ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ফসল রক্ষার বাঁধ কেটে ধরা হচ্ছে মাছ

  ফেরদৌস আহমদ, নেত্রকোণা

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:৫৫  
আপডেট :
 ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩:০৩

ফসল রক্ষার বাঁধ কেটে ধরা হচ্ছে মাছ
বাঁধের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলে জাল পেতে ধরা হচ্ছে মাছ। ছবি: প্রতিনিধি

আগাম বন্যার হাত থেকে বোরো ফসল রক্ষার জন্য নেত্রকোণার খালিয়াজুরি, মদন ও মোহনগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় ৩১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফসল তোলা শেষে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ওইসব বাঁধের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলে একটি অসাধু মহল। বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এই অবস্থা। এই মহলটি হাওরে মাছ ধরার নামে ড্রিলিং মেশিন ও কোদাল দিয়ে গর্ত করে এপাশ থেকে ওপাশে পানির প্রবাহ সৃষ্টি করে। সৃষ্ট স্রোতে বাঁধ ভেঙে যায়। এই ভাঙা অংশসমূহ মেরামতে ব্যয় হয় সরকারের কোটি কোটি টাকা। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।

অনেকের অভিযোগ, প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ফসলরক্ষা বাঁধের মেরামত বা সংস্কার কাজ করা হয়। পরে বর্ষার পানিতে ডুবে গেলেও বাঁধসমূহ বহুলাংশে অক্ষত থাকে। জুলাই মাস থেকেই হাওরে মাছ ধরার নামে বাঁধের ওপর আঘাত আসে। প্রশাসন বিষয়টি দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না। নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলায় বাঁধ মেরামতে গত ২০২১-২২ অর্থবছর ২৫ কোটি ২৩ লক্ষ ও ২০২২-২৩ অর্থবছর ২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। চলতি বছরও মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

খালিয়াজুরি উপজেলার বয়রা গ্রামের মো. নবাব মিয়ার ছেলে মো. আব্দুল হালিম, মো. হাছন আলীর ছেলে মো. আরিফ মিয়া, বাতুয়াইল গ্রামের মোখলেছের ছেলে মো. আল-আমীনসহ অনেকের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজে সরকার প্রতিবছর প্রায় ৩শ কোটি টাকা ব্যয় করে। এই ব্যয়ের সিংহভাগই যায় গচ্ছা। একটি মহল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ ও জাল-জালিয়াতিসহ অনেক পন্থা অবলম্বন করে হাওরের জলমহাল হাতিয়ে নেয়। পরে ফসলরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশে কেটে ও গর্ত করে পানির স্রোত সৃষ্টি এবং ভিম-জালসহ নানা পন্থায় মাছ ধরে তারা। চলতিবছর জেলার খালিয়াজুরি উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) এক পত্রাদেশের বলে বিভিন্ন জলমহালের খাস-কালেকশান করছে খালিয়াজুরি উপজেলার পাঁচহাট গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে মো. কামরুল ইসলাম, কাছম আলীর ছেলে মো. মোস্তাকিম ও বাতুয়াইল গ্রামের আবুচানের ছেলে সবুজ মিয়াসহ অন্যরা। তাদের বিরুদ্ধে সহকারী কমিশনারের স্বাক্ষর জাল করারও অভিযোগ রয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে প্রেরণ করা ওইসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিনেও নেয়া হয়নি কার্যকর কোন ব্যবস্থা।

অভিযোগে আরও বলা হয়, খালিয়াজুরি উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বয়রা নদী তীরবর্তী এলাকা এবং মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের পদেরকোণা, নয়াপাড়া, গজারিয়া, সিনাই নদীর অংশ, বাতুয়াইলের কুড়, পুটিয়ার খাল, উন্নেচাতল, কুলিরদাইর, কেদারিয়া ও কুমারি এলাকার ফসলরক্ষা বাঁধের কমপক্ষে ৩০-৪০টি জায়গায় ড্রিলিং মেশিন ও কোদাল দিয়ে কেটে ও গর্ত করে ভিম-জাল ও অন্যান্য পদ্ধতিতে মাছ ধরা হচ্ছে। ফলে, বাঁধের বিশাল এলাকা ভেঙে গেছে। এই ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামতেই সরকারের খরচ হবে কোটি কোটি টাকা।

অভিযুক্তদের মধ্যে মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বাঁধ কাটার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা সরকারের কাছ থেকে জলমহাল লিজ নিয়েছি, মাছ ধরি। মাছ ধরার জন্য আমাদের বাঁধের ওপরে থাকতে হয়।

নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, হাওর অধ্যূষিত মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি ও মদন উপজেলায় প্রায় ২১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফসলরক্ষা বাঁধ রয়েছে। এসব বাঁধের প্রতিবছরই মেরামত করা হয়। বাঁধ কেটে ফেলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আগে কেউ জানায়নি। এখন যেহেতেু জানতে পেরেছি, সরকারি সম্পদ রক্ষায় তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বাঁধের তদারকির জন্য জেলায় জেলা কমিটি ও উপজেলা সমূহে উপজেলা কমিটি রয়েছে।

জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, নেত্রকোণার হাওর অধ্যূষিত এলাকাসমূহে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। ফলে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার ফসল রক্ষা পায়। বাঁধ কেটে ফেলার বিষয়টি নিয়ে জেলা সমম্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত