ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

পায়রা বন্দর অর্থনীতিতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:৪৯  
আপডেট :
 ১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:৫৫

পায়রা বন্দর অর্থনীতিতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে
ছবি: নিজস্ব

পায়রা বন্দর ২০৩৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে জরুরি মেইনটেনেন্স ড্রেজিং প্রকল্পের চুক্তিপত্র স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে (ইনার ও আউটার চ্যানেল) ৬.৩ মিটার গভীরতা বজায় রাখার লক্ষ্যে জরুরি মেইনটেনেন্স ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানী জান ডে নুলের মধ্যে এই চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হয়েছে।

চুক্তিপত্র অনুযায়ী রাবনাবাদ চ্যানেলের (ইনার ও আউটার চ্যানেলে) প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১০০-১২৫ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট চ্যানেলে আনুমানিক ৯.৭৫ মিলিয়ন ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হবে। ১৮ মাস সময়ের মধ্যে ড্রেজিং কাজ সমাপ্ত করতে প্রায় ৪৩৭.৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পটির ব্যয় পায়রা বন্দরের নিজস্ব তহবিল হতে সংকুলান করা হবে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের যে কম্পোনেন্টগুলো আছে তার সবগুলো যদি বাস্তবায়ন হয়। আমরা ইতিমধ্যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি ২০৩৫ সাল। ২০৩৫ সালে পায়রা বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করবে। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। পায়রা বন্দরের বাকি যে কার্যক্রমগুলো আছে সেগুলো খুব দ্রুতই সম্পন্ন করতে পারবো।

২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পদার্পন করবে বলে মন্তব্য করে নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশের লক্ষ্য ইতোমধ্যে নির্ধারণ করেছে। পৃথিবীর সব অর্থনীতিবিদরা বলছে, বাংলাদেশ যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তার আগেই উন্নত দেশ হবে। আমাদের বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন এগিয়ে যাচ্ছে, ২০৪১ সালের আগেই আমরা উন্নত দেশে পদার্পন করব।

তিনি বলেন, আমাদের এগিয়ে যাবার প্রেরণা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই প্রেরণা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এখন দরিদ্র দেশ নয়। সেই জায়গায় নদীমাতৃক যে বাংলাদেশ, সমুদ্রবেষ্টিত বাংলাদেশের বিরাট সম্ভাবনা। সে জায়গায় আমাদের পায়রা বন্দর বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।

খালিদ মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আমরা আশাকরি আগামীতে যে ক্যাপিটাল ড্রেজিং আমরা করবো, সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি অর্থ সহায়তায় করতে যাচ্ছি। এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট গর্বের বিষয়। আমরা এখন বিদেশী সাহায্যে নয়, নিজেদের অর্থায়নে বড় বড় কাজ করতে যাচ্ছি। যে চ্যালেঞ্জটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণ করেছিলেন বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ প্রত্যাহার করার মধ্যে দিয়েই। সেই সময় তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশ এখন আর কারো মুখাপেখী নয়, বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখছে। আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু করবো। আজকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু দৃশ্যমান। যখন পদ্মাসেতু চালু হবে, তখন পায়রা বন্দরের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পদ্মাসেতু ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে যে স্বপ্ন দেখছে, সে স্বপ্ন সমগ্র বাংলাদেশে বিস্তৃত হবে।

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন দেখি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মাসেতুর কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। পায়রা বন্দরের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো আমরা নিয়ে ফেলেছি। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ সামগ্রিক এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পায়রা বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, করোনাকালের মধ্যেও সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। সমগ্র পৃথিবী যখন করোনা মহামারীতে বিচলিত, অনেকে পিছিয়ে গেছে, অনেকে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সে জায়গায় বাংলাদেশ কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্নের প্রকল্প। পায়রা বন্দরকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান হবে। পায়রা বন্দরসহ বিশাল সমুদ্র সীমার নিরাপত্তার জন্য পায়রা বন্দর এলাকায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি এবং ‘শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্ট’ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর হুমায়ুন কল্লোল এবং বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জান ডে নুল এর প্রকল্প পরিচালক জান মোয়েন্স। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মামুনুর রশিদ।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, পায়রা বন্দরে ইতিমধ্যে স্থাপিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বিসিপিসিএল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এ নিয়মিতভাবে কয়লা সরবরাহ করার লক্ষ্যে কয়লাবাহী জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করা এবং পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সিমেন্ট, ক্লিংকার, ফুডগ্রেন, ফ্লাইএ্যাশ, সার, কনস্ট্রাকশন মেটারিয়াল ইত্যাদি মালামাল পরিবহন সুবিধার্থে চ্যানেলের (৬.৩ মিটার গভীরতা) রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করাই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত