ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

শীতের শুরুতে ফুটপাতে পিঠা বিক্রির ধুম

  মো. রুহুল আমিন, ধামরাই (ঢাকা)

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ১৬:০০

শীতের শুরুতে ফুটপাতে পিঠা বিক্রির ধুম
ছবি: পিঠা বিক্রেতা ফরিদা বেগম, ধামরাই

শীতের পিঠাপুলি বাঙালির আদি খাদ্য সংস্কৃতির একটি অংশ। বাংলার চিরায়ত লোকজ খাদ্য সংস্কৃতিতে পিঠা পায়েস একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। প্রতিবছরই শীতকালে দেশজুড়ে পিঠা তৈরির ব্যস্ততা চোখে পড়ে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে ধুম পড়ে যায় হরেক রকমের পিঠা বানানোর। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর বা সন্ধ্যায় গাঁয়ের বধূরা চুলোর পাশে বসে পিঠা তৈরিতে কাটান ব্যস্ত সময়।

অপরদিকে, অতিথি আপ্যায়নে বিশেষ করে জামাইদের দাওয়াত করে পিঠা খাওয়ানো হয়। গ্রামের পাশাপাশি শহরেও পাওয়া যায় শীতের পিঠার সু-বাতাস।

কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায় ভিন্নতা। রাস্তায় রাস্তায় পিঠা বানিয়ে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। পিঠা তৈরি করে সংসার চালাতে হয় অনেকেরই। দরিদ্রতার কারণে ধামরাইয়ের বেশির ভাগই পিঠা বিক্রি করে পরিবারে অর্থ যোগান দিয়ে থাকে। অসচ্ছল পরিবারের মাঝে কিছুটা আর্থিক সচ্ছলতা আনার জন্য ফুটপাতে পিঠা তৈরি করছে।

আবার, সংসারে অর্থ উপার্জনের কেউ না থাকায় পিঠা তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

থানা বাসস্ট্যান্ডের সাথে হাবিলা মার্কেটের সামনে ফরিদা বেগম নামে ৬০ বছরের বৃদ্ধা সারা বছরই রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালায়। অসুস্থ স্বামী কাজে অক্ষম। পরিবারে উপার্জন করার কেউ না থাকায় তিনি রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করে কোনোরকমে সংসার চালায়। তিন মেয়ে ছিলো, তাদের বিয়ে দেয়া হয়েছে। উপার্জনে কোনো উপযুক্ত সন্তান নাই।

এ রকম দৃশ্য চোখে পড়ে ছোট চন্দ্রাইল, ধামরাই ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডে, ধামরাই বাজার, শরীফবাগ বাজার, দেপাশাই আমতলী বাজার, সোমভাগ ইউনিয়ন পরিষদের সম্মুখের বাজার, কালামপুর বাজার ও বাসস্ট্যান্ডে, কুশুরা বাজারে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান দেখা যায়। এদের বেশিরভাগই শীত আসলে পিঠার দোকান নিয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়ে। পুরো শীত পর্যন্ত চলে এ ব্যবসা।

ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডের পাশে সালেহা ও তার মেয়ে শীতের শুরুতেই পিঠার দোকান শুরু করে দিয়েছে। তাদের দোকান প্রায় সারা বছরই দেখা যায়। বছরের কয়েক মাস বাদ থাকে তাদের এ ব্যবসা। পরিবারে কোনো উপার্জনকারী না থাকায় বাধ্য হয়ে এই ব্যবসা করে চলছে তারা।

শতাধিক ধরনের পিঠার প্রচলন রয়েছে বাংলাদেশে। কালের গভীরে কিছু হারিয়েও গেছে। তবে রাস্তার পাশের পিঠার এই দোকানগুলোতে কয়েক ধরনের পিঠা পাওয়া যায়। ভাপা পিঠা, নকশি পিঠা, চিতই পিঠা, রস পিঠা, ডিম চিতই পিঠা, দোল পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা তৈরি করতে দেখা যায়। তবে পাটি সাপটা পিঠা কয়েকটি দোকানে পাওয়া গেছে।

একেক ধরনের পিঠার দাম একেক রকম। সাধারণ চিতই পিঠা ৫ টাকা, নকশি পিঠা ১০ টাকা, ডিম চিতই পিঠা ২০ টাকা, দোল পিঠা ১০ টাকা, ভাপা পিঠা ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দেখা যায়, চালের গুঁড়া, নারকেল, খেজুরের গুড় দিয়ে বানানো হয় ভাপা পিঠা। গোল আকারের এ পিঠা পাতলা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ঢাকনা দেয়া হাঁড়ির ফুটন্ত পানিতে ভাপ দিয়ে তৈরি করা হয়। এ কারণেই এর নাম ভাপা পিঠা। চালের গুঁড়া পানিতে গুলিয়ে মাটির হাঁড়িতে বিশেষ উপায়ে তৈরি করা হয় চিতই পিঠা। অতি সাধারণ এই পিঠাটি গুড় বা ঝাল শুঁটকি ভর্তা দিয়ে খেতে খুবই মজা।

তবে চিতই পিঠা বিক্রি হয় হরেক রকমের ভর্তা দিয়ে। শুটকি, মরিচের, ধনে পাতার ভর্তা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে এই পিঠা।

গ্রামাঞ্চলে শীতের পিঠা তৈরিকে যেমন উত্‍সব হিসেবে গণ্য করা হয় সে তুলনায় শহরে খুব কমই চোখে পড়ে পিঠা-পুলির বাহার। তবে ইদানীং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত শীতের পিঠা উত্‍সব সাড়া ফেলে দেয় শহুরে জীবন। এছাড়া শহরের পথে-ঘাটে বা ফুটপাতে পিঠা কেনাবেচা হয় পুরো শীতকালজুড়েই।

ধামরাইয়ের প্রায় প্রতিটি রাস্তার পাশেই চোখে পড়ে অস্থায়ী পিঠার দোকান। বেশির ভাগ শীতকালেই এসব দোকান বসে থাকে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শীত মৌসুমে এই সব দোকান বসে। কিছুটা হলেও পরিবারে আর্থিক সহায়তা করা সম্ভব হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত