ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ধর্ষণের পরে পরোক্ষ ধর্ষণ

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:৩২

ধর্ষণের পরে পরোক্ষ ধর্ষণ

দেশে ধর্ষণের শিকার নারীর জীবনে ধর্ষণ কখনো শেষ হয় না। মামলা, তদন্ত, সাক্ষ্য গ্রহণ, বিচার প্রত্যেকটি পর্যায়েই যেন পরোক্ষ ‘ধর্ষণের শিকার হয়’ নির্যাতনে শিকার নারী। এ সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সে পরোক্ষ ধর্ষণেরই শিকার হতে থাকে।

ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় শাস্তি পায় মাত্র শূন্য দশমিক তিন ভাগ অপরাধী। এই পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালে ধর্ষণ বেড়েছে দ্বিগুণ। অন্যদিকে ধর্ষণের শিকার শতভাগ নারীকেই পরবর্তী জীবনে ভুক্তভোগী হয়েই বেঁচে থাকতে হয়।

ধর্ষণের বিচার পক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা সূত্র থেকে জানা যায়, ভিকারুননিসা স্কুলের ছাত্রী ধর্ষণের বিচারের সময় অভিযুক্ত শিক্ষক পরিমল জয়ধরের পক্ষে ৬-৭ জন অ্যাডভোকেট ছিলেন। তারা আদালতে প্রচণ্ড হইচই করে মেয়েটির শারীরিক গঠন নিয়ে আদালতকে বলছিলেন। তার শরীরের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তারা প্রমাণের চেষ্টা করছিলেন পরিমলের যা শারীরিক গঠন তাতে ওই মেয়ের সম্মতি ছাড়া কিছু হয়নি।

টাঙ্গাইলের এক নারী তার দেবরের হাতে ধর্ষণের শিকার হন। তার স্বামী প্রবাসী। ঘটনার সময়ও তিনি প্রবাসে ছিলেন। ধর্ষণের পর ওই নারীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টাও করা হয় । মামলা আদালতে ওঠার পর তার স্বামী তাকে তালাক দেন। আর আদালতে বলেন, তার স্ত্রী দুশ্চরিত্রা।

তদন্ত, বিচার প্রক্রিয়া এবং আইনের মধ্যেই অনেক উপাদান ও ফাঁক আছে যা ধর্ষণের শিকার নারীর জীবন দুর্বিসহ করে তোলে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ১৬ বছরের বেশি বয়সি কোনো নারীর সম্পত্তি ছাড়া অথবা ভয়ভীতি, প্রতারণা বা প্রলোভন দেখিয়ে যৌন সহিংসতা করলেই তা ধর্ষণ। আর ১৬ বছরের নীচে হলে সম্মতিতে হলেও তা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। ধর্ষণের পর যেকোনোভাবেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এই আইনের তেমন কোনো সমালোচনা নেই। তবে সমালোচনা আছে তদন্ত, সাক্ষ্য আইন ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে। সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারায় ধর্ষণের শিকার নারীকে আদালতে ‘সতীত্বের’ পরীক্ষা দিতে হয় আর এর সুযোগ নেয় ধর্ষকের আইনজীবীরা।

এছাড়াও ভিকটিমের শারীরিক আলামত সংগ্রহের নামে যে ডাক্তারি পরীক্ষা হয় তাও ভয়াবহ। গবেষণা থেকে দেখা যায় ওয়ার্ড বয়দের মাধ্যমে এই পরীক্ষার সময় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর এই পরীক্ষায় শরীরের অনেক স্পর্শকাতর অঙ্গের মাপ উল্লেখ করা হয়, যা ধর্ষকের পক্ষে যায়। যেমন স্তনের আকার যদি বড় হয় তাহলে নারীকে হ্যাবিচুয়েটেড প্রমাণের চেষ্টা চলে।

ধর্ষণ শুধু নির্যাতনের শিকার নারীরে জীবনকেই দুর্বিষহ করে না, তার পরিবারের সদস্যদেরও বিপর্যস্ত করে। সে গৃহবন্দি হয়ে পড়ে অথবা এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। বিচার না হওয়ায় আরো একটি সঙ্কট হয়, ওই নারীকে মিথ্যাবাদী অ্যাখ্যা দেয়া হয়। তাকে অসৎ চরিত্রের তকমা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত