ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

অর্ধযুগে তিতুমীর কলেজের শুদ্ধস্বর

  ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২১, ১৯:৪৩

অর্ধযুগে তিতুমীর কলেজের শুদ্ধস্বর
ছবি: সংগৃহীত

সপ্তম বর্ষে পা রাখছে সরকারি তিতুমীর কলেজ শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ। ‘প্রজন্মের দীপ্ত উচারণ’ স্লোগানকে ধারণ করে দীর্ঘ ৬ বছর তিতুমীরের আকাশে শুদ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। আবৃত্তি, নাচ ও গানসহ নানা সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে তিতুমীর কলেজকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে সর্বত্র।

সদস্যরা স্বীয় প্রতিভা দিয়ে ইতোমধ্যে তিতুমীর কলেজে জনপ্রিয় হয়েছে সংগঠনটি। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের পরিবেশনা সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে বেশ। শুরুটা হয়েছিল আড্ডায় কবিতা আবৃত্তি দিয়ে। পর যোগ হয়ে নাচ ও গান।

জানা যায়, ২০১৫ সালে মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, আব্দুর রহমান তিতুমীর, মো. ইসহাক আলী ও তৈমুর মিলে দুই দফা মিটিং করে সংস্কৃতিপ্রেমী শিক্ষক নাছিমা আক্তার চৌধুরীর সাথে। তিনি একমত পোষণ করেন। সাংগঠনিক কার্যক্রমের সূচনা হয়। ঠিক করা হয় নাম, লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও স্লোগান। অল্প কয়েকজন সদস্য মিলে আড্ডায় কবিতা গানের চর্চা চলে। আরো কিছু সদস্য যুক্ত হয় এই পরিবারে। চলে সংস্কৃতি অনুরাগী শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ। এভাবে কেটে যায় ১ বছর।

২০১৬ সালে আরো নতুন উদ্যমে কাজ চলতে থাকে। এসময় দল বেঁধে আসেন প্রতিভাবান কিছু সদস্য। এবছর শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ভালবাসা পায়। বেশ কয়েকটি আলোচনা সভা ও নিয়মিত আড্ডা চলতে থাকে। ১৬ তে কলেজ প্রশাসনের মৌখিক অনুমোদন মিলে। বিজয় দিবস ২০১৬ অনুষ্ঠানে প্রথম অংশগ্রহণ করে শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের সদস্যরা।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চূড়ান্ত পরিষদ কার্যনির্বাহী পরিষদ। তাই ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ সালে লিখিত আবেদন পত্রে কার্যকরী পরিষদ উল্লেখপূর্বক অনুমোদন নেওয়া হয়। শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের অনলাইন যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ এর আগস্ট মাসের ২০ তারিখ। তবে টেকনিক্যাল অভিজ্ঞতা না থাকায় এর কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলেনি।

১৭ মার্চ ২০১৭ শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের প্রথম বড় প্রযোজনা ‘মহানায়কের আগমন’ মঞ্চায়িত হয়। এটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ছিলেন প্রফেসর নাছিমা আক্তার চৌধুরী।

এরপর সরকারি তিতুমীর কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও নিজেদের বিভিন্ন প্রযোজনায় মুখরিত করতে থাকে প্রিয় ক্যাম্পাসকে। সরকারি তিতুমীর কলেজে বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় ঋতুরাজ বসন্তকে। যা সকল শিক্ষার্থীর প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে।

শুধু সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নয়, শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ নানান মানবিক কাজ করে থাকে। ২০১৯ সালে শিক্ষার্থী সাদিয়ার জন্য যখন সাংবাদিক সমিতির ডাকে একযোগ সকল সংগঠন নানান উদ্যোগ গ্রহণ করে ও বাস্তবায়ন করে তার পাশে দাঁড়ায়, তখন একটিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই সংগঠন।

‘কনসার্ট ফর সাদিয়া’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে ফান্ড সংগ্রহ করে তুলে দেন তার পরিবারের কাছে। তাছাড়া সম্মিলিত কার্যক্রমে (বক্স করে সাহায্য গ্রহণ) নিয়মিতভাবে অংশ নেয় সংগঠনের সদস্যরা।

সংগঠনটির সফল পখচলা নিয়ে শুদ্ধস্বরের সাধারণ সম্পাদক প্রান্তিক হোসাইন বলেন, শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ ৭ বছরে পদার্পণ করলো এটা ভাবতেই একটা অজানা ভালো লাগা কাজ করছে। এখনো মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। শুদ্ধস্বরের সাথে আমার যোগাযোগের শুরুটা আমার ক্লাসমেট বন্ধু নিলুফার ইয়াসমিন জুঁই ও বর্তমান সভাপতি মো. ইসহাক আলির মধ্য দিয়ে। অর্ধযুগ পূর্তি উৎসবের ক্ষণে নিজে শুদ্ধস্বরের একজন সদস্য হিসেবে গর্ববোধ করছি।

তিনি বলেন, আজকের এই গৌরবময় দিনে আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করতে চাই সরকারি তিতুমীর কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আশরাফ হোসেন স্যার, সদ্য সাবেক সম্মানিত উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোসা. আবেদা সুলতানা ম্যাম ও বর্তমান উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানা ম্যাম কে। এর পাশাপাশি বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক কামরুন্নাহার মায়া ম্যামের কথা বিশেষ ভাবে বলতে হয়। এছাড়াও কলেজের বিভিন্ন বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক মহোদয় আমাদের কে ভালোবাসায় যেভাবে আগলে রেখেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

তিনি আরো বলেন, সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়া ভাই ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়ল ভাই শুদ্ধস্বরের যেকোনো অনুষ্ঠান সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সাথে যে ভূমিকা পালন করে থাকেন তা বোধহয় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। এছাড়াও আমাদের সকল কার্যক্রম সুনিপুণ ভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির ভূমিকা অনস্বীকার্য।

শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের সভাপতি ইসহাক আলি বলেন, ‘প্রজন্মের দীপ্ত উচারণ’ স্লোগানকে সাথী করে আমাদের যাত্রা শুরু। শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মানবিক মানস গঠণে আমাদের সকল আয়োজন। আমরা বাঙালির ঐতিহ্য লালনের মাধ্যমে তরুণ্যের জয়গাঁথা রচনায় ব্রতী।

তিনি আরও বলেন, এই অর্ধযুগের পথচলায় আমাদের প্রপ্তি অনেক গুণী শিল্পী-কর্মী। সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ভালবাসা। আজ বসন্ত প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রাণের উৎসব, যা আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ইতোমধ্যে দেশবরেণ্য প্রখ্যাত মনীষীদের ভালবাসা পেয়েছে প্রিয় সংগঠন। যা আমাদের খুব আনন্দিত করে। দেশের গণ্ডী পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময় প্রিয় সংগঠনের নাম। সেই সাথে পরম মর্যাদায় উচ্চারিত হবে সরকারি তিতুমীর কলেজের নাম, এই আমাদের চাওয়া।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর নাছিমা আক্তার চৌধুরী বলেন, কলেজে সারা বছরই পরীক্ষা লেগে থাকে। পরীক্ষা থাকলে ক্লাস বন্ধ থাকে। এছাড়া বিভিন্ন বন্ধ থাকে। তখন রিহালসেল করতে সমস্যা হয়। মূলত যখন পুরোপুরি ক্লাস চলে তখন রিহালসেল করা যায়। কিন্তু ঘন ঘন পরীক্ষা বন্ধ থাকায় কিছুটা বাঁধার মুখে পরতে হয়েছে। এতসব বাঁধা পার করে সংগঠনটি ৬ বছর পার করেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত