ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রতিদিন রুবিনার স্পর্শকাতর স্থানে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিতো তারা

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:২১  
আপডেট :
 ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:৪৭

প্রতিদিন রুবিনার স্পর্শকাতর স্থানে সিগারেটের ছ্যাঁকা

স্থানীয় দালালের লোভনীয় অফারে সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের এক গৃহবধূ।

মঙ্গলবার ইউএনও অফিসে দেশে ফেরা ওই নারীর সঙ্গে কি ধরনের নির্যাতন হয়েছে তার বর্ণনা দেন স্বামী। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, চার পাঁচ দিন আগে বাড়ি ফিরে নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে জ্ঞান হারান তার স্ত্রী।

পরে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় সৌদি আবর থেকে বেঁচে এসে নিজ বাড়ি ফিরে বীভৎস ও লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দেন রুবিনা বেগম (২২) নামের ওই নারী। তিনি লোভনীয় প্রস্তাবে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২৭ নভেম্বর দেশে ফেরেন।

বাড়িতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৮ নভেম্বর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও অর্থাভাবে পুরো চিকিৎসা না করিয়েই গত রোববার ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন রুবিনা। তার বাড়ি কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে। তার স্বামীর নাম ফুল মিয়া। তার বাবার বাড়িও একই ইউনিয়নের রাজকান্দি গ্রামে।

সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রুবিনার স্বামী ফুল মিয়া জানান, সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ২৭ নভেম্বর দেশে ফেরেন তার স্ত্রী। বাড়ি ফেরার পর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। টাকা রোজগারের আশায় গেলেও, একটি টাকাও দেশে পাঠাতে পারেননি তার স্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ইসলামপুর ইউনিয়নের রাজকান্দি গ্রামের সিদ্দেক আলীর মেয়ের সাথে সাত মাস আগে বিয়ে হয় ফুল মিয়ার। বিয়ের পর স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মানবপাচারকারী মোস্তফা মিয়া সৌদি আরবে চাকরির প্রলোভন দেখান। অভাবের সংসার থাকায় প্রলোভনে রাজি হয়ে সৌদিয়া রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল সৌদি আরবে পাড়ি দেন রুবিনা।

তাকে সেখানে গৃহকর্মীর চাকরি দেয়ার কথা থাকলেও সৌদি আরবের দাম্মামে পৌঁছার পর এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, ৩-৪ লাখ টাকায় তাকে গোপন কাজের কর্মী হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। আর ওই কাজে লিপ্ত না হলে তার ওপর চালানো হতো নানা নির্যাতন। একটি কক্ষে রেখে প্রতিদিন কয়েকজন তাকে গোপন কাজে বাধ্য করতো। এসময় জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে তার বুক ও স্পর্শকাতর স্থানও পুড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া তার হাত-পা ও উরুতে জখমের দাগ রয়েছে।

স্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন দলবেঁধে চার-পাঁচজন মিলে তার উপর হামলে পড়তো। তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন রুবিনা। একপর্যায়ে সৌদি পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বিষয়টি আদম ব্যবসায়ী মোস্তফাকে জানালে সে এসব ‘মিথ্যা কথা’ বলে উড়িয়ে দেয়। স্থানীয় এক সাংবাদিকের মাধ্যমে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হকের কাছে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে ৬ মাস ২৬ দিন পর দেশে ফেরেন আমার স্ত্রী।’

স্থানীয় আদম বেপারী ও ইউপি সদস্য মোস্তাফা মিয়ার সাথে এ ঘটনার বিষয়ে যোগযোগ করতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। বেসরকারি হাসপাতাল মুক্তি মেডিকেয়ার প্রাইভেট ক্লিনিকের ডা. সাধন চন্দ্র ঘোষ জানান, ভর্তিকৃত রুবিনার গোপনঅঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়া ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ক্ষতগুলো সারতে একটু সময় লাগবে। শারীরিক নির্যাতনের কারণে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন।

কমলগঞ্জের উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক বলেন, মেয়েটির স্বামী বিষয়টি জানালে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় জানলে মেয়েটিকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। তবে মেয়েটির মানসিক ও শারীরিক অবস্থা করুন। রুবিনার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে দালাল জড়িত তাকে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত