ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

আমার জার্নিটা খেঁটে খাওয়া মানুষদের মত: সজল

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:১৭  
আপডেট :
 ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:২৭

আমার জার্নিটা খেঁটে খাওয়া মানুষদের মত: সজল

বেশ হাস্যোজ্জল ও মিশুক প্রকৃতির মানুষ সজল। যারা তাকে কাছ থেকে চেনেন এবং জানেন শুধু তারাই বলতে পারবেন সে কতটা মিশুক এবং আড্ডাবাজ। শুটিং সেট কিংবা বাসা, যেখানেই তিনি সেখানেই যেন একটা অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়। হাসি, আড্ডায় সবাইকে মাতোয়ারা করতে তার জুড়ি নেই। মূহুর্তেই যেন সবাইকে কাছে টেনে নেন। এই অদ্ভুত রকমের মন মানসিকতা সবার হয় না কিন্তু তার আছে। হ্যাঁ, বলছিলাম জনপ্রিয় অভিনেতা আব্দুন নূর সজলের কথা। যাকে সবাই ছোট পর্দার সুপারস্টার বলে থাকে। নামের আগে সুপারস্টার লিখলেও মানুষটার মধ্যে কখনোই স্টার ভাবটা দেখা যায় না, মিশে যান মাটির মানুষের মতই।

ছোট পর্দায় দাপিয়ে বেড়ালেও নিজেকে সেখানে আবদ্ধ রাখেন নি তিনি। কাজ করেছেন সব অঙ্গনেই। সবচেয়ে বড় মাধ্যম চলচ্চিত্রেও দেখা মিলেছে এই অভিনেতার। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার চতুর্থ সিনেমা ‘জ্বিন’। এক ছোট্ট আড্ডায় আলাপ হয় তার সঙ্গে। তাকে নিয়ে লিখেছেন ইমরুল নূর।

বাংলাদেশ জার্নাল: দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কাজ করেছেন আপনার অভিনীত চতুর্থ সিনেমায়। এতটা সময় পেরিয়ে গেলেও ক্যারিয়ারের তুলনায় চলচ্চিত্রের সংখ্যাটা একটু কম হয়ে গেলো নয় কি?

সজল: হাহাহা (এক গাল হাসি দিয়ে)। আমি কখনও ওভাবে চিন্তাই করিনি। এইতো মনে হলো সেদিন থেকে কাজ করছি। এখনও অনেক কিছু জানার বাকি, অনেক কিছু শিখার বাকি। আমি শুধু অভিনয়টাই করে যেতে চেয়েছি আর সেটাই করছি। চলচ্চিত্র নিয়ে সবারই একটা অন্যরকম ভাবনা থাকে স্বাভাবিক। মনের মত প্রজেক্ট পেলে তখনই সেটা করা যায়। যেই কয়েকটা কাজ করেছি বা করছি সেগুলো আমার পছন্দমত হয়েছে বলেই করেছি। আর সংখ্যায় গুণে কাজ করতে চাই নি কখনোই। হয়তোবা ক্যারিয়ারের দিক চিন্তা করলে সংখ্যাটা অনেক কম কিন্তু তাতেও আমার আফসুস নেই।

বাংলাদেশ জার্নাল: ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ‘নিঝুম অরণ্যে’ সিনেমা দিয়ে ২০১০ সালে বড় পর্দায় অভিষেক। এরপর ২০১৫ সালে ‘রান আউট’ এবং ২০১৬ সালে ‘হারজিৎ’ সিনেমার পর চলতি বছরে যুক্ত হলেন জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ‘জ্বিন’ সিনেমায়। ছবিটি সম্পর্কে জানতে চাই...

সজল: আমি গত কয়েক বছর ধরেই কাজের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছি। এর কারণ, ভালো না লাগলে এবং গল্প শুনে আমাকে নাড়া না দিলে সে কাজ আমি করিনা। হোক সেটা নাটক, টেলিফিল্ম কিংবা সিনেমা। ‘জ্বিন’-এর গল্পটা আমাকে ভীষণভাবে স্পর্শ করেছে। অসাধারণ একটা গল্প নিয়ে ছবিটি নির্মিত হয়েছে। যদিও ভৌতিক গল্পে এটি নির্মিত সেখানে গল্প বলার ধরণ, অভিনয় করার যথেষ্ট জায়গা সবকিছু মিলিয়ে এটা অসাধারণ একটা প্রজেক্ট আমার কাছে। ছবিতে যারা অভিনয় করেছেন তাঁরা সবাই নিজেদের জায়গা থেকে সেরাটা দিয়েছেন,আমিও চেষ্টা করেছি। ছবিতে আমার চরিত্রের নাম রাফ, যে কিনা একজন ফ্যাশন ফটোগ্রাফার। আমার বিপরীতে রয়েছেন পূজা চেরি।

বাংলাদেশ জার্নাল: ছবিটির সর্বশেষ আপডেট কি?

সজল: ছবির কাজ বলতে গেলে শেষ। আমরা ছবিটির জন্য টানা শুট করেছি। এমনও দিন গিয়েছে যেসময় সকাল আটটা থেকে শুরু করে ভোরবেলা পর্যন্ত শুটিং করেছি টিমের সবাই। অথচ কারোমধ্যে কোন ক্লান্তি ছিলো না। সবাই আপন মনে কাজ করে গিয়েছে। একটা ভালো কাজ যখন হয় তখন সবাই নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজটা করতে চেষ্টা করে। সেই ভালো কাজটা সম্ভব হয় পুরো টিমের জন্যই। লাইট্ম্যান থেকে শুরু করে একটা টিমে যারা যারা থাকে তাদের সবার অক্লান্ত পরিশ্রমেই ফলেই কিন্তু একটা কাজ ঠিকঠাক মত দাঁড়ায়। আমি বলবো যেটুক করেছি খুবই ভালো হয়েছে, বাকিটা দর্শকরা দেখার পর বলবে। এখন পর্যন্ত যতটুক জানি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারীতে ছবিটা মুক্তি পাবে।

বাংলাদেশ জার্নাল: এখন যেহেতু সিনেমা করছেন, সেক্ষেত্রে কি নাটকের কাজ কমিয়ে দিয়েছেন? যদি অন্যভাবে বলি, সিনেমাকে কেন্দ্র করেই কি এখন সামনে এগিয়ে যাবেন?

সজল: নাটক এবং সিনেমা দুইটা দুইরকম প্লাটফর্ম হলেও মূল বিষয় কিন্তু অভিনয়ই, আমার কাছে তাই মনে হয়। নাটক হোক কিংবা সিনেমা হোক সেখানে কিন্তু আমাদের অভিনয়ই করতে হয়। সো, আমি অভিনয়টাকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছি এতটা সময়, এখনও তাই। আর এটা সত্যি যে আমি গত ৩/৪ বছর ধরে কাজের সংখ্যা অনেক কমিয়ে দিয়েছি নাটকে। প্রায় এক যুগ হয়ে যাবে যে আমি ধারাবাহিক করিনা। একসময় একক নাটক অনেক বেশি করেছি কিন্তু এখন সেটাও কমিয়ে দিয়েছি। খুব পছন্দের স্ক্রীপ্ট না হলে এখন কোন নাটকই করি না। আর এখন সিনেমা নিয়ে অন্যভাবে ভাবার কিছু নেই। যদি পছন্দমত কাজ পাই তাহলে সেটা করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল: এই যে বললেন নাটকের কাজ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন, সেটার কারণ কি?

সজল: কারণ বলতে, সবসময় একরকম গল্প বা চরিত্রে কাজ করতে ভালো লাগে না। একটা সময় এসে সেই অবজারভেশনটা তৈরি হয়। আমার কাছে মনে হয়েছে সেই কাজটাই করতে চাই যেটা আমার কাছে নতুন মনে হবে। যেই কাজটা আমাকে টানবে সেই কাজটাই করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল: সেই ২০০০ সাল থেকে শুরু। এরপর অনেকটা সময় কেটে গেলো। নানামত্রিক চরিত্রে হাজির হয়েছেন দর্শকদের সামনে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এমন কোন চরিত্র রয়েছে কি যেটাতে কাজ করেন নি কিংবা করতে চান?

সজল: অনেক রকম চরিত্রই করা হয়েছে। তবে যেই চরিত্রতা আমাকে খুব বেশি টানে বা যেটার প্রতি আমি খুব টান অনুভব করি সেটা হলো 'নেগেটিভ' চরিত্র। কিছু কিছু নেগেটিভ চরিত্র করেছি কিন্তু তারপরও 'নেগেটিভ রোল প্লে' করার মধ্যে আমার একটা অন্যরকম দুর্বলতা রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: এখন অনলাইন প্লাটফর্মের যুগে সবাই অনলাইন মুখী হয়ে পড়েছে। একটা সময় নাটক দেখার জন্য দর্শকরা টেলিভিশনের দিকে মুখিয়ে থাকতো। এখন এই সময়ে এসে অনলাইনের যুগে টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা কমছে বলে কি আপনি মনে করেন?

সজল: যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবকিছুই এখন আধুনিক হয়েছে বা হচ্ছে। কিন্তু এই কারণে যে টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা কমবে, সেটা আমার মনে হয় না। এখন সবাই যার যার জায়গা থেকে ব্যস্ত। সেই ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে যে যেভাবে পারছে অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে নাটক, সিনেমা কিংবা কোন কন্টেন্ট দেখছে। জনপ্রিয়তা কমছে বলবো না মাত্রাটা কমেছে আর সেটা সময় স্বল্পতার কারণে। সবাই কর্ম ব্যস্ততার কারণে আগের মত ঘটা করে এখন টেলিভিশনে নাটক দেখতে পারছে না। যে কারণে কেউ যখন টেলিভিশনের কোন অনুষ্ঠান কিংবা নাটক মিস করে ফেলে তখন সে চেষ্টা করে সেটা অনলাইনে দেখতে। অনলাইন বলতে যে শুধু ইউটিউব সেটাও না কিন্তু, তারা হয়তো সেটা দেখছে নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্স বা অ্যামাজন এপসে। আমার কাছে তাই মনে হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল: আপনাকে সবাই ছোট পর্দার সুপারস্টার বলেই মানে। রোমান্টিক চরিত্রে আপনি অন্যরকম একটা আবেদন তৈরি করতে পেরেছিলেন, এখনও সেটা ধরে রেখেছেন। এই বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখেন?

সজল: এখানে সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে দর্শক। আমি অনেক চরিত্রেই অভিনয় করেছি তার মধ্যে দর্শকদের কাছে বেশি ভালো লেগেছে বা ভালোবেসেছে রোমান্টিক চরিত্রটা। দর্শকদের ভালোবাসাটা আসলে অকৃত্রিম হয়। একটা মানুষ কিংবা দর্শক যে কিনা আমাকে চেনেনও না বা দেখেনও নি কোনদিন, সেই দর্শকরা আমার কাজ দেখে তাদের ভালো লাগার জায়গায় আমাকে স্থান দিয়েছে। যেই চরিত্রটা করলাম হয়তো সেই চরিত্রটা দেখে তাদের পছন্দের জায়গায় আমাকে বসিয়েছে। আমার কাছে এটা অনেক বড় প্রাপ্তি। শুধু আমি না, আমরা যারা শিল্পীরা আছি তাদের সবার জন্য এটা অনেক বড় প্রাপ্তি যে দর্শকরা আমাদেরকে এতটা ভালোবাসে, এতটা সম্মান করে। তবে আমি কখনোই রোমান্টিক হিরো হতে চাইনি, চেয়েছি অভিনেতা হতে। যে কিনা অনেক রকম চরিত্র করবে, অনেক রকম গল্পে নিজেকে উপস্থাপন করবে। আর সুপারস্টার যারা বলে সেটা ভালোবেসে বলে। আমি তাদের ভালোবাসাটাকে সম্মান করি।

বাংলাদেশ জার্নাল: মডেলিং দিয়ে শোবিজে পা রেখেছিলেন সেই ২০০০ সালে। এরপর একটা সময় অভিনয়ের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নেন। এতটা সময় পার করলেন অভিনয় নিয়েই, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মডেলিংয়ে খুব কম দেখা গিয়েছে আপনাকে। এটার কারণ কি?

সজল: এটার আসলে ওরকম কোন কারণ নেই। মডেলিংটাই আমার খুব পছন্দের ছিল। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফটোশুট করেছি, বিজ্ঞাপন করেছি। পরে একটা সময় অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হই। এরপর আর তেমনভাবে মডেলিং করা হয় নি। আমি বিজ্ঞাপনও করেছি হাতে গুণা কয়েকটা, খুব বেশি হবে না। তবে মডেলিংটা আমি খুব মিস করি। আর আমি যে খুব ভালো অভিনয় করি তা কিন্তু না, তবে আমি কাজটা মন থেকে করার চেষ্টা করি, ভালোবেসে করি।

বাংলাদেশ জার্নাল: আর কিছুদিন গেলেই নতুন বছর আসবে। নতুন বছরে আপনার অভিনয় জীবনের দুই দশক পূর্ণ হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে আপনার প্রাপ্তি কি?

সজল: আমার প্রাপ্তি হচ্ছে আমার আশেপাশের মানুষজন ও দর্শকদের অফুরন্ত ভালোবাসা। আমার সহকর্মী, পরিচালক থেকে শুরু করে একটি টিমের সবাই লাইটম্যান, মেকাপম্যান, প্রোডাকশনের সবার কাছ থেকে এত এত ভালোবাসা পেয়েছি সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া সাংবাদিকরাও যারা আছেন, যারা শুরু থেকেই আমাকে সাপোর্ট দিয়ে এসেছেন সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি জানিনা, আমি কি করেছি তবে সবার কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। আর সবার এত ভালোবাসার কারণেই হয়তো আমি এভাবে কাজ করে যেতে পারছি। না হলে হয়তো কোনদিন পারতাম না, সম্ভব ছিল না। আমি সবসময় নিজেকে খেঁটে খাওয়া মানুষের দলে রাখি। নিজেকে সবসময় সৎ রাখার চেষ্টা করি, ভালোবেসে কাজ করি।

বাংলাদেশ জার্নাল: অপ্রাপ্তির খাতায় কি কিছু আছে নাকি সেটা খালি পরে রয়েছে?

সজল: অপ্রাপ্তি বলবো না ঠিক, আমি নিজেকে কখনও সুযোগ সন্ধানী ভাবতে পারিনি। সুযোগের পেছনে ছুটতে পারি নি আর সুযোগও আমাকে কিছু করে দেয়নি। একেক মানুষের জার্নিটা একেক রকম, তেমনি আমারও। আমার জীবনের জার্নিটা হচ্ছে খেঁটে খাওয়া মানুষদের মত। সুযোগ হয়তো আমাকে কিছু করে দেয়নি। কিন্তু আমি সততা ও পরিশ্রম নিয়ে যখন কোন কাজ করি তখন হয়তো সেটার ফল দেখতে পাই। যার কারণে কখনোই এটা দেখি নি যে, কোন একটা কিছু করলাম আর রাতারাতি অনেক বড় কিছু হয়ে গেলাম। আমি যেই ফলটা পেয়েছি সেটা পরিশ্রমের কারণেই। এমন না যে একটা কিছু করে রাতারাতি তারকা হয়ে গেলাম। আর আমার কখনও টার্নিং পয়েন্ট জিজ্ঞাসা করা হলে আমি কখনও একটা প্রজেক্ট বলতে পারি না, সেখানে কয়েকটা নাম চলে আসে। কয়েকটা প্রজেক্ট মিলিয়ে পরিশ্রমের ফলে হয়তো আমি আজকে এখানে এসেছি। সেদিক থেকে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি যে যখন দেশের ভালো ভালো শিল্পীদের তালিকায় আমার নামটা দেখি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত