ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আশাবাদী...

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২০, ২৩:২০  
আপডেট :
 ২৩ মার্চ ২০২০, ২৩:২৫

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আশাবাদী...

সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস। যথাযথ উদ্যোগ না নিলে এ রোগ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। যা ভালোভাবেই টের পাচ্ছে ইতালিসহ উন্নত দেশগুলো। তবে আশার বাণী হলো, সরকার মঙ্গলবার থেকে মাঠে নামাচ্ছে সেনাবাহিনী। এছাড়া ছুটি দেয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

দেশের এ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট খোলা চিঠি লিখেছেন এক শিক্ষার্থী। সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী মো. আনোয়ার হোসেনের লেখা চিঠিটি বাংলাদেশ জার্নাল-এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

প্রিয় নেত্রী, আমি বাংলাদেশের একজন তরুণ নাগরিক। আমি চার দিন ধরে একটি রুমে অবস্থান করছি। সেটা প্রথমত নিজের নিরাপত্তার জন্য তারপর অন্য মানুষের কথা চিন্তা করে। হয়তো অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ছাড়া বের হব না। দেশে বড় একটি সংকট চলছে করোনাভাইরাসের জন্য। পুরো পৃথিবীতে এর প্রভাব দৃশ্যমান। অনেক দেশের তুলনায় এখনো আমরা ভালো আছি কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে দিন দিন তার রূপ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। যে কয়দিন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তার বাস্তবায়ন কঠোরভাবে করতে হবে তা না হলে আমাদের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। যা আমার চেয়ে আপনি এবং আপনার সরকার উপলব্ধি করছে। তারপরও আমার কাছে মনে হয়েছে আপনাদের আরো বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া খুব প্রয়োজন।

প্রস্তাবগুলো হল:

* প্রবাসীদের দেশে ঢুকতে আরো কঠোর হতে হবে যেটি আরো আগেই দরকার ছিল। তবে আমরা আশাবাদী আপনি এবং আপনার সরকার বাস্তবায়নে সক্ষমতা আছে।

* প্রবাসীদেরকে বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইন থাকার পাশাপাশি সঠিক চিকিৎসা প্রদান করতে হবে তাহলে ভুক্তভোগী এবং পরিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

* আপনার সরকারের সকল মন্ত্রীদের যার যার দায়িত্ব পালনে আরো শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, খাদ্য মন্ত্রী এবং বাণিজ্য মন্ত্রী। কয়েকদিনে তাদের বেফাঁস মন্তব্য, অব্যবস্থাপনা জনগণের মধ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

* গত ১৬ তারিখ ঘোষণায় ১৮ তারিখ যে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সেটা যেন অপব্যবহার করতে না পারে সেদিকে আপনার সরকার কঠোরভাবে যেন পালন করে। কেননা ছুটি হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে যা আমাদের সকলের জন্য ভয়ানক ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিবে।

* আর অপেক্ষা না করে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করুন, কেননা বাংলাদেশে এখনো বহু মানুষ করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেনি, বিশেষ করে গ্রামে। তারা এখনো দিব্বি জনসমাগম করে হাঁটছেন এবং কাজ করছেন এমনকি শহরের কাঁচা বাজার গুলো মানুষের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করে যাচ্ছে।

* দেশের এই মহাসংকটে ব্যবসায়ীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসুন যাতে তারা এই সুযোগে সিন্ডিকেট করে খাদ্য দ্রব্যের মূল্যের বৃদ্ধি না করতে পারে যা ইতিমধ্যেই তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গরীব দেশে গরীব মানুষগুলো এখন দিশেহারা তারা এখন অনেকটাই হতাশার মধ্যে আছে কিভাবে খাবে, দিন পার করবে।

* বিশেষ করে ঢাকা শহরসহ সারাদেশে বাড়িওয়ালাদেরকে বাধ্য করানো হউক যেন তারা আপাতত সংকট-কালীন সময়ে ভাড়া মওকুফ করে দেয় কারণ শহরে বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রী ভাড়ায় থাকে এবং তাদের পরিবারগুলো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এখন দেশে যে অবস্থা কাজের পরিধি কমে যাবে তাই ভাড়াটিয়ার প্রধান ভরসা তাদের বাবার রোজগারের উপর।বাড়িওয়ালারা দুই-তিন মাস ভাড়া না নিলে কিছুই হবে না

* দেশের ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং এনজিও দিয়ে একটি শক্তিশালী ফান্ড তৈরি করুন যেন এই মহাসংকটে কিছুটা হলেও সবাই উপকৃত হয়।

* দেশের ৩ শ’ নির্বাচিত আসনের এমপি, সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড মেম্বার, মহিলা মেম্বার এবং সিটি কর্পোরেশন মেয়র, পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলর দিয়ে খুবই কার্যকরী পদক্ষেপের নির্দেশ দিন যেনো সাময়িক বিষয়ে জেনে দায়িত্ব পালন করে। এখানে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া যাবে না।

* দেশের সকল সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দিয়ে কমিটি গঠন করে যথাযথ চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কঠোরভাবে নির্দেশ দিন। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ এখনো বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না করোনাভাইরাস প্রাণঘাতী ভাইরাস। শহরের মতো গ্রামে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।

* আরেকটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেটি আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আছে তাদেরকে সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়ে পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিতে পারে যেন তারা গ্রামে গিয়ে প্রথমত তার পরিবার এবং আশপাশে করোনাভাইরাস সম্পর্কে বুঝিয়ে বলতে পারে। এছাড়া স্থানীয় শিক্ষকও সে ভূমিকা রাখতে পারে সেটা অবশ্যই গণ-জমায়েত না হয়ে দায়িত্ব পালন করতে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি উদ্যোগ নিলে আমরা আশা করি ভালো একটি ফলাফল আশা করি। আমরা মহাসংকট থেকে রেহাই পাব। চীনের উহান থেকে শুরু হওয়া মরণব্যাধী করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভ করে এখন পুরো বিশ্বে তার প্রভাব ফেলেছে। চীন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুরো বিশ্বে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছি প্রাণঘাতী ভাইরাস। দেশে সংকটের সময় আপনার বলিষ্ঠ দায়িত্ব পালন ও ভূমিকা ছিল জনকল্যাণমুখী এবং এখনও দেশের মানুষ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত