ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

কোরবানির চামড়া কেনা নিয়ে শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

  জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২১, ২০:২৬

কোরবানির চামড়া কেনা নিয়ে শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। এর প্রভাব থেকে বাদ নেই বাংলাদেশও। একদিকে করোনার প্রকোপ অন্যদিকে ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ীদের।

এমন অবস্থায় আসন্ন কোরবানির চামড়া কেনা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা। আবার তাদের আশংকা চামড়া কিনতে না পারলে চামড়াগুলি চোরাকারবারীর হাতে চলে যাবে।

জয়পুরহাট জেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় দেশের কোটি কোটি টাকার চামড়া পাচার হয়ে যাবে ভারতে। তাই এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দাবি তাদের।

জানা গেছে, প্রতিবছর কোরবানির ঈদে জয়পুরহাট জেলার আড়তগুলো থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার পশুর চামড়া সরবরাহ করা হয় ঢাকায় । তবে এ বছর জেলার চামড়ার আড়তগুলোতে নেই কোনো প্রস্তুতি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকদের প্রায় ১২ কোটি টাকা বাকি দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন জেলার অনেক চামড়া ব্যবসায়ী। এ অবস্থায় চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন চামড়া মালিক সমিতি।

জয়পুরহাট শহরের আরাফাত নগর, আমতলী,পাঁচবিবি উপজেলার রেলগেট, আক্কেলপুর উপজেলার হাজিপাড়া, এলাকায় চামড়ার আড়তগুলোতে চামড়া কেনার এবার নেই কোনও প্রস্তুতি।

এসব আড়তের চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকেরা গত কয়েক বছরের কোটি কোটি পাওনা টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারেনি। এছাড়া প্রতি বছর ট্যানারি মালিকদের বেধে দেয়া দামের চেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে চামড়া কেনায় বিপাকে পড়েছে মূল ব্যবসায়ীরা।

সীমান্ত জেলা হওয়ায় চামড়া পাচারের আশংকা ও থাকে এখানে। সেইসঙ্গে চামড়ার প্রধান কাঁচামাল লবণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।

তাই বকেয়া টাকা পরিশোধে ট্যানারি মালিকরা যেন উদ্যোগ নেন ও সেইসঙ্গে ব্যাংকগুলোও যেন সহজ শর্তে লোন দেয়, এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি কামনা করেন তারা।

জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ী শাহিন আকতার জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তারা আড়তগুলো প্রস্তুত রেখেছেন। তবে ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা না পাওয়ায় তার বিপাকে রয়েছেন চামড়া কেনা নিয়ে।

এদিকে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় নতুন করে লোন দিচ্ছে না। ফলে আসন্ন ঈদে নতুন করে চামড়া কেনা মুশকিল হয়ে পড়বে।

তিনি আরও জানান, ট্যানারি মালিকেরা সবসময় সিন্ডিকেট দিয়ে চামড়া কেনেন এবং দাম পরিশোধের বেলাতেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অল্প করে টাকা দেয়। যা দিয়ে তারা ব্যবসা চালাতে পারে না। ঈদের আগে টাকা দিবে বলে দিনের পর দিন ঘোরায়।

পাঁচবিবি উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ী অহেদুল হোসেন ছোটন জানান, জয়পুরহাট সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় চামড়া পাচার হওয়ার প্রচুর সম্ভবনা রয়েছে। পাচার রোধে প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এ শিল্প করোনার মধ্যেও লাভের মুখ দেখবে।

জয়পুরহাট জেলা চামড়া ব্যাবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শামিম আহমেদ জানান, আমরা জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া সংগ্রহ করি, কেউ আড়তে এসে বিক্রি করে। বিগত কয়েক বছর সরকারের বেধে দেয়া নির্ধারিত দামে আমার চামড়া বিক্রি করতে পারছিনা।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি চামড়া শিল্পের প্রসারে কাঁচামাল লবণের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ চামড়া পাচার রোধ ও বকেয়া টাকা পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এ শিল্প টিকে থাকবে। এছাড়া কোরবানির আগেই পুঁজি সরবরাহ করে চামড়া শিল্পকে সচল রাখবে ট্যানারি মালিকেরা বলে আশা করছি।

এদিকে জয়পুরহাট ২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম জানান, জয়পুরহাট জেলা জুড়ে সীমান্ত এলাকা রয়েছে প্রায় ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে তারকাটায় ঘেরা। আর বাকি ১৮ কিলোমিটার সীমান্তে তারকাটা নেই। চোরাকারবারিরা মূলত এই জায়গাগুলোকেই তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই এই জায়গাগুলো সবসময় নজরদারির মধ্যে রাখা হবে। যাতে কোন চোরাকারবারি দেশ থেকে চামড়া ভারতে পাচার করতে না পারে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত