত্রা করে পটুয়াখালীর/ আমতলীর উদ্দেশ্যে। ডেক ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকা। কেবিন সিঙ্গেল ১০০০/১০০০ আর ডাবল ১৮০০ টাকা। ফ্যামিলি কেবিন ২৫০০ টাকা। পরিবার সাত-আটজন মিলে যেতে চাইলে নিতে পারেন ভিআইপি কেবিন ভাড়া ৪০০০/৫০০০ টাকা।

লঞ্চ থেকে নেমে আপনি আমতলীর বাসে উঠে পড়বেন। এছাড়াও মোটর বাইক রয়েছে। আমতলী আসলে মোটর বাইক/ ইজি বাইক করে সোনাকাটা যাওয়া যাবে। সড়কপথে ঢাকা (গাবতলী) থেকে তালতলী বাস রয়েছে। রাতে বাস ছাড়ে। সময় লাগবে স্বাভাবিকভাবে ১৩-১৪ ঘণ্টা। ভাড়া পড়বে নন-এসি (সাকুরা/সার্বিক) ৭০০ টাকা, এসিতে (সাকুরা) আসতে আমতলী পর্যন্ত ভাড়া ১০০০ টাকা।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত