ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

নাটোরে ৮১ কোটি টাকার গুড় বিক্রির আশা

  নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৪১  
আপডেট :
 ১২ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:২২

নাটোরে ৮১ কোটি টাকার গুড় বিক্রির আশা

শরীরে পেঁচানো দড়ি, কোমরের ডান পাশে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি। তার ভেতরে রেখেছেন বাটাল, হাঁসুয়া। বাঁ পাশে ঝুলছে মাটির হাঁড়ি। এসব নিয়েই তরতর করে বেয়ে উঠছেন খেজুর গাছে। কৌশলে খেজুর গাছে বাকল তুলে বেঁধে দেন হাঁড়ি।

মধ্যরাত থেকে শুরু হয় খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ। রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে এসে টিনে জাল দেওয়া শুরু হয় খেজুর রস। টিনের তফালে ঢেলে আগুনে জাল দিতে থাকলে টকবগিয়ে ফুটতে থাকে। একসময় জাল দিতে দিতে রস কমে লাল হয়ে যায়, তখন গুড় তৈরি হয়। এই গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন বাজারে।

নাটোরের ৭টি উপজেলাতে পথের দুই ধারে সারি সারি খেজুর গাছ চোখে পড়ে। শীত মৌসুমের চার মাস এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে সকাল–সন্ধ্যায় বিক্রি হয়। প্রতিদিনই ভোর থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত আহমদপুর বাসস্ট্যান্ডে ও বড়াইগ্রাম রস ক্ষেতে শহরের মানুষ সেখানে জড়ো হয় এবং প্রত্যেকটা বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয় শীতের পিঠা উৎসবের ধুম।

লালপুরের রহিম উদ্দিন গাছী জানন, প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে শুরু করে সন্ধা পর্যন্ত ৯০টি গাছ কেটে হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেন। এই গাছ কাটা প্রায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন গাছী, সংগে হাড়িতে চুন দেওয়ার কাজে সাহায্য করে বাড়ির অন্যন্যে সদস্য ও সহকারী গাছী।

কিছু কিছু গাছ এতোটাই বড় যে, রাতে গাছে উঠে রস নামানো সমস্য হয়। সেই কারণে সুতা দিয়ে গাছের এক মানুষ ওপড়ে হাড়ি বাঁধা থাকে, সেখানে সুত বেঁধে দেওয়া হয়। সারা রাত রস পড়তে থাকে। মধ্যরাত থেকে গাছীরা রস সংগ্রহ শুরু করেন। এভাবে চলতে থাকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত।

এরপর সেখানে রস পান করার জন্য ভির করে ছোট-বড় সব বয়সের নারী-পুরুষসহ বাচ্চারা। মিষ্টি রস মানুষদের কাছে বিক্রি করেন। এই রস ৫ টাকা থেকে ১০ টাকায় গ্লাস। এ রস কেজি হিসাবেও বিক্রয় করা হয়। তবে বেশিরভাগ রস গুড় তৈরির জন্য প্রস্তুত করেন তারা। সকাল দশটা পর্যন্ত রস থেকে গুড় তৈরি করে ব্যবসায়ীদের কাছে অথবা বাজারে বিক্রি করা হয়।

বাগাতিপাড়া গাছী রায়হান জানান, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে, হয়তোবা একসময় এলাকা থেকে খেজুরগাছ হারিয়ে যাবে। তাই বেশি করে খেজুরগাছ লাগানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।

লালপুর উপজেলা দারপাড়া এলাকার আনসার আলী জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছর ৪০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তিনি। গাছ থেকে ৫ মাস রস সংগ্রহ করেন তবে, এর মাঝে মাঝে গাছ পালি দেন। এতে প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস রস সংগ্রহ করা যায়। গড়ে ২ মণ পর্যন্ত গুড় সংগ্রহ করেন তিনি।

কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এ অঞ্চলে খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড়ও বেশ প্রসিদ্ধ। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হয় দেশের বিভন্ন প্রান্তে। এছাড়া মুড়ির সাথে খেজুর রস রসনা বিলাসীদের তৃপ্তি মেটানোসহ পিঠা-পুলি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

নাটোরের তৈরী খেজুর গুড় গুনে ও মানে ভাল হওয়ায় এখানকার গুড় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালিসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতিকেজি গুড় তারা ক্রয় করছেন ৭০ থেকে ৮৫ টাকা দরে। বিক্রি করছেন ৮৫ থেকে একশ টাকা দরে। বর্তমানে একটু শীতের প্রভাব পড়ায় বাজারে গুড়ের আমদানি বেশি হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত সরকার জানান, জেলার প্রায় ৮ লাখ খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। শীতের শুরুতে এই খেজুর গুড়ের বাজার মূল্য বেশ ভালো। খেজুর রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে এখানকার কৃষকরা লাভবান হন। চলতি বছর প্রায় ৮১ কোটি টাকার গুড় বেঁচা-কেনা হবে।

এদিকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য আজ হুমকির মুখে। এক কেজি খেজুরের গুড়ের মূল্য ৭০ থেকে ৮০ টাকা আর চিনির মূল্য ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এজন্য চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করে গাছিরা লাভবান হলেও ক্রেতারা পড়ছে ভেজালের খপ্পরে। দেশের চিরাচরিত ঐতিহ্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন প্রকৃত গাছিরা ও ভোক্তারা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত