ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

দক্ষতা প্রাথমিক শিক্ষকদের ‌‌‘অপরাধ’ হতে পারে না

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:২৯

দক্ষতা প্রাথমিক শিক্ষকদের ‌‌‘অপরাধ’ হতে পারে না

যে কোনো চাকরিতে প্রশিক্ষণের আলাদা মূল্যায়ন থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘প্রশিক্ষণে উল্টো ফল!’ হওয়ার বিষয়টি কেবল বিস্ময়করই নয়, হতাশাজনকও বটে।

শনিবার প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত খবরটিতে শিক্ষকদের যেমন ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি প্রশিক্ষণের প্রতি অনীহাও স্পষ্ট। একদিকে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করছি, অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিচ্ছি- এ দ্বিমুখী নীতি কেন?

বস্তুত নতুন বেতন স্কেলের কারণেই এ বৈষম্য তৈরি হয়েছে। আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষক জাতীয় বেতন স্কেলের ১৫তম গ্রেডে বেতন পেতেন আর ডিপিএড প্রশিক্ষণ নিলে বেতন হতো চতুর্দশ গ্রেডে।

চলতি বছর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সব সহকারী শিক্ষকের বেতন ত্রয়োদশ গ্রেডে নেওয়া হয়। এ ছাড়া নিম্ন ধাপে বেতন নির্ধারণ হওয়ায় আগে থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া শিক্ষকদের বেতন নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের থেকে কমে যাওয়ার কারণে প্রশিক্ষণ অবমূল্যায়িত হয়েছে।

আমরা জানি, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়ে ক্ষোভ ও আন্দোলন অনেক দিনের। এ নিয়ে শিক্ষকরা যতবারই মাঠে নেমেছিলেন, ততবারই তাদের আশ্বাস দিয়ে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

সহকারী শিক্ষকরা এগারোতম গ্রেডের জন্য আন্দোলন করলেও অবশেষে তাদের যে ত্রয়োদশ গ্রেড দেওয়া হয়, তাতে শিক্ষকদের দাবি তো মেটেইনি, উপরন্তু সেখানে ১০ ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হয় বলে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সমকালে এক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তখন এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা বৈষম্য নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছিলাম।

কিন্তু তা আমলে না নেয়ায় আরো নতুন নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে, যার মধ্যে ‘প্রশিক্ষণে উল্টো ফল’ অন্যতম। এর ফলে কেবল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পৌনে তিন লাখ শিক্ষকই ক্ষতিগ্রস্ত হননি, একই সঙ্গে প্রশিক্ষণের প্রতি অন্যদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হতে বাধ্য। অথচ আঠারো মাসের এ প্রশিক্ষণের জন্য একজন শিক্ষককে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য এ প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি এ জন্য যে আমরা দেখছি, যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য আসেন, তাদের অধিকাংশেরই যেমন প্রশিক্ষণ থাকে না, তেমনি অনেকেরই শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতাও থাকে না।

তারা শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য নিয়োজিত হলেও কোমলমতি শিশুদের শেখানোর ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রস্তুতি, পদ্ধতি ও মানসিকতা থাকা দরকার, তা থাকে না। আমরা জানি, শিশুদের শেখানোর গুরুত্ব বিবেচনায় অনেক দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতনভাতা, সুযোগ-সুবিধা, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের মতো হয়ে থাকে। সেখানে উচ্চতর ডিগ্রিধারী ও অধিকতর প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীরাও প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষকতা করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। অথচ বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমরা দেখছি, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় অনেক ক্ষেত্রে মেধাবীদের টানতে পারছে না। আর তার সঙ্গে যদি প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা সুবিধা না দেয়া হয়, তা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক।

প্রাথমিকের শিক্ষকের পরিশ্রম করে অর্জন করা প্রশিক্ষণ ডিপিএড সনদ নিজেদের সার্ভিসবুকে যুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে যখন তার মূল বেতনের টাকা কমে যায়, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ঢালাওভাবে সবার জন্য একটা গ্রেড দিলেও হবে না, সেখানে সব দিকই দেখতে হবে।

সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ, চাকরির বয়স, অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি আমলে নিতে হবে। আগে যেসব সুবিধা শিক্ষকরা পেতেন, হঠাৎ করে তা বন্ধ করাও শোভনীয় নয়। বর্তমানে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর উচ্চ গ্রেডে মূল বেতনের নিম্নতম ধাপে বেতন নির্ধারণ করার ফলে একটি ইনক্রিমেন্ট কমে যাচ্ছে এবং তা প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকের সঙ্গে শতকরা হারে ব্যবধানটা দিন দিন আরও বেশি হচ্ছে। উচ্চ ধাপ থেকে বর্তমানে মূল মাত্র ১০-২০ টাকা কম থাকার কারণে উচ্চ ধাপ দেওয়া হচ্ছে না। সরকার এ টাকা বেশি দিয়ে উচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণ করলে কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না। কিংবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের আগের মতো এক গ্রেড বাড়িয়েও বেতন স্কেল করা যেতে পারে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের স্বার্থেই এর দ্রুত সমাধান হোক।

(সমকালের সম্পাদকীয় পাতা থেকে নেয়া)

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত