ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

সন্তানের দুধ কিনতে না পেরে স্ট্রোক করলেন সরকারি চাকরিজীবী

  হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ মে ২০১৯, ১৭:১৬

সন্তানের দুধ কিনতে না পেরে স্ট্রোক করলেন সরকারি চাকরিজীবী

তিনি সরকারি চাকুরে। অথচ তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। স্ত্রী ও শিশু দুটি সন্তান নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছিলো। এরমধ্যে শিশু সন্তানের দুধের বায়না রাখতে না পেরে যারপরনাই মানসিক যাতনায় অবশেষে স্ট্রোক করে মৃত্যুমুখে পড়েছেন।

ওই চাকুরের নাম শরীফ হোসেন। তিনি বাহুবল উপজেলা প্রকৌশল অফিসের ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। ছয় বছর ধরে তিনি উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে কাজ করছেন।

জানা গেছে, টানা তিন মাস ধরে বেতন পান না শরীফ। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাসা ভাড়া দিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছিলো ছোট্ট মেয়ের জন্য দুধও কিনতে পারছিলেন না। এমতাবস্থায় প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগছিলেন শরীফ।

বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় উপজেলা প্রকৌশল অফিসে কাজ করার সময় হঠাৎ তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক সহকর্মীরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়।

শরীফের এক সহকর্মী জানান, উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট শরীফ হোসেন টানা তিন মাস ধরে বেতন না পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালে তার ছোট মেয়ে দুধ নিয়ে বাসায় যাওয়ার কথা বললে তিনি টাকা নেই বলে সন্তানকে বুঝিয়ে অফিসে চলে আসেন। মেয়ের দুধ কেনার টাকা ও বাসা ভাড়া জোগাড় করার টেনশন থেকেই তিনি স্ট্রোক করেছেন।

তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস জানান, উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ করে রেখেছেন। তার স্বামীর বদলি হয়েছে নেত্রকোনায়। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী দুই মাস ধরে তার এলপিসি না দেয়ায় নতুন করে বেতন তুলতে পারছেন না। তার পুষ্প ও শ্রদ্ধা নামের দুটি অবুঝ সন্তান রয়েছে। তিন মাস তার বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে বাসা ভাড়া ও খাবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার শিশু মেয়ে শ্রদ্ধা বাবার কাছে দুদিন ধরে দুধ আনতে বলছিলো। তার বাবার হাতে টাকা না থাকায় দুধ আনতে পারেনি। রাতে যখন সে খালি হাতে বাসায় ফেরে, তখন মেয়েটা অনেক কেঁদে শুয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকালেও দুধ নিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য বলে সে। তখন শরীফ চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে চলে যায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত