ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যায় জোগাতে শিশু বিক্রির চেষ্টা

  বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:৫৪

স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যায় জোগাতে শিশু বিক্রির চেষ্টা

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেমেকহা) একটি শিশুকে বিক্রির হাত থেকে রক্ষা করে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন পুলিশের নগর বিশেষ শাখার এসআই সগির হোসেন। দেড় মাস বয়সী শিশুটি নিখিল বাড়ৈ ও শিখা বাড়ৈ দম্পত্তির সন্তান। তারা বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা এলাকার বাসিন্দা এবং নিখিল দিনমজুর। শিখা হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন।

শিখার চিকিৎসার ব্যয়ভার নির্বাহ করতে রোববার দুপুরে নিঃসন্তান এক দম্পতি ২৫ হাজার টাকায় ওই শিশুটিকে কিনতে স্টাম্পে চুক্তি সম্পাদনকালে মেডিকেলের পরিচালক ডা. বাকির হোসেনসহ মেডিকেলে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিশুটি উদ্ধার করে মায়ের কোলে তুলে দেন।

শিখা বাড়ৈ জানান, আমাদের সংসার নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত। অত্যন্ত দরিদ্রতার সাথে আমরা দিনাতিপাত করছি। একদিন আমার স্বামীর কাজ না থাকলে পুরোদিন আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। সংসারে আমাদের আরো দু’সন্তান রয়েছে। এছাড়া গত দেড় মাস পূর্বে উজিরপুরের সাতলার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান হয়। ওই সময় সিজার করাতে আমার স্বামী নিখিল আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ধার-দেনা করে আমার সিজার ও ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে আমাদের পরিবারের আর্থিক অনটনের মাত্রা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। একদিকে আমার স্বামীর সংসার খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হয় সেখানে কন্যা সন্তান ও আমার ওষুধ খরচ চালানো আমার স্বামীর কাছে একটা বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো খাবার খেয়ে না খেয়ে আবার কখনো ওষুধ খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করে আসছিলাম। এরই মধ্যে আমি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ি। শনিবার মেডিকেলের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা আমার হেপাটাইটিস বি হয়েছে বলে জানান। নতুন করে হেপাটাইটিস বি ধরা পড়ায় ওষুধ কেনাসহ শিশু বাচ্চা ও সংসার খরচ চালানো আমার স্বামীর পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব হয়ে উঠছিলো না। চিকিৎসকরা ওষুধ আনতে বললে আমার স্বামীর কাছে টাকা না থাকায় সে ওষুধগুলো কিনে আনতে পারেনি। এভাবে আমরা স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। পরে আমরা কোনভাবেই টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাধ্য হয়ে আমার পেটে জন্ম নেয়া দেড় মাসের শিশুকে বিক্রি করার চিন্তা করি। আমরা বাধ্য হয়েই এমন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই। নয়তো কোন মা তার গর্ভে ধারণ করা সন্তানকে বিক্রি করতে চায় না। আমাদের অভাবের তাড়না এতটাই ছিল যে শিশুটির বয়স দেড় মাস হলেও এখন পর্যন্ত তার একটি নামও রাখতে পারিনি। জীবনের এমন নির্মম গল্প বলতে বলতে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন শিখা বাড়ৈ।

নিখিল বাড়ৈ জানান, আমি ধার-দেনা করে এতদিন চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছি। একবেলা না খেয়ে থাকতে পারা যায়। কিন্তু অসুস্থ হলে কেউ একবেলা ওষুধ না খেয়ে থাকতে পারে না। বাধ্য হয়েই বাবা হয়েও মেয়েকে বিক্রি করার চিন্তা করেছি।

পুলিশের নগর বিশেষ শাখার এসআই সগির হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, শিশু সন্তান বিক্রি করার খবর পেয়ে আমরা সাথে সাথে হাসপাতালে অভিযান চালাই। এ সময় শিশুটির বাবা নিখিল ও মা শিখাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি অভাবের তাড়নায় ওষুধ কেনার টাকা না থাকায় শিশুটিকে বিক্রি করার চেষ্টা করে। শিশুটিকে বিক্রি করে যে টাকা পেত ওই টাকা দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা চালানোর পরিকল্পনা ছিলো তাদের। তার কাছ থেকে সবকিছু জানার পর বিষয়টি পরিচালককে অবহিত করি। এরপর পরিচালককে সাথে নিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে আমার শিখার চিকিৎসার ব্যয় বহনের দায়িত্ব নেই।

পরিচালক ডা. বাকির হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে চিকিৎসা খরচ জোগাতে সন্তান বিক্রি’র উদ্যোগটি ছিলো অন্যায়। হাসপাতালে গরিব রোগীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এরপরও কেউ সমস্যায় পরেন তাহলে আমি তাদের সহযোগীতা করব।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত