ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

অনলাইন ‘খবর আতঙ্ক’, অভিযুক্তদের বক্তব্য ছাড়াই সংবাদ প্রকাশ!

  সাইফুল ইসলাম খান

প্রকাশ : ০৮ মে ২০১৮, ২০:১২  
আপডেট :
 ০৮ মে ২০১৮, ২০:১৫

অনলাইন ‘খবর আতঙ্ক’, অভিযুক্তদের বক্তব্য ছাড়াই সংবাদ প্রকাশ!

দ্রুত গতির এই বিশ্বে খবরের জন্য এখন আর চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতে হয় না। ভোরের সূর্যের অপেক্ষায়ও থাকে না কেউ। খবরের কাগজ এখন দিন দিন পাঠক হারাচ্ছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখে গেছেন, ‘বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।’ সেই কথা সত্যি হয়েছে বেশ আগেই। এখন ক্লিকের মধ্যেই গোটা বিশ্বের খবর মানুষের হাতের মুঠোয়।

দ্রুত গতির এই বিশ্বে তাই অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের জনপ্রিয়তা এখন আকাশতুঙ্গে। সাংবাদিকতা জগতে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত করে দিয়েছে এই অনলাইন। বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও বেড়েছে অনলাইন সংবাদপত্রের পাঠক চাহিদা। তবে দ্রুত সংবাদ পরিবেশন করতে যেয়ে এক ‘মহামারী’ কাণ্ড শুরু হয়ে গেছে।

একটি ওয়েবসাইট খুলেই এখন সম্পাদক বনে যাচ্ছে! মশারির নিচে বসে স্ট্যাটাস দেয়ার মত করে সংবাদ প্রকাশ করছে। জবাবদিহিতা, বস্তুনিষ্ঠতা, দায়িত্বশীলতা এসব কিছু এখন পুস্তুকে লেখা নীতি কথা। ২০১৬ সালে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন, ১৮০০ অনলাইন সংবাদপত্র নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। বর্তমানে সেই সংখ্যা কত হয়েছে তার কোন সঠিক হিসেব জানা নেই।

অগণিত এই অনলাইনে সাংবাদিকতা চর্চার নামে অপসাংবাদিকতাই বেশি চলে। খবরের চাইতে অখবর বেশি প্রকাশ পায়। অনলাইন হিট বাড়ানোর জন্য ইচ্ছেকৃতভাবেও ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ করা হয়। আর ‘গুজব বাতাসের আগে ছড়ায়’ এমন একটা কথা বাংলায় প্রচলিত আছে। এসব অনলাইনে তাই খবরের চাইতে গুজবই বেশি ছড়ানো হয়। অনেক সময় বর্ণনা সত্য হলেও শিরোনাম এমনভাবে দেয়া হয়, যা ওই খবরের সাথে যায় না।

দেশে বড় আন্দোলন, গুরুত্বপূর্ণ কোন ঘটনা কিংবা বড় রাজনৈতিক দলের ও অঙ্গসংগঠনের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এসব অনলাইনের ‘খবর যন্ত্রণা’ বাড়তে শুরু করে। কোন বিশেষ নেতাকে নিয়ে ব্যাপক প্রশংসামূলক কিংবা টার্গেটকৃত নেতার চরিত্রহননের সবচেয়ে বড় অস্ত্র এই ‘ওমুক খবর ডট কম’! এসব অনলাইনে বিজ্ঞাপনের ন্যায় অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হয় প্রতিবেদন!

আবার অনেক অনলাইন সংবাদকর্মীদের চাঁদাবাজি করতে শেখায়। অনেক সম্পাদক সংবাদকর্মীদের বেতন না দিয়ে তাদের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে মাসের পর মাস পার করে। ছয়-সাত মাস কাজ কারানোর পরে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে অন্য একজনকে নিয়োগ দেন। এভাবে বিনা টাকায় বছর পার করে বহু অনলাইন! ফলে সংবাদকর্মীরাও অসৎ হয়ে পড়েন।

অর্থনীতির ভাষায় একচেটিয়া বাজারে যেমন যাচ্ছেতাই চলে। অনেক অনলাইনে তেমন সাংবাদিকতার নামে যাচ্ছেতাই চলে। ফলে অনলাইন-সন্ত্রাসের ত্রাসে পাঠক এখন ভীত। অনলাইন খবর আতঙ্ক এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য ছাড়াই একচেটিয়া প্রতিবেদন প্রকাশ করার একটি প্রবণতা শুরু হয়ে গেছে। ফলে খবরের ‘ক্রসচেক’ কিংবা বস্তুনিষ্ঠতা উভয় এখন হুমকির মুখে। এই অসুস্থ প্রবণতা থামানো না গেলে, গুজবের তাড়নায় আমরা এক আজব জাতি হয়ে উঠবো!

লেখক: সাংবাদিক

ই-মেইল: [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পঠিত