ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪১ মিনিট আগে
শিরোনাম

রামু ট্র্যাজেডির আট বছর

ফিরেছে সম্প্রীতি, শেষ হয়নি বিচার প্রক্রিয়া

  মনতোষ বেদজ্ঞ, কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:২৯  
আপডেট :
 ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:১৮

ফিরেছে সম্প্রীতি, শেষ হয়নি বিচার প্রক্রিয়া

রামু ট্র্যাজেডির আট বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০১২ সালের এই দিনে কক্সবাজারের রামুতে এবং পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধপল্লিতে হামলা চালিয়ে আর আগুন জ্বালিয়ে ১৯টি বৌদ্ধবিহার ও ৪১টি বসতঘর পুড়িয়ে দেয় দূর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে ভাঙচুর ও লুটপাট করে তারা ছয়টি বৌদ্ধবিহার ও অর্ধশত বসতঘরে।

গত আট বছরে এসব এলাকায় সম্প্রীতি ও স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। পর্যটকের আনাগোনাও বেড়েছে। কিন্তু এ ঘটনায় করা মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। যা নিয়ে অসন্তোষ ও উদ্বেগ রয়েছে এলাকাবাসীর মনে।

সাক্ষীর অভাবে এ বিচার প্রক্রিয়া থমকে থাকলেও বৌদ্ধদের মাঝে ফিরেছে সম্প্রীতি। পোড়া মন্দিরে তৈরি হয়েছে নান্দনিক স্থাপনা। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাশৈলীতে পূণ্যার্থীদের পাশাপাশি বেড়েছে পর্যটক আকর্ষণ।

ক্ষতিগ্রস্তরা পেয়েছেন নতুন ঘর। এখনও বিভিন্ন বিহারগুলোতে নিরাপত্তায় সতর্ক রয়েছে পুলিশ বাহিনী। সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারী রেখেছে সকল বৌদ্ধ বিহারে। পূজাপার্বণ, ধর্মীয় উৎসবে অন্য ধর্মালম্বীর সরব উপস্থিতে মুখরিত হয় এখন বিহার প্রাঙ্গণ। সম্প্রীতিতে ফিরতে পারায় খুশি বৌদ্ধরা। তবে বিচার প্রক্রিয়ার অচলাবস্থা নিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে রয়েছে এখনও অসন্তোষ। অপরাধীরা আইনের আওতায় না আসায় তাদের শঙ্কা কাটছেনা ।

২৯ সেপ্টেম্বর সেই কালো রাতের ঘটনা স্মরণ করে রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের উপাধ্যক্ষ শীলপ্রিয় থের বলেন, ঘটনাটি স্মরণ করলে এখনও চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায়। কঠিন সময় গেছে আমাদের। দূর্বৃত্তরা আমাদের বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ পল্লী পুড়িয়ে দিয়ে অনেক ক্ষতি করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তড়িৎ সিদ্ধান্তে ওই সময়ে আমাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পুণনির্মাণ করা হয় বৌদ্ধ বিহারগুলো। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আট বছর হয়ে গেছে, সেই দিন থেকে আজও কয়েকটা বিহারে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী।

তিনি বলেন, আমরা হারিয়ে যাওয়া দিনের চেয়ে, বর্তমানে অনেক সম্প্রীতি ভোগ করছি। এখন আমাদের সম্প্রীতি অনেক বৃদ্ধি হয়েছে। আমরা রামুবাসিরা সম্প্রীতিতে আছি। আগামী দিনেও আমাদের এ সম্প্রীতি ধরে রাখতে হবে।

রামু সহিংসতা স্মরণে সংঘদান ও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন আয়োজন করেছে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ। আজ ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ‘লাল চিং ও মৈত্রী বিহার’ প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী এ স্মরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

রামুতে লাল চিং বিহারে প্রথম অগ্নিসংযোগ করে দূর্বৃত্তরা। রামু পানের ছড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সুচারিতা মহাথের এ অনুষ্ঠানের সভাপতি ও পুণ্যাচার ভিক্ষু সংসদের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রামের পটিয়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ড. সংঘপ্রিয় মহাথের প্রধান আলোচকের ধর্মালোচনা করবেন।

ভোরে বৌদ্ধপূজা, সকালে জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, অষ্ট পরিষ্কার দানসহ মহাসংঘদান, দুপুরে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন, অতিথি ভোজন, বিকালে হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন ও সন্ধ্যায় বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনার মাধ্যমে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে বৌদ্ধমূর্তি, বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ বসতিতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ উগ্রসাম্প্রদায়িক হামলার বিভীষিকাময় আট বছর স্মরণানুষ্ঠানে মানবতা ও শান্তি কামনা হবে বলে জানান, রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের আহ্বায়ক বিপুল বড়ুয়া আব্বু। অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ স্থানীয় বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা অংশ নিবেন বলে জানান সদস্য সচিব বিপ্লব বড়ুয়া।

জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুর ১২ বৌদ্ধ বিহার, ৩০টি বসতঘর, পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া ও টেকনাফে ৭টি বৌদ্ধ বিহার, ১১টি বসতঘর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পুড়ে যায় এসব মন্দিরে থাকা হাজার বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক সব নিদর্শন। লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয় আরো ৬টি বৌদ্ধ বিহার, অর্ধশত বৌদ্ধ বসতঘরে।

এ ঘটনার পর দায়ের করা হয় ১৯টি মামলা। এর মধ্যে রামুর আটটি মামলায় ৪৫৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে রামু থানার জনৈক সুধাংশু বড়ুয়ার করা মামলাটি দু’পক্ষের আপস মীমাংসার ভিত্তিতে প্রত্যাহার করা হয়।

রামু সহিংসতার ঘটনা দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে যে আঘাত হেনেছিল তা অনেকটা দূর হয়েছে। তবে সম্পূর্ণরূপে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া সময় সাপেক্ষ বলে জানান, কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু। তিনি বলেন, রামু সহিংসতার আট বছরে ফিরে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। রামুর বৌদ্ধরা পেয়েছে দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার। কিন্তু রামুর ঘটনার পর যেই মামলাগুলো হয়েছে সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা সংশয়।

জানা গেছে, বৌদ্ধপল্লীতে হামলার ঘটনায় দায়ের ১৯ মামলার এজাহারে নাম-ঠিকানা উল্লেখিত আসামি ছিল ৩৭৫ জন। রামু থানার আট মামলার এজাহারে মোট আসামি সাত হাজার ৮৭৫। এর মধ্যে ১১১ জনের নাম-ঠিকানা থাকলেও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পেরেছিল মাত্র ৭৪ জনকে। আর সন্দেহভাজনদের মধ্যে আটক করেছিল ১৩২ জনকে। উখিয়া থানার সাত মামলায় পাঁচ হাজার ৬২৪ আসামি থাকলেও গ্রেপ্তার ছিল ১১৬ জন। টেকনাফ থানার দুটি মামলায় ৬৫৩ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার ছিল ৬৩ জন। কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দুই মামলায় এক হাজার ৩০ আসামি থাকলেও গ্রেপ্তার ছিল ৯৮ জন। গত আট বছরে ধাপে ধাপে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে সবাই।

বৌদ্ধদের অভিযোগ, ২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামু ও উখিয়া-টেকনাফে বৌদ্ধপল্লীতে চালানো নারকীয় হামলার ১৮ মামলার একটি বিচারও শেষ হয়নি। ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় দায়ীরা কেউ শাস্তি পায়নি এখনও। ঘটনার পর বিভিন্ন মামলায় ৯৯৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

এ ঘটনায় আটকরা সবাই এখন জামিনে। অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। ঘটনার পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ বিহার ও ঘরবাড়ি পূণনির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। দীর্ঘ আট বছরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আবারও ফিরে এসেছে বলে জানান রামুর বৌদ্ধরা।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ও পুরো কক্সবাজার জেলায় পুলিশ বাহিনীতে বদলিজনিত কারণে মামলার সাক্ষী গ্রহণে বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পুলিশ যদি মামলার সাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপন করতে পারেন এবং সাক্ষীরা যদি যথাযথ সাক্ষ্যদান করেন তাহলে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দিয়ে বিচারকার্য সম্পন্ন করা যাবে এবং ঘটনার সত্য উদঘাটন হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের আরো আইনজীবী বলেন, বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলার ঘটনায় সর্বমোট ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়। তৎমধ্যে বাদীর সম্মতিতে ১টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়। অন্য ১৮টি মামলা আদালতে বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সাক্ষীর সহযোগিতায় বিচারকার্য তরান্বিত হবে। তিনি জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবরকম পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের সাধারণ সম্পাদক রাজু বড়ুয়া জানান, রামু সহিংসতার আট বছর পার করছি আমরা। ঘটনার এ আট বছরে রামুর পরিস্থিতি আগের মতো ভালো। তবে এ ধরণের ঘটনা যাতে আর কোথাও না ঘটে, এজন্য সকলকে আরো সর্তক থাকার কথা বলেন। তিনি বৌদ্ধদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকার এবং রামুবাসির প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, রামুতে ১৮টি মামলার বাদীই পুলিশ। পুলিশ কাকে আসামি করেছে, কাকে বাদ দিয়েছে কিছুই বৌদ্ধ সম্প্রদায় জানে না। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে পুলিশকে বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও যারা মিছিলের সামনের সারিতে ছিল, যারা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে নেতৃত্ব দিয়েছে এদের অনেকেরই নাম পুলিশের অভিযোগপত্রে নেই। রামু সহিংসতার মতো আর কোনো ঘটনা যাতে বাংলাদেশে আর না ঘটে সেটার একটা দৃষ্টান্ত রচিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর আদালতের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি জড়িতদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে সুপারিশ করে। কিন্তু ঘটনার পরিকল্পনাকারী গডফাদারদের কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকে আটক করে এসব মামলা দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। আবার অনেক সাক্ষীর নাম ঠিকানাও লেখা হয় ভুলভাবে। তাই আটক সবাই পেয়ে গেছে জামিন। দায়ীরা রয়েছে এখনও অধরা।

সচেতন মহলের মতে, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের ন্যক্কারজনক এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী, গডফাদার বা নেতৃত্ব দাতাদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হলেই বেরিয়ে আসবে ঘটনার আসল রহস্য।

রামু একশফুট ভুবন শান্তি গৌতম বৌদ্ধমূর্তি’র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালক করুণাশ্রী থের বলেন, মধু পূর্ণিমার রাতে রামু, উখিয়ার প্রায় ২০টি বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয় আমাদের ‘একশ ফুট বিশ্বশান্তি গৌতম বুদ্ধ মূর্তি’ ও ‘বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রে’। এটি শুধু দুঃখ-কষ্ট, ক্ষতি নয়।

আন্তর্জাতিক ভাবে সমাদৃত বাংলাদেশের বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পুড়িয়ে দেয়া হয়। সংস্কৃতি সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক এ নিদর্শন গুলো দেশবিদেশের যোগাযোগের সেতু বন্ধন ছিলো। শুধু বৌদ্ধদের জন্য নয়, রামুর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমৃদ্ধ বৌদ্ধ বিহার গুলো বাংলাদেশের গর্ব ছিলো।

তিনি বলেন, যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ছিলো তারা হয়তো বুঝতে পারেননি, বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলোকে নষ্ট করা হয়েছে। এ ঘটনায় সমগ্র বিশ্ব সোচ্ছার হয়, দুঃখ প্রকাশ করে। যদিও বা এখন দালান হয়েছে, আগের পুরাতন ঐতিহ্য শৈল্পিক নিদর্শন কাঠের বিহারগুলো এখন আর নেই।

বাংলাদেশ ও বিশ্বের সুখশান্তি সমৃদ্ধ কামনা করে তিনি বলেন, কোন দেশে কোন স্থানে কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কেউ যেন এ রকম আঘাত না করে। বরং জাতিধর্ম নির্বিশেষে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো রক্ষা করতে এগিয়ে আসি।

২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামু ট্র্যাজেডির ঘটনায় ফেসবুকে কোরআন অবমাননার ছবি ট্যাগকারী সেই উত্তম বড়ুয়া কোথায়, কি অবস্থানে আছে জানেনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বৌদ্ধদের অনেকে সন্দেহ, নিখোঁজ উত্তম বড়ুয়া আজও বেঁচে আছে তো? যে উত্তম কুমারকে কেন্দ্র করে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেছে রামু, টেকনাফ, উখিয়া ও পটিয়ায়। বেঁচে থাকলে তার হদিস এখনো পাইনি কেন পুলিশ? উত্তম কোথায় আছে সেই বিষয়েও নিশ্চিত কোন তথ্য জানা নেই পুলিশের। অথচ ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে দরকার উত্তমকে। কে, কীভাবে তার ফেসবুকে এই ছবি ট্যাগ করলো সেটি জানতেও দরকার উত্তম বড়ুয়ার স্বীকারোক্তি। কিন্তু ঘটনার আট বছরেও পুলিশ তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারায় ক্ষুদ্ধ রামুর সাধারণ মানুষ। রামুতে বৌদ্ধ বিহার পোড়ানোর দিনই পালিয়ে যায় উত্তম বড়ুয়া।

রামুর হাইটুপী গ্রামের সুদত্ত বড়ুয়ার ছেলে দলিল লেখকের সহকারি উত্তম কুমার বড়ুয়া নামের ফেসবুকে পবিত্র কুরআন শরীফ অবমাননাকর ছবি সংযুক্ত করার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ পল্লীতে আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। দুষ্কৃতকারীদের তাণ্ডবলীলা, অগ্নি সংযোগে রামুর ১২টি বৌদ্ধ মন্দির ও ৩০টি ঘর পুড়িয়ে দেয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে টেকনাফ, উখিয়া ও পটিয়াতে।

২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রত্যাশা ছিল প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে। এ ঘটনার বিপরীতে যেসব মামলা হয়েছে তার সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হন এবং প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হয় এমন প্রত্যাশা রামুর বৌদ্ধদের।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত