বৃদ্ধ বাবাকে শেকলবন্দি করে রেখেছে ছেলে
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০১৯, ০৯:৫৯ আপডেট : ২০ জুলাই ২০১৯, ১০:০৯
মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ বাবাকে শেকলবন্দি করেছে ছেলে। সুচিকিৎসার ব্যবস্থা হলে শেকলমুক্ত হতে পারেন বৃদ্ধ আব্দুল প্রামাণিক।
মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন আব্দুল প্রামাণিক। বয়স তার ষাটের উপর। কয়েক মাস আগেও তিনি ছিলেন একজন সুস্থ ও পরিশ্রমী মানুষ। এখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে লোকজনকে বিরক্ত করেন। পাবনা মানসিক হাসপাতালের ডাক্তারদের দিয়ে আউটডোরে দেখাতে পারলেও ভর্তির ব্যবস্থা করতে পারেননি তার স্বজনরা। তাই তার ছেলে দুলাল হোসেন অনেকটা নিরুপায় হয়েই বাবার হাতে পায়ে শেকল পড়িয়ে বাড়িতে বেঁধে রেখেছেন। এ ঘটনাটি পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা মধ্যপাড়া গ্রামের।
আব্দুল প্রামানিক এর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার পায়ে শেকল ও তালা। কয়েকদিন আগে হাতের শেকলি খুলে দেয়া হয়েছে বলে তার পরিবারের লোকজন জানান। একমাত্র শ্রমিক ছেলের উপার্জনে দু’মুঠো খাবার জুটলেও মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
ভাইয়ের দুরবস্থার বর্ণনা দেন তার ছোট বোন জরিনা খাতুন। তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে জানান, তার ভাই স্ত্রীকে হারিয়েছেন বছর চারেক হল। তখন থেকেই তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। মাস ছয়েক আগেও তার ভাই ভ্যান চালিয়ে ছেলের সংসারে সাহায্য করতেন। এখন তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় প্রতিবেশীসহ কিছু আত্মীয়- স্বজনকেও মারধোর করেছেন। সবাই এখন তাকে ‘পাগল’ বলে।
ছেলে দুলাল হোসেন বলেন, চার বছর আগে তার মা মারা যান। এরপর তিনি বাবাকে ফেলে দেননি। একসাথে সংসার করছিলেন। কয়েকমাস আগে তারা বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেলেন। জানান, ‘ধারদেনা করে পরপর দুই বার পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু ভর্তি করার ব্যবস্থা করতে পারিনি। এজন্য অনেক তদবির লাগে। যা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এদিকে বাবা সুস্থ হননি। তিনি আমাকেসহ প্রতিবেশীদের অনেককে মারধর করেছেন। কারও কোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারেন এ ভয়ে নিরাপত্তার জন্য তাকে শেকলবন্দি করে রেখেছি। তার কষ্ট দেখে কয়েকদিন আগে অবশ্য হাতের শেকল খুলে দিয়েছি। কিন্তু ছেলে হয়ে তাকে শেকলবন্দি করে রাখতে আমার খুব কষ্ট হয়, তবে আমি নিরুপায়! পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা গেলে ঠিকমত চিকিৎসা পেলে তিনি হয়ত সুস্থ হবেন।’
এ ব্যাপারে গুনাইগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারটি খুবই অসহায়। আবদুল প্রামানিক নামের ওই ব্যক্তির সুচিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু তার দরিদ্র ছেলের পক্ষে তার করা সম্ভব নয়। তবে তাকে শেকলবন্দি করে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই।’
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। খুব শীঘ্রই তিনি ওই বাড়ি যাবেন এবং সম্ভাব্য সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করবেন।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস জানান, হাসপাতালে ভর্তির কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে আসলে বিধি অনুযায়ী তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
শিকলবন্দি আবদুল প্রামানিকের সঙ্গে ছেলে দুলাল হোসেন
এমএ/