ঢাকা, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

চেরি ফুলের দেশে

  -শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ০১:৩৫  
আপডেট :
 ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ০১:৩৮

চেরি ফুলের দেশে

১৪. মাজদা গাড়ি কোম্পানিতে

পরদিন আমরা জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তর মটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মাটসুডা মটর কোম্পানি পরিদর্শনে যাই। হিরোশিমা শহরের পশ্চিম প্রান্তে বিশাল এলাকাজুড়ে এ কোম্পানির অফিস ও ফ্যাক্টরি। বিশ্বের অন্যতম খ্যাতিসম্পন্ন মাজদা গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান। ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির সদর দফতরে যেয়ে পৌঁছুলে আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভ্যর্থনা জানান। বিশাল অফিস। জানা না থাকলে মিনিটে মিনিটে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। নিচে মিনিট কয়েক অপেক্ষার পর এক তরুণী কর্মকর্তা এসে আমাদের নিয়ে গেলেন উপরে। প্রায় ৩ মিনিট হেঁটে দোতলার এক সম্মেলন কক্ষে গিয়ে পৌঁছি। পাশাপাশি অনেকগুলো সম্মেলন কক্ষ। প্রতিটিতে টেলিভিশন, ভিসিআর।

আমরা বসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই জনসংযোগ বিভাগের মহাপরিচালক তার কয়েকজন অফিসারকে সাথে নিয়ে এলেন। প্রথমেই তিনি কোম্পানি সম্পর্কে একটি ভিডিও প্রদর্শন করেন। যাতে মটর উৎপাদন থেকে বিপণন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরা হয়। জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, তাদের কোম্পানি ৪৭ মডেলের গাড়ি তৈরি করে থাকে। কোম্পানিতে ৩৩ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করে। ১৯টি দেশে সংযোজন কারখানা আছে। হিরোশিমায় তাদের উৎপাদন কারখানা বিশ্বের একক গাড়ি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৃহৎ। যুক্তরাষ্ট্র মাজদা গাড়ির বড় বাজার। উৎপাদিত গাড়ির শতকরা ৬০ ভাগ রপ্তানি এবং ৪০ ভাগ দেশীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়।

বছরে এ কোম্পানি কয়েক কোটি গাড়ি উৎপাদন করে। ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে মাজদা কোম্পানির অফিস ও ফ্যাক্টরি অবস্থিত। এর মধ্যে খেলার মাঠ, ক্লাব, রেস্তোরাঁ সব আছে। কর্মচারীদের চলাফেরার জন্য কোম্পানির অফিস ও ফ্যাক্টরি এলাকায় সার্বক্ষণিক ৩৩টা বাস চলাচল করে। ভিতরে নদী বন্দর আছে। যেখান থেকে গাড়ি জাহাজে করে বিদেশে পাঠানো হয়। জনসংযোগ কর্মকর্তার ব্রিফিং শেষে কোম্পানি প্রদত্ত হেলমেট ও নিরাপত্তা চশমা পরিয়ে গাড়ি দিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে ফ্যাক্টরিতে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়। একজন লিয়াজোঁ অফিসার সাথে ছিলেন।

এ ফ্যাক্টরিতেই গাড়ি উৎপাদন হয়। এখানে মানুষ কাজ করে কম। বেশি রোবট। মুহূর্তে মুহূর্তে যান্ত্রিক বিপদসহ স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য রোবটের মাধ্যমে কাজ করানোর ব্যবস্থা। ফ্যাক্টরিটি কম্পিউটারাইজড। কম্পিউটারে সবকিছু ঠিকঠাক করা আছে। তাই অটোমেটিক কাজ। এ ফ্যাক্টরির ভিতর দিয়ে হাঁটি। মাইকে লিয়াজোঁ অফিসার আমাদের ফ্যাক্টরি ও গাড়ি উৎপাদন ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তবুও চালু যন্ত্রপাতির আওয়াজের জন্য তাঁর কথা কম শোনা যায়। ছোট একটা পার্টস দিয়ে তৈরির প্রথম স্তর থেকে সম্পূর্ণ গাড়ি উৎপাদন এবং উৎপাদন শেষে গাড়ি চালিয়ে গুদামে নেয়ার কার্যক্রম পর্যন্ত আমরা সচক্ষে দেখি। গাড়ির সর্বশেষ যে যন্ত্রটি সংযোজিত করা হয় তা হচ্ছে স্টিয়ারিং। স্পেয়ার পার্টস উৎপাদনেরও বিভিন্ন কারখানা রয়েছে। প্রতিটি যন্ত্রপাতি আলাদা আলাদা ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয়। সব দেখতে গেলে কয়েকদিন দরকার হবে বলে জানানো হয়।

সবশেষে আমাদের পুরনো মডেল থেকে শুরু করে নতুন মডেল পর্যন্ত গাড়ির প্রদর্শনী স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। চোখ ধাঁধানো সব গাড়ি। জাপানে এত আধুনিক গাড়ি তৈরি হচ্ছে যে আমাদের দেশে আসেনি এমন মডেল আছে অনেক। ৬ মাস পর পর মডেল পরিবর্তন হয়ে থাকে। আমাদের দেশে যা আসে তা অনেক পুরনো মডেল। চলবে...

আগের পর্ব (১৩) পড়ুন

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত