ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

চীনে করোনা ছড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ!

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২০, ১৪:৩৬

চীনে করোনা ছড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ!
প্রতীকী ছবি

গবেষণার বৈজ্ঞানিক নাম এসএইচসি-০১৪। যেখানে চীনের ঘোড়া-বাদুড়ের লালা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এক ধরনের করোনাভাইরাসকে সক্রিয় করে তা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (চ্যাপেল হিল) সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. রালফ ব্যারিক। তিনি এ নিয়ে ‘নেচার মেডিসিনে’ ২০১৫ সালের নভেম্বরে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফ্রান্সিস কলিন্স এ গবেষণার কারণ জানিয়ে সে সময় বলেছিলেন, অণুজীবের মাধ্যমে জৈব নিরাপত্তা এবং সতর্কতামূলক বিষয়গুলোকে আরো সুদৃঢ় করতেই এ ধরনের গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। গবেষণাগারের প্রকৌশলবিদ্যা ব্যবহার করে ভাইরাসটির সংক্রমণ ক্ষমতার বিচিত্র কয়েকটি দিক নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।

নেচার মেডিসিন’র সেই গবেষণাপত্র প্রকাশ হওয়ার পরই এ ধরনের গবেষণার মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন অণুজীব বিশেষজ্ঞ রিচার্ড এডব্রাইট।

২০১৫ সালের নভেম্বরেই ‘দ্য সায়েন্টিস্ট’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, এ ধরনের বিপজ্জনক গবেষণার ফলে কোনো কারণে ভাইরাসটি গবেষণাগার থেকে পালিয়ে লোকালয়ে চলে আসতে সক্ষম হলে এটা মানবজাতি এবং অন্য অনেক প্রাণিকুলের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। কারণ এটা যখন প্রকৃতিতে অন্য কোনো পোষকদেহে নির্জীব অবস্থায় থাকে, তখন তার সক্রিয় হওয়ার ঝুঁকি কম।

তবে এটি গবেষণাগারে সক্রিয় করার পর একবার যদি মানুষে সংক্রমিত হয়, তাহলে সেটা নির্জীব থাকবে না, প্রাণঘাতী ভয়ংকর অস্ত্রের মতোই আঘাত করবে। তিনি এটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, ২০০৩-০৪ সালে সার্স ভাইরাসের মারাত্মক রূপ দেখার পর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে এ ধরনের ভাইরাস নিয়ে অপ্রয়োজনীয় বিশেষায়িত গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অতএব এখন এ ধরনের বিপজ্জনক গবেষণা চলতে পারে না। রিচার্ড এডব্রাইটের এই বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এ গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ স্থগিত করে।

এদিকে ২২ ফেব্রুয়ারি সেই এসএইচসি-০১৪কেই আজকের কভিড-১৯ উল্লেখ করে নিজের ওয়েবসাইটে (দ্য সাদ ওলসোন শো) একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার অ্যাডওয়ার্ড মিউরোপ্রাপ্ত সাংবাদিক সাদ ওলসোন। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভয়ংকর বিপজ্জনক গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ প্রত্যাহারের পরেও ড. রালফ ব্যারিক থেমে থাকেননি। তিনি তার গবেষণার নমুনা নিয়ে চীনের উহানে ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে (বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অণুজীব গবেষণাগার) যান। সেখানে তার গবেষণার পরবর্তী অধ্যায়ও চলতে থাকে। সেই গবেষণারই একটি ভয়ংকর পরিণতি এখন বিশ্ব ভোগ করছে।

সাদ আরো স্পষ্ট করেছেন, কভিড-১৯-এর জন্ম নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারে, পাঁচ বছর পর যেটি ছড়িয়েছে চীনের উহান থেকে।

প্রসঙ্গত, উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি জীবাণু অস্ত্রের বড় পরীক্ষাগার বলেও খ্যাত। জীবাণু অস্ত্রের বিপজ্জনক গবেষণা করতে গিয়েই এক মুহূর্তের অসতর্কতায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে গবেষণাগার থেকে লোকালয়ে, এরই মধ্যে এমন তথ্যও এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

তবে চীনা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সাদ ওলসোনের প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গণমাধ্যমসহ ব্লগ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও যুক্তরাষ্ট্র এ প্রতিবেদন নিয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

এদিকে বিশ্বের অন্তত ৯৩ দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনা। বিশ্বে এক লাখেরও বেশি মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। শুক্রবার পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৯১ জন মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

এর মধ্যে ৩ হাজার ৭০ জন মারা গেছেন চীনের মূল ভূখণ্ডের ভেতরে। এ ছাড়া চীনের বাইরে অন্য ১০টি দেশে বাকি ৪২১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে ইতালি এবং ইরানে। এখন পর্যন্ত ইতালিতে ১৯৭ জন এবং ইরানে ১২৪ জন মারা গেছেন।

এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শুক্রবার ইরাক, ইরান, মরক্কো, ওমান, কুয়েত ও মিশরে জুমার নামাজ আদায় বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববী প্রতিদিন এশার নামাজের এক ঘণ্টা পর থেকে ফজরের নামাজের এক ঘণ্টা আগ পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছে ৩০৪ জন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গুগল, ফেসবুক, আমাজন ও মাইক্রোসফট সিয়াটল এলাকার কর্মীদের বাসায় বসে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে লক্ষাধিক মানুষ আপাতত বাসা থেকে অফিস করবেন।

ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে করোনাভাইরাসের ভয়ে আটকে রাখা প্রমোদতরী গ্র্যান্ড প্রিন্সেসে আটকা পড়েছে ওই তরীতে থাকা সাড়ে তিন হাজার মানুষ। এই প্রমোদতরীর আগের সমুদ্রযাত্রায় এক যাত্রী মারা গেছেন এবং চারজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট বৃহস্পতিবার নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ৮ দশশকি ৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে।

ব্রাসেলেসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদর দপ্তরে সব ধরনের বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। দেশটির পার্লামেন্ট ব্রাসেলেসের বেশির ভাগ সরকারি অফিসের ভেতরে ও বাইরে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত