ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

গাড়ি দেখলেই এগিয়ে আসছে ক্ষুধার্তরা

  আহেমদ ইসমাম

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২০, ১৯:৫১  
আপডেট :
 ০১ এপ্রিল ২০২০, ২০:০৬

গাড়ি দেখলেই এগিয়ে আসছে ক্ষুধার্তরা

করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পরেছেন শ্রমজীবী মানুষ। সারাদেশের এই অঘোষিত লকডাউনের ফলে কোন কাজ না পেয়ে অর্থ সংকটে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

ঘরে খাদ্য ও অর্থ না থাকায় সাহায্যের আশায় রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে দিনে-রাতে অবস্থান করছেন শ্রমজীবী মানুষ । এ সময় কোনো গাড়ি সামনে এলেই দৌরে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে শৃংঙ্খলার অভাবে অনেকেই ত্রাণ সামগ্রী না দিয়েই চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় পুলিশ বলছে কেউ ত্রাণ দিতে চাইলে থানায় যোগাযোগ করতে।

প্রধান সড়কগুলোতে অপেক্ষমান ব্যাক্তিরা প্রায় সবাই কর্মক্ষম ছিল। তারা সবাই এই শহরে কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এই অঘোষিত লকডাউনে সবাই বেকার হয়ে গেছে।

ষাট বছরে এনামুল হোসেনের সঙ্গে কথা হয় জাহাঙ্গীর গেট এর সামনে। তিনি বলেন, আগে এই পথে রিকসা চালাতাম। এখন কাজ না পেয়ে এই পথেই কিছু সাহায্যের জন্য বসে থাকতে হচ্ছে। বাসায় আমার স্ত্রী একা। ঘরে যা খাবার ছিল তা শেষ হয়ে গেছে, খাওয়ার মত কিছুই নাই। তাই কাল রাত থেকে এই সড়কের পাশে বসে আছি। আমার স্ত্রী অসুস্থ চাইলেও সে ঘর থেকে বের হতে পারে না। ওষধ খাওয়া তো দুরে থাক এখন কীভাবে দুবেলা দুমুঠো খাবো সেই চিন্তা করতে হচ্ছে।

এক সময় বাসাবড়িতে কাজ করতেন রাহিমা খাতুন। সে জানায় কেউ এখন বাসায় প্রবেশ করতে দেয় না। তাই কাজও বন্ধ। বাসায় খাওয়ার মত কিছু নাই। নাখালপাড়া বস্তিতে দুটো বাচ্চাকে রেখে এসেছি এই আশায় যদি কোনো সাহায্য পাই। তবে সকাল থেকে বিকাল হয়ে গেলেও কোনো ধরনের সাহায্য তিনি পাননি। এখানে দাড়িয়ে থাকার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। সকালে একজন এসে বলে গেছেন দুপুরে দুই ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী এখানে দেওয়া হবে। সেই আশায় এখানে অপেক্ষা করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসে নাই।

তবে এখানে দুপুরের দিকে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ দিতে আসলেও বিশৃঙ্খলার কারণে তারা চলে গেছে। তারা জানায়, ভাইরাসের কারণে যে দুরুত্ব বজায় রাখা দরকার তা মানছে না তারা । অনেক সময় হামলা করে বেশি করে নিয়ে যাচ্ছে। এ অস্থায় কোনো মতে জান নিয়ে ভেগে চলে এসেছি বলেও জানান ঔ সেচ্ছাসেবী সংগঠন।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন হায়দার। তিনি জানান, বিশ বছর ধরে এই শহরে আছি। কিন্তু এম করুন দশা দেখি নাই। এভাবে গভির রাত পর্যস্ত মানুষকে সাহায্যের জন্য বসে থাকতে দেখি নাই। পরিস্থিতি আসলেই দিনে দিনে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সরাসরি সরকারের সাহায্য দরকার।

একসময় দোকানে কাজ করতে জসিম উদ্দিন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, এখানে শৃঙ্খলার অনেক অভাব। কেউ ত্রাণ দিতে আসলেই সবাই হুমরি খেয়ে পরে। এই অবস্থায় সবচেয়ে নারীরা সমস্যায় আছেন। বিষয়টা অনেক নোংরামি হয়ে যাচ্ছে। আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু আমাদের মা বোনদের তো একটা ইজ্জত আছে। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যেন সব কিছু একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসে। এদিকে ডিএমপি জানিয়েছে, ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর ও হাতিরঝিল থানা এলাকায় যে ব্যক্তি বা সংস্থা ছিন্নমূল, অসহায় ও দুঃস্থ লোকদেরকে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করতে চান, অনুগ্রহপূর্বক সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

অপরিকল্পিতভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের ফলে সম্প্রতি কিছু অনাকাংক্ষিত ঘটনা ঘটেছে এবং হঠাৎ করে ব্যাপক জনসমাগম হচ্ছে যা সরকার ঘোষিত সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরন কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। তাই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে পুলিশি সহায়তার পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণে আগত জনসাধারণের পারষ্পরিক নিরাপদ সামাজিক দুরত্ব অক্ষুন্ন রেখে আপনারা যাতে নির্বিঘ্নে এ মহৎকাজ সমপন্ন করতে পারেন, সেজন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়াতে তেজগাঁও বিভাগের প্রত্যেক পুলিশ সদস্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

তেজগাঁও বিভাগে কর্মরত পুলিশ সদস্যবৃন্দ নিয়মিতভাবে প্রত্যেকটি থানা এলাকায় বসবাসরত ছিন্নমূল, অসহায় ও দুঃস্থলোকদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি তাদের ঘরে খাবার আছে কি না এবং তারা কোন ব্যক্তি বা সংস্থার কাছ থেকে রান সহযোগিতা পেয়েছেন কি না সে বিষয়ে খবর নিচ্ছে। পাশাপাশি অভাবগ্রস্ত কিন্তু আত্নমর্যাদাবোধের কারনে যারা সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করতে পারছেন না, যতোদূর সম্ভব তাদেরও তালিকা করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত