ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঝিনাইদহ ফায়ার স্টেশনের গাছ কেটে জ্বালানি বানাচ্ছেন কর্মকর্তারা

  ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২০, ০৩:২৩

ঝিনাইদহ ফায়ার স্টেশনের গাছ কেটে জ্বালানি বানাচ্ছেন কর্মকর্তারা

বড় অর্জুন গাছের গুড়ি কুড়াল ও করাত দিয়ে কাটছে স্টেশন অফিসার দিলীপ কুমার সরকারের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, সামনেই দাড়িয়ে তা দেখছেন উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তারেক হাসান ভুঞা ও সাব-স্টেশন অফিসার রউফ মোল্লা। চিত্রটি ঝিনাইদহ সদর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের।

এভাবে করোনা পরিস্থিতি সৃষ্টির পর গেল প্রায় ২ মাসের বেশী সময় ধরে গোপনে স্টেশনের প্রায় ২০ টির বেশী আম, মেহগনি, অর্জুন, আমলকি, নারিকেল সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে বড় বড় ৪টি সহ ৭টি গাছ সম্পুর্ণ কাটা হয়েছে। বাকিগুলোর বড় ও ছোট ডাল কাটা হয়েছে যা স্টেশনের মেসের জ্বালানীর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। একেবারে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে স্টেশন চত্তরের ফুল বাগান।

স্টেশনের সাবেক ডিএডি(বর্তমানে এডি কুষ্টিয়া) রফিকুল ইসলামের লাগানো আমলকি গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। স্টেশন চত্তরের ফুল বাগান সংলগ্ন গাছে ঘুঘু সহ বিভিন্ন পাখি ডিম পাড়তো বাচ্চাও ফুটাতো। কিন্তু এখন চিত্রটি একেবারেই ভিন্ন। পাল্টে গেছে পরিবেশ।

গাছ কাটতে দেখা এক প্রত্যক্ষদর্শী মাসুদ জানান, বেশ কিছুদিন আগে দেখলাম সড়ক ভবনের পাশে ফায়ার সার্ভিসের ভিতরে একটি মেহগনি গাছ ৪/৫ জন এসে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে কেটে নিয়ে গেল। একটা বড় অর্জুন গাছও সম্পুর্ণ কেটে খড়ি বানিয়ে নিল।

বিভিন্ন সময়ে লোকজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে কাটা এসব গাছ ও গাছের ডাল নিজেদের কর্মীদের দিয়ে এবং স্থানীয় ছ-মিল থেকে খড়ি করে সেগুলো ব্যবহার করছে জ্বালানীর কাজে। অনেক খড়ি এখনও রেখে দেওয়া হয়েছে ডিএডি অফিসের ছাদে।

স্থানীয় ছ-মিলের শ্রমিকরা জানান, ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতে করে কয়েকজন এসে ৩০ সিএফটি কাঠ খড়ি করে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বড় একটি অর্জুন গাছ ছিল।

ঝিনাইদহ সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি সাইয়েদুল আলম জানান, ফায়ার সার্ভিসের মত সেবামুলক প্রতিষ্ঠানে যদি বিনা অনুমতিতে এভাবে সরকারী গাছ কাটা হয় তাহলে স্বচ্ছতার আর জায়গা থাকে না। আমাদের দাবি, ঝিনাইদহবাসীর দাবি বিষয়টি তদন্ত করে সরকারী সম্পত্তি নষ্টের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা করবে অধিদপ্তর।

তবে কাটা গাছ ও গাছের অংশ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এর বেশী কিছু বলতে পারবোনা বলে জানান স্টেশনের সাব-অফিসার রউল মোল্লা। আর কিছুই জানেন না বলেন স্টেশন অফিসার দিলীপ কুমার সরকার।

নিজের নের্তৃত্বে কেন সরকারী গাছ কাটা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে উত্তেজিত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তারেক হাসান ভুঞা জানান, এ বিষয়ে আমাকে কেন আপনি জিজ্ঞাসা করছেন। আপনার তো জানতে চাওয়ার কথা না। অন্য কোন গাছ কাটা হয়নি। শুধু ঘুর্নিঝড় আম্পানে হেলে পড়া একটি অর্জুন গাছ কেটে এডি স্যার, ডিসি স্যারের অনুমতিতে খড়ি করা হয়েছে।

ঝিনাইদহের দায়িত্বে থাকা যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারী পরিচালক (এডি) মতিয়ার রহমান জানান, ফায়ার স্টেশনের গাছ কাটা হচ্ছে, জ্বালানী বানানো হচ্ছে এ বিষয়ে তো আমি কিছুই জানি না। আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি। এর আগে স্টেশনে গিয়েছি তবুও তো কেউ কিছু জানায়নি। স্টেশনের গাছ কেটে তারা কোন ভাবেই জ্বালানী বানাতে পারে না। আপনার কাছ থেকে শুনলাম, গিয়ে বিষয়টি দেখবো।

জেলা বন কর্মকর্তা ও সরকারী গাছ কাটা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন জানান, সরকারী গাছ নিজস্ব ভাবে কাটা, খড়ি করা কিংবা অন্য কোন কাজে ব্যবহারের কোন বিধান নেই। কেউ ইচ্ছা করলেই তা করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় যেটা করেনি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এটা অত্যন্ত দু:খ জনক বিষয়।

জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, ফায়ার স্টেশনের গাছ কাটার বিষয়ে কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। সামনের সমন্বয় সভায় বিষয়টি আলোচনা করে, ঘটনা পরিদর্শন শেষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জানানো হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত