ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

বন্যার অবনতি: পানিবন্দি দুই লক্ষাধিক মানুষ

  সৌরভ ঘোষ, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২০, ১৯:১০  
আপডেট :
 ১৪ জুলাই ২০২০, ১৯:১৪

বন্যার অবনতি: পানিবন্দি দুই লক্ষাধিক মানুষ
ফাইল ছবি

কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো বেশি অবনতি হয়েছে।

এ অবস্থায় জেলার ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক চরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। এ পরিস্থিতিতে অনেকের ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে বিছানাপত্র তলিয়ে গেছে।

বন্যা দুর্গতরা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পাকা সড়ক, উঁচু বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের কোনরকমে থাকার উপায় আছে, তারা কষ্ট করে পরিবার পরিজন নিয়ে বন্যার পানির মধ্যে ঘর-বাড়িতেই অবস্থান করছে। অনেকে খোলা আকাশের নীচে পলিথিনের তাবু টানিয়ে বসবাস করছেন। পরিবারগুলো অব্যাহত বৃষ্টিতে কষ্ট করে জীবন-যাপন করছে।

বন্যা কবলিত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম দফায় প্রায় দুই সপ্তাহের বন্যার সময়ও তারা পানিবন্দি জীবন-যাপন করেছে। দ্বিতীয় দফার বন্যার কবলে পড়া কর্মহীন এসব মানুষের মাঝে খাদ্য সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে চুলা জ্বালাতে না পারায় শুকনো খাবারের সঙ্কটে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষজন। এসব এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের আইড়মাড়ীর চরের আব্দুর রহিম বলেন, গত বন্যায় ঘরে যা শুকনো খাবার ছিলো তা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সেই বন্যা যেতে না যেতেই আবারও বড় বন্যা আসলো। এখনও ঘরের ভেতর বিছানা উঁচু করে বউ বাচ্চা নিয়ে অবস্থান করছি। চুলা জ্বালানো যাচ্ছে না। সবকিছুই পানিতে ভিজে গেছে। খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্ট করে আছি। পানি আরো বাড়লে উঁচু জায়গায় যেতে হবে। কিন্তু কোথায় যাবো সেটাও জানা নেই।

সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের শুলকুর বাজার বাঁধে আশ্রয় নেয়া সাহের আলী জানায়, বাড়িতে আর থাকার উপায় নাই। সোমবার গরু, ছাগল, বউ-বাচ্চা নিয়ে নৌকায় করে এখানে উঠেছি। এখানেও খুব কষ্ট। গত রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। পলিথিনের ভিতর শুয়ে থাকার অবস্থা নেই। সারারাত বসে কাটিয়েছি। খাওয়া-দাওয়ার কষ্টে আছি। এখন পর্যন্ত মেম্বার চেয়ারম্যানও কোন সহযোগিতা করে নাই।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে এই বন্যা দুর্গত মানুষদের হাতে দীর্ঘদিন তেমন কাজ ছিলো না। তার ওপর প্রথম দফা বন্যা চলে যাওয়ার সাথে সাথে আবারো বন্যা আসলো। চরে বসবাসকারী বেশিরভাগই অভাবী মানুষ। মূলত এই দিনমজুর শ্রেণীর মানুষেরাই খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। এদের এই মুহূর্তে শুকনো খাবারের প্রয়োজন।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নের ৪ হাজার পরিবারের ২৮ হাজার মানুষই পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে। ২য় দফা বন্যায় জেলা প্রশাসন থেকে আমার ইউনিয়নের জন্য ৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বুধবার উত্তোলন করে বিতরণ করা হবে। এই ৫ টন চাল ১০ কেজি করে মাত্র ৫০০ পরিবারকে দেয়া সম্ভব হবে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, জেলায় বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৯ উপজেলায় ১৬০ মেট্রিক টন চাল, শুকনো খাবারের জন্য ৪ লাখ জিআর ক্যাশ, শিশুখাদ্যের জন্য ২ লাখ, গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব বিতরণ কার্যক্রম চলছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টার রিপোর্ট অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত