ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

রাজধানীর ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া ট্রাক

  সুশান্ত সাহা

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২০, ১৬:২৮  
আপডেট :
 ১১ জুলাই ২০২০, ১৭:০৮

রাজধানীর ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া ট্রাক

আব্দুর রাজ্জাক, বয়স ২০। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন বনানীতে। থাকেন নতুন বাজার এলাকায়। অফিসে ডিউটি শেষ গত রোববার (৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাইসাইকেল করে বাসায় যাচ্ছিলেন। বারিধারার ইওন ব্রিজের ঢালে পৌঁছালে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি ট্রাক আব্দুর রাজ্জাককে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয় ।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর বিজয় সরণী মোড়ে বালুর ট্রাকের ধাক্কায় মোকসেদুল ইসলাম (২৫) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানান, ভোরে রিকশা চালিয়ে বিজয় সরণী মোড় দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো যানবাহনের ধাক্কায় আহত হোন রিকশাচালক মোকসেদুল। পরে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোর সাড়ে ৫টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের আবেদনে বিনা ময়না তদন্তে লাশটি তাদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, যে গাড়িটি ধাক্কা দিয়েছে তা এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় কেউ কেউ বলছেন, সেটি বালুর ট্রাক ছিলো। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।

প্রতিদিনই এভাবে সড়কে ঝরছে প্রাণ। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ঘটছে রাত ৯টার পর থেকে সকাল ৬টার ভিতরে। এসময় রাস্তা ফাঁকা থাকে। তখন সড়কে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় সড়কজুড়ে। অনিয়ন্ত্রিত গতিতে বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের শিকার হচ্ছেন পথচারী থেকে শুরু করে ফুটপাতের সাধারণ মানুষ। করোনার মধ্যেও ফাঁকা ঢাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমার কথা থাকলেও বরং বাড়ছে। ফাঁকা সড়কে দ্রুতগতিতে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, আইনের তোয়াক্কা না করা এবং উল্টো দিকে গাড়ি চালানোতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরো বাড়ছে।

রাত ৯টা থেকে সকাল ৬ পর্যন্ত বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায় রাজধানীজুড়ে। যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, ফার্মগেট, আসাদগেট মোড়সহ, সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট, গাবতলীসহ একাধিক স্থানে তীব্র গতিতে চলছে ভারী যানবাহন। সেখানে নিয়ম মানছে না কেউই। মাঝে মধ্যেই মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মনির। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‌‘রাত সাড়ে ৯টার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে মিরপুরে বাসায় যাই। এসময় রাস্তার মালবাহী ট্রাক আর বাস বেপরোয়া গতিতে চলে। মানুষের জীবনের কোনো মায়া নেই তাদের কাছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারান পথচারীরা। এসব দুর্ঘটনার ৯১ শতাংশই ঘটে অতিরিক্ত গতিতে বেপরোয়া যানবাহন চালানোর কারণে।

ঢাকা মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের বেশিরভাগই আসে রাত ১০টার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) বাসুদেব বনিক বলেন, করোনায় ট্রাফিক সদস্যরা নিজেদের ঝুঁকি নিয়ে সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, রাত গভীর হতে থাকলে ফাঁকা হতে শুরু করে রাস্তা। এসময় যানবাহনগুলো সিগন্যাল না মানায় দুর্ঘটনা ঘটে। তবে রাজধানীর ফাঁকা রাস্তায় নিরাপত্তা দিতে আমাদের ট্রাফিক সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। আর বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো প্রতিরোধে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় আমরা প্রতিবন্ধকতা বসিয়ে ‘জিক জ্যাক’ আকারে করে দিয়েছি। এতে গাড়ির গতি কমবে। এছাড়াও সিগন্যাল না মানার কারণে নিয়মিত মামলা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত