ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রবীণদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা জরুরি কেন?

প্রবীণদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা জরুরি কেন?

বেশি বয়সী বা প্রবীণরা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের মতো জটিল অসুখ তো আছেই। পাশাপাশি হাড়ে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, কোমর ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা, এইসব তো প্রবীণদের অতি সাধারণ বিষয়। অনেকের আবার শরীর কাঁপে, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। এজন্য বয়স্কদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে বার্ধক্যজনিত রোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত (জেরিয়াট্রিক) স্বাস্থ্যসেবা নেই বললেই চলে। তবে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় প্রবীণ হাসপাতালে কেবল বয়স্করাই চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

তাই এই হাসপাতালটিতে সর্বক্ষণ প্রবীণদের ভিড় লেগে থাকে। এটিই দেশের একমাত্র জেরিয়াট্রিক হাসপাতাল। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ষাটের উপরে যাদের বয়স তাদের প্রবীণের মর্যাদা দেয়া হয়।

সর্বশেষ ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী দেশে প্রবীণ বা সিনিয়র সিটিজেনের সংখ্যা এক কোটি তিরিশ লাখের মতো। এতদিনে তা হয়ত দেড় কোটিতে পৌঁছে গেছে।

এখানকার চিকিৎসক জেরিয়াট্রিক কনসালটেন্ট ড. আমিনুল হক প্রবীণদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেন, ‘অল্প বয়সে একজন মানুষের যে শারীরিক গঠন বা ক্ষমতা থাকে; বয়স্কদের সেটা থাকে না। ষাট বছর বয়সের পর মানুষের শরীরে বিভিন্ন অসুস্থতা ধরা পরে। এটা শারীরিক ও মানসিক দু দিক দিয়েই। শারীরিক দিক দিয়ে যেমন দুর্বলতা দেখা দেয়, রক্তশূন্যতা, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার, ক্যান্সার, কিডনির রোগ, আর্থ্রাইটিস এসব ধরা পরে। এখন অল্প বয়সীদের যেভাবে চিকিৎসা করা হয়, বয়স্কদের সেভাবে চিকিৎসা করা যায় না।’

তিনি বলেন, বয়সের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষমতা কমে যায়। সেসব মাথায় রেখে তার চিকিৎসা দিতে হয়। তার ঔষধের ধরন ও মাত্রা অন্যরকম হবে। অনেক বয়স্ক রোগীর ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে নিজের ঔষধের সময় ও মাত্রা হয়ত ঠিকভাবে মনেই রাখতে পারবে না তারা। অনেকে নিজের মল-মূত্রের চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।

আর এ কারণেই তাদের আলাদা সেবা দরকার বলে জানান ড. আমিনুল হক।

তিনি জেরিয়াট্রিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবায় জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনার কোনও ধরনের ব্যবস্থাই নেই। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যন্ত এই বিষয়ে আলাদা ইউনিট নেই।

সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল খুব ছোট পরিসরে জেরিয়াট্রিক সেবা শুরু করেছে।

তাছাড়া অনেক সময় বয়স্কদের সেবা দিতে পরিবারের লোকেরাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।

প্রবীণ হাসপাতালে গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ডা. লায়লা সাবেকুন নাহার জানান, জেরিয়াট্রিক সেবার অভাবে বয়স্ক নারীরা আরও বেশি সমস্যায় পরেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সাধারণত অল্প বয়সে নারীদের বিয়ে হয়। বাচ্চা নিতে হয়, বাচ্চা পালতে হয়, সংসারটা নারীদের উপরেই থাকে। দেখা যায়, তারা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না, নিজেদের খেয়াল করে না। যখন মেনোপজ হয় তখন মহিলারা অনেক ভুগতে থাকে। বেশিরভাগ মহিলাদের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি'র ঘাটতি দেখছি আমি।’

তার মতে অনেক বেশি সন্তান জন্ম দেয়ার কারণেও বয়স্ক নারীরা প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যায় বেশি ভোগেন। তারা ওভারি ও জরায়ুর নানা সমস্যা নিয়ে আসেন।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএ’র হিসেবে ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি হবে। আর ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখ্যা অপ্রাপ্তবয়স্ক ও তরুণদের ছাড়িয়ে যাবে।

প্রবীণদের সেবায় বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো সংগঠন, প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম আতিকুর রহমান বলেন, প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবায় এখনই বিনিয়োগ না করলে বাংলাদেশ বড় ধরনের বিপদে পড়বে। আর আমরাও আরো বিপদে পরবো। কারণ বর্তমানে দেশে যে দেড় কোটি প্রবীণ রয়েছেন তারা আসলে দেড়কোটি রোগী।

তিনি আরো বলেন, ইউএনএফপিএ হিসাব মতে ২০৫০ সালে বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখৗা সাড়ে চার কোটিতে পৌঁছাবে। প্রবীণ বাড়ছে মানে রোগী বাড়ছে। জেরিয়াট্রিক মেডিসিনের জন্য আমাদের ডিগ্রি, কোর্স, হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা, দীর্ঘমেয়াদী সেবা, শেষ সময়ের সেবা এসব চালু করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ নির্বাচনে বর্তমান সরকারের একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ষাটোর্ধদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা। তবে এ বিষয়ে এখনও তেমন তৎপরতা দেখা যচ্ছে না।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত