ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল এসএসসি পরীক্ষার্থীর

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১১ মে ২০২৩, ১৮:৪৬

সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল এসএসসি পরীক্ষার্থীর
মুশফিক তাজুন। ফাইল ছবি

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দনিয়ার সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে প্রাণ হারিয়েছে মুশফিক তাজুন (১৮) নামের একজন শিক্ষার্থী। নিহত তাজুন একে স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলো। বুধবার সন্ধ্যায় তাজুনকে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মাহামুদুল হাসান নাহিন, ইয়ানুর রহমান শান্ত ও নাজমুস সাকিব। ঘটনার পর বুধবার গভীর রাতে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলছে, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বের জেরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ধনিয়া কলেজের সামনে খুন করা হয় তাজুনকে।

জানা গেছে, তাজুনের বাবার নাম মো. মোশারফ ও মায়ের নাম পপি বেগম। জুরাইনের মুরাদপুর মাদ্রাসা রোডের ৮২/২ বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকত তাজুন।

পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের দুলাভাই মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা (নং ৩৯) দায়ের করেন। মামলায় ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ৩ জনও দায়েরকৃত মামলার আসামি। তারা হলো- মাহামুদুল হাসান নাহিন (১৭), ইয়ানুর রহমান শান্ত (১৭), নাজমুস সাকিব (১৭), শফিক ওরফে হাতভাঙ্গা শফিক (১৯), মাহফুজ (১৭), মো. সায়েম (১৭), মো. মাইনুল বিশাল (১৭), আবির (১৮), মোবাশ্বের ভূইয়া (১৭), অপূর্ব রায় (১৬), শাহরিয়া মুশফিক (১৭), মেশকাত (১৭), আদনান (১৭), তন্ময় (১৭), নাঈম (১৭), সাগর (১৬) ও ইমনসহ (১৬) অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জন।

মামলার বাদী ও নিহতের দুলাভাই মো. আশিকুর রহমান বলেন, তাজুনের মতো ছেলে হয় না। এসএসসি পরীক্ষার জন্য সে বাসা থেকে কম বের হতো। আড্ডাতেও যেত না। পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী ছিল।

তিনি বলেন, তাজুনকে এভাবে খুন হতে হবে ভাবিনি। ওর কোনো দোষ ছিল না। ওর সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব ছিল না। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে তার মা বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন।

আশিকুর রহমান বলেন, তাজুনের বাবা কাতার প্রবাসী। তাজুনের মা অসুস্থ, এমন খবর দিয়ে তার বাবা মো. মোশারফকে খবর দেয়া হয়। তিনি বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেছেন। তাজুনের প্রথম জানাজা যাত্রাবাড়ীতে হয়েছে। তাজুনের মরদেহ গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর শ্রীনগরে দাফন করা হবে।

নিহত তাজুনের চাচা মানিক হোসেন বলেন, আমার ভাতিজাকে শাওন নামের একটি ছেলে ডেকে নিয়েছিল। পরে ধনিয়া কলেজের সামনে তাকে হত্যা করা হয়। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাতিজা মারা গেছে। পুলিশ এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে।

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মনির হোসাইন বলেন, এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাজিন তার বন্ধু আরিফুল ইসলাম শাওনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে বাসা থেকে বের হয়েছিল। ওইদিন বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ধনিয়া কলেজের সামনে তার বন্ধু আরিফুল ইসলাম শাওন, নাবিল হাসান, তাহসিন আহাম্মেদ শ্রাবণ, অর্নব হোসেন ও রায়হানসহ অন্যদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। ওই সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ধারালো চাপাতি, চাকু, ছুরিসহ লাঠি-সোটা নিয়ে তাজুন ও তার বন্ধুদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। আসামিরা তাদেরকে এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকে।

একপর্যায়ে ৪নং আসামি ধারালো ছুরি নিয়ে তাজুনের বাম পাশে বুকের নিচে ছুরিকাঘাত করলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এ সময় জড়িতরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তখন তার বন্ধুসহ অন্যান্য পথচারীরা তাজুনকে দ্রুত উদ্ধার করে ধনিয়ার সালমান হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু অবস্থা খারাপ হওয়ায় দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এলোপাথাড়ি মারধরের কারণে নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাতের কারণে রক্তাক্ত জখম হওয়ায় তাজুনের মৃত্যু হয় বলে ধারণা পুলিশের।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মো. মফিজুল আলম বলেন, এ ঘটনায় আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যায় তামিম, ইয়াসিন আরাফাত, সায়েম ও শাওন। এদের মধ্যে তামিম ও ইয়াসিন আরাফাতকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।

ওসি বলেন, ঘটনার পর রাতেই বাদী হয়ে নিহতের বোন জামাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান চালিয়ে মাহমুদুল হাসান, শান্ত ও শাকিল নমে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, নিহত তাজিন ও বন্ধুদের সঙ্গে মাহমুদুল হাসান, শান্ত ও শাকিলদের সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব চলছিল। নিহত তাজিন জুনিয়র। এর আগেও এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। বুধবার পরিকল্পনা করেই তাজিনদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত