ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রাথমিক শিক্ষকদের খোলা চিঠি

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২০, ১৭:১৫

প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রাথমিক শিক্ষকদের খোলা চিঠি

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে ইতোমধ্যে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

প্রণোদনা ঘোষণার দিন বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তার পদক্ষেপ হিসেবে তাৎক্ষণিক করণীয়, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সরকারি ব্যয়বৃদ্ধি ও কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেয়ার কথা জানান। এর ফল নিম্নবিত্ত মানুষ পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শ্রমিক-কর্মচারী বা অন্যান্য কর্মজীবী মানুষ যাতে কর্মহীন না হয়ে পড়েন, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ, ঋণসুবিধা দেয়ার কথা জানান। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপকতা বাড়ানোর কথাও জানান শেখ হাসিনা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবার জাতীয়করণ থেকে বাদপড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠিটি বাংলাদেশ জার্নালের পাঠকদের জন্য নিম্নে তুলে ধরা হল-

হে মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী,

দেশে করোনা আক্রন্তের সংখ্যা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে সেই সাথে মৃত্যুর মিছিল। সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এর আওতায় নেই জাতীয়করণ থেকে বাদপড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এমতাবস্থায় তাদের কোনো কর্ম না থাকায় জীবিকা নির্বাহ হুমকির মুখে পড়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে ৬ এপ্রিল আপনার দপ্তরে খোলা চিঠির মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে আসলেও আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা না হওয়ায় আবারও আবেদন করছি। করোনার কারণে সকল শিক্ষক ঘরে থাকায় খাদ্য অভাব ও অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে পড়েছে। অনেক শিক্ষক পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করছেন। বেতনভাতা না থাকায় জীবন যাপনের জন্য অনেক শিক্ষক বিকাল ৪.০০ ঘটিকা পর পারটাইম জব করে। কেউবা বাসাবাড়িতে টিউশনি করে, কেউ হোটেলে কাজ করে, কেউবা ইজিবাইক চালিয়ে জীবন যাপন করেন। বর্তমানে সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ যেভাবে ডানা বেঁধেছে বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। বড় আশার কথা হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার হস্তক্ষেপে ও ৩১টি নির্দেশনার মাধ্যমে বর্তমান করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আছে। আপনার নির্দেশনা দেশবাসী যেমন মেনে চলছে, তেমনি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকেরাও আপনার নির্দেশনা মেনে চলছে এবং সংগঠন থেকে মেনে চলার আহ্বান করা হয়েছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বেসরকারি শিক্ষকেরা কোন বেতন ভাতা পায়না এমতাবস্থায় আপনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে ঘরে থাকায় অনেক শিক্ষক শিক্ষিকাদের খাদ্য অভাব দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে অথবা সংগঠনের মাধ্যমে এই অসহায় শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করে আর্থিক প্রণোদনাসহ পরবর্তীতে জাতীয়করণের জন্য আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

হে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী,

আমাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন গ্রহণ করিবেন। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ০১/০৭/১৯৭৩ সনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত জাতিকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে দেশকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য তাহার এক ঘোষণায় প্রথমত- ৩২০০০ (বত্রিশ হাজার) এবং পরবর্তী বঞ্চিত আরও ৪১৬০টি মোট ৩৬১৬০টি বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণ করেন। জাতি গঠনের নিপুন কারিগর, প্রাথমিক বিদ্যলয়ের শিক্ষকদের অভিভাবক হয়ে হৃদয়ে চির স্মরনীয় হয়ে আছেন।

হে মহান নেত্রী,

প্রায় ৪০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বাংলাদেশের মহান স্থপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে আপনি যখন আধুনিক বাংলাদেশের রূপরেখা নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন, বাঙ্গালী জাতির শিক্ষার ভিত্তি মজবুত করার লক্ষ্যে ৯ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে ২৬,১৯৩ টি বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে জাতির পিতার মত আরও একটি ইতিহাস রচনা করেছেন। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় যে, জাতীয়করণ কালীন ২৬,১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান করা হয়েছিল, তাহার সংখ্যা যথাযথ না হওয়ায় ৪১৫৯টি বিদ্যালয় ও ১৬৬৩৬ জন-কর্মরত শিক্ষকগণ জাতীয়করণ হতে বঞ্চিত হয়। ২০১২ সালের সমাপনীসহ এই বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে থেকে প্রায় ১৩০০ বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য যাচাই বাছাই করা হয়েছে। যা মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত আছে।

হে দেশরত্ম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

২০১৮ সালে ১৮ দিন অনশন পালনের পর আপনার কার্যালয় হতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি/২০১৮ তালিকা বহির্ভূত প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে জাতীয়করণে হালনাগাদ তথ্য চাওয়া হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মহোদয় সঠিক তথ্য না দেয়ায় আবারো বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ হতে বাদ পড়ে যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবারো আপনার সুদৃষ্টি কামনার জন্য গত ১৬/০৬/২০১৯ তারিখ হতে ০৯/০৯/২০১৯ তারিখ পর্যন্ত টানা ৫৫ দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনের মতো কর্মসূচী পালনের সময় ডেঙ্গুজ্বরে ১ জন শিক্ষক মৃত্যু বরণ করেন।

মহান আল্লাহ আপনার হাতকে আগামী দিনে আরও শক্তিশালী, সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু করুন। এই কামনায় বাংলাদেশ বে-সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সকল শিক্ষক/শিক্ষিকাবৃন্দর পক্ষে...

মো. ফিরোজ উদ্দিন

সাংগঠনিক সম্পাদক

বাংলাদেশ বে-সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা।

মোবা- ০১৭২৯১৫৩৯৭৮

  • সর্বশেষ
  • পঠিত