ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘ভবিষ্যত ভেবে কলিজা কেঁপে উঠছে আমার’

‘ভবিষ্যত ভেবে কলিজা কেঁপে উঠছে আমার’

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ মর্যাদা ছিনিয়ে নেয়ার পর চারদিন কেটে গেছে। এখনও সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে গোটা উপত্যকা। এ অবস্থায় কাশ্মীর নিয়ে আতঙ্কিত সেখানকার লোকজন। এ নিয়ে ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ভারতের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটেয়ে থাকা কাশ্মীরিরা।

কলকাতায় ব্যবসা বা পড়াশোনা করতে এসেছেন যেসব কাশ্মীরী, তাদের অনেকেই বলছেন এর আগে অনেক খারাপ পরিস্থিতি দেখলেও এবারের বিষয়টা ভিন্ন। তাই তাদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে উপত্যকার পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠবে যা সামলানো মোদি সরকারের পক্ষে হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে।

এ সম্পর্কে কলকাতার নিউ মার্কেট চত্বরের কাশ্মীরি শাল ব্যবসায়ী জাভেদ বলেন, ‘অনেক কিছুই দেখেছি আমরা এতগুলো বছরে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। ভবিষ্যত যে কী হবে ভেবে কলিজা কেঁপে উঠছে আমার।’

গত সোমবার থেকে পরিবারের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই তার। তারা কেমন আছেন, নিজের শহরে কী হচ্ছে কলকাতায় বসে কিছুই জানতে পারছেন না তিনি।

জাভেদ আরো জানান, ‘শেষবার যখন বাড়িতে কথা হয়েছিল, তখন কারফিউ জারি হয়নি। তবে সেদিনও সবাই একটা আশঙ্কার মধ্যে ছিল যে কিছু একটা হতে চলেছে। তারপর তো এই ঘটনা। শুধুই ফোনের দিকে তাকাচ্ছি, যদি যোগাযোগ করা যায় বাড়ির সঙ্গে। যদিও ভাল করেই জানি যে এখন আর ফোন আসবে না।’

কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু কাশ্মীরী শালের দোকান। সেরকমই একটা দোকানে মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে শুকনো মুখে বসেছিলেন এক ব্যক্তি। সাংবাদিক শুনে কথাই বলতে চাইলেন না। কেবল জানালেন, কী হবে আর কথা বলে?

এই অভিমত কলকাতার প্রায় সব কাশ্মীরি শাল ব্যবসায়ীর। কেউ কেউ তো ভয়ে নিজের নাম পর্যন্ত বলতে চাইছিলেন না। ছবি তোলা তো অনেক দূরের কথা।

এই ব্যবসায়ীরা ছাড়াও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েতেও পড়তে এসেছেন বেশ কিছু কাশ্মীরী ছাত্র। তাদেরও কোনও যোগাযোগ নেই বাড়ির সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দাঁড়িয়ে বিবিসি প্রতিনিধি কথা বলছিলেন ফারদীন খুরশিদ ভাটের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘যা পরিস্থিতি, তাতে সামাজিক মাধ্যমে খোলাখুলি কোনো কথা বলতে গেলেই ট্রল্ড হতে হবে। আরও অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে নিজের রাজ্য, নিজের মানুষদের পক্ষ নিয়ে মুখ খোলাটাই সব থেকে সহজ কাজ। এখনও যদি আমরা মুখ না খুলি, তাহলে কাশ্মীরিদের হয়ে কে কথা বলবে? এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তো কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করা হলো না। কাউকে না কাউকে তো বলতে হবে আমার নিজের রাজ্যের মানুষের কথা!’

তিনি আরো জানান, ভবিষ্যৎ খুব অন্ধকার। আগামীতে কী হবে কেউ জানে না। একদিকে রয়েছে ভয়, অন্যদিকে দুশ্চিন্তা যে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র দাউদ আবদুল্লা। তিনি ভারতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের পক্ষে। বললেন, ‘ভারত সরকারই আমাদের নিজস্ব সংবিধান আর নিজস্ব পতাকাসহ সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তো হবেই। ২০১৬’র চেয়েও বড় বিক্ষোভ হবে। এতদিন মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর একটা গোষ্ঠী ছিল, অন্যটা ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। এবারে তো দুই পক্ষই এক জায়গায় চলে আসবে। কারণ ভারতপন্থী মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকেও তো সরকার পিছন থেকে ছুরি মারলো। তাই কাশ্মীরিদের যৌথ বিক্ষোভ যে কত বড় হবে, সেটা আন্দাজ করা তো কঠিন কিছু নয়।’

কলকাতাবাসী যে কয়েকজন কাশ্মীরীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে, তাদের সকলের মনেই এই আশঙ্কা, একবার প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হলে, সেটা কোন পর্যায়ে যাবে তা আন্দাজও করতে পারছে না মোদি সরকার। তবে তার আগে তাদের দুশ্চিন্তা নিজেদের পরিবারের জন্য। এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে কলকাতায় আপাতঃ নিরাপদে থাকলেও বাবা, মা, স্ত্রী, পুত্র কন্যারা কীভাবে দিন কাটাচ্ছেন, তা নিয়ে চিন্তিত তারা সবাই।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত