ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিবন্ধনধারীদের আবেদন

  ভুপেন্দ্র নাথ রায়

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:৫২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিবন্ধনধারীদের আবেদন

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধিত নিয়োগ বঞ্চিত জাতীয় ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে অভিন্দন জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়নের যাত্রাকে চলমান রাখতে আওয়ামীগ সরকারের বিকল্প নেই। এ যাত্রা আরো প্রসারিত হলো আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র জয়ে। বাংলাদেশের জনগণ এবং যুবসমাজ আবারো প্রমাণ করলো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি ছাড়া এদেশের উন্নয়ন সম্বভ হবে না। তাই দেশ এগিয়ে যাক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে। বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধিত নিয়োগ বঞ্চিত জাতীয় ঐক্য পরিষদ গণতন্ত্রের মানসকন্যা, বিশ্ব মানবতার মা বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কতৃপক্ষের সীমাহীন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা দমন করার আহবান জানিয়েছেন। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি চলতে থাকলে শিক্ষক নিবন্ধন প্রাপ্তদের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হবে আর বঞ্চিত হবে হাজার হাজার গরীব মেধাবী নিবন্ধিত শিক্ষক।

এখানে উল্লেখ্য,২০১৬ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ ক্ষমতা এনটিআরসিএ’র উপর ন্যস্ত হলে মেধাবী, মানসম্মত শিক্ষকের চাহিদা পূরণের দ্বার উন্মোচিত হয়। কিন্তু এনটিআরসিএ’র সাম্প্রতিক লাগামহীন কার্যক্রমে সনদপ্রাপ্তরা সেই প্রত্যাশার প্রাপ্তির বিন্দু পরিমাণ দেখছে না। মহামান্য হাইকোর্ট গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ১৬৬টি রিটের চূড়ান্ত রায়ে ১- ১২তম শিক্ষক নিবন্ধতদের জাতীয় মেধা তালিকা করার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া ত্রয়োদশ ও চর্তুদশ শিক্ষক নিবন্ধিতদের ঐ মেধা তালিকায় যুক্ত করে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ১-১৪তম নিবন্ধিতদের গণবিজ্ঞপ্তি কিংবা নিয়োগ সুপারিশ সম্পন্ন না করেই পঞ্চদশ শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন যা কতটুকু আইনসম্মত তা খতিয়ে দেখা দরকার।

এছাড়া ঐ বিজ্ঞপ্তিতে বয়স নিয়ে একটি বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়েছেন। অর্থাৎ, বিজ্ঞপ্তি অনুসারে পয়ত্রিশোর্ধ প্রার্থীরা শিক্ষক নিবন্ধনে আবেদন সহ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে সনদ অর্জন করবেন কিন্তু এমপিও নীতিমালা অনুসারে গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন কিংবা পরবর্তিতে এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না। বিজ্ঞপ্তিতে পয়ত্রিশোর্ধ বয়সীদের সাথে প্রহসন যে করা হচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নাই। একজন পয়ত্রিশোর্ধ প্রার্থী যদি সনদ অর্জন করে গনবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ না পায় কিংবা নিয়োগ পেয়েও এমপিওভুক্ত না হয় তাহলে তার এই সনদের কি মূল্য থাকলো? শিক্ষক নিবন্ধনের সনদটি মূলত শিক্ষক হওয়ার একটি পেশাগত সনদ? সরকারি প্রতিষ্ঠান, দেশি-বিদেশি কোন কোম্পানি, ফ্যাক্টরি, ফার্মহাউজ এবং এনজিওতে এই সনদের মূল্যায়ন কতটুকু তার নির্দেশনা নাই। এই সনদ শুধু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার একটি সনদ। যদি এই সনদ অর্জন করে বাতিল হয়ে যায়, তাহলে এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিবন্ধন বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন না করতে উল্লেখ থাকা দরকার।

এদিকে শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠান প্রতি ১৮০ টাকা ফি নেয়া হচ্ছে। একজন প্রার্থীকে একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বেকার প্রার্থীদের গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এরপরও তারা চাকরির প্রত্যাশা নিশ্চিত করতে পারছেন না। এ বিষয়ে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান একটি বিশেষ নোটিশে উল্লেখ করেন যে, বিসিএস পরীক্ষায় একজন প্রার্থীকে ৮০০-১০০০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়। সম্মিলিত জাতীয় মেধা তালিকা থাকা সত্বেও কেন নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তদের একাধিক আবেদন করতে হবে? কেন তারা একশো-দুইশো প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে বিশ থেকে চল্লিশ হাজার কষ্টের টাকা খরচ করবেন? বিষয়টি স্বভাবতই অমানবিক এবং বেকারযুবকদের কাছে জুয়া খেলা। এই জুয়া খেলায় জীবনের দৌঁড়ে কে জিতবে আর কে হারবে তা সত্যিকার অর্থে সন্দিহান। কিন্তু মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দিলে অন্তত তারা বুঝতে পারতো। এছাড়া নির্বাচনকালিন সময়ে ইন্টারনেট সার্ভার ডাউন থাকায় অনেকে ঠিকমতো আবেদন এবং ফি প্রদান করতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আবার অনেক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদগুলোকে নন এমপিও দেখাচ্ছে। এসমস্ত সমস্যা নিরসন না করে এনটিআরসিএ বেকার যুবকদের সাথে প্রহসন করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আবেদন প্রার্থীরা।

এদিকে চূড়ান্ত রায়ে ৭ টি নির্দেশনা থাকলেও এনটিআরসিএ মেধাতালিকা এবং বয়স নির্ধারণ ছাড়া আর বাকি নির্দেশনাগুলো পালন করার ব্যাপারে উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে সর্বশেষ নির্দেশনাটি অনুসরণ করতে এনটিআসিএ জোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। বঞ্চিত প্রার্থীরা দাবী করেছেন যদি পূর্ণাঙ্গ রায় অনুসরণ করা হয় তাহলে পয়ত্রিশোর্ধ প্রার্থীদের গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ থাকার কথা। সম্প্রতি প্রকাশিত হয় ১৪ তম শিক্ষক নিবন্ধিতদের ফলাফল। তারা এখনও পর্যন্ত সনদ পায়নি। কিন্তু এদের মাঝে পয়ত্রিশোর্ধ সনদধারীরা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেই নীতিমালার কারণে বাদ পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর এবং অমানবিক। শিক্ষামন্ত্রনালয় এন্ট্রি প্রসেসকে এন্ট্রি লেভেলে পরিণত করে। ফলে এনটিআরসিএ এমপিও নীতিমালা/১৮ এর দোহাই দিয়ে পয়ত্রিশোর্ধ প্রার্থীদের বাদ দেয়ার সাফাই গাইছেন। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশিত সাতটি পয়েন্টই অনুসরনীয়। সাতটি নির্দেশনার মধ্যে কোন বিচার প্রার্থী বঞ্চিত হলে তা আসলেই আদালত অবমাননার পর্যায়ে পরে কিনা ভাবতে হবে। এছাড়া একাধিক প্রতিষ্ঠানে একাদিক আবেদন করে আবেদন প্রার্থীদের গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা যা কতটা প্রাসঙ্গিক, বিবেচনা করা উচিৎ। সদ্য গনজোয়ারে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়া আওয়ামীগ সরকারের কান্ডারি গনতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শক্ত হাতে লাগামহীন প্রতিষ্ঠানটির খামখেয়ালীপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার জোর আবেদন জানাচ্ছে শিক্ষক নিবন্ধিতরা।

লেখক: খানসামা, দিনাজপুর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত