ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিএনপি প্রার্থীর পাশে নেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২০, ১৯:১১

বিএনপি প্রার্থীর পাশে নেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি

ঢাকা-১৮ আসন উপনির্বাচনে হাঁকডাক দিয়ে মাঠে নামলেও নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে বিএনপির প্রার্থীর পাশে নেই দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। প্রচারণায় জন্য গঠিত ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির বেশিরভাগ নেতা এখন ভার্চুয়ালি দিক-নির্দেশনা ছাড়া মাঠে নামছেন না।

আর তাদের দেখাদেখি স্থানীয় নেতাকর্মীরাও কৌশলে নির্বাচনী গণসংযোগ থেকে নিজেদের বিরত রাখছেন। ফলে বিএনপির কেন্দ্র থেকে নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের দিয়ে প্রচারণার কার্যক্রম করতে বাধ্য হচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর।

বিএনপির সূত্র জানায়, এই আসনের প্রার্থীতা নিয়ে শুরু থেকেই জটিলতায় বিএনপি। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকারের দিন বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দুই পক্ষের হামলার ঘটনায় দলের ১৭ জন নেতাকর্মী আহত হয়। এ ঘটনার জন্য অপরাপর সব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এস এম জাহাঙ্গীরকে দোষারোপ করে লিখিত অভিযোগ দেয় দলটির কাছে। সেই ঘটনায় কাউকে দোষী না করে, কাউকে শাস্তি না দিয়ে প্রার্থী ঘোষণা বিক্ষুব্ধরা দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় ডিম ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।

এই ঘটনায় ১২ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে দলটি। এতে আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এই আসনের নেতাকর্মীরা। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করলে দলের প্রার্থীকেও প্রতিরোধ করবেন বলে ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে এস এম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল, কুশপুতুল দাহ, কালো পতাকা প্রদর্শন, এস এম জাহাঙ্গীরের পক্ষালম্বনকারী ৬জন নেতার বাসায় ডিম হামলা করেন বিক্ষুব্ধরা। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরো কঠিন কর্মসূচি পালন করবেন বলে বহিষ্কৃত নেতারা জানিয়েছেন।

তারা বলেছেন, স্থানীয় নেতাকর্মীদেরকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় ও বহিরাগতদের দিয়ে নির্বাচনী শোডাউন করছেন এস এম জাহাঙ্গীর। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু পর থেকে প্রথম দুইদিন বড় শোডাউন করতে পারলেও এখন প্রার্থীর প্রধান কার্যালয়ের আশেপাশেই থাকতে হচ্ছে প্রার্থীকে।

এবিষয়ে এই আসনের নেতাকর্মীরা জানান, গত শুক্রবার নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিন দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে এসব নেতা বিভিন্ন অজুহাতে গণসংযোগ ও প্রচারণায় আসা বন্ধ করেন। এর মধ্যে কারো করোনা ভাইরাস আক্রমণ, কেউ করোনা আতঙ্ক ছাড়াও এই আসনের বিক্ষুব্ধ নেতাদের রোষানলে পড়ার শঙ্কায় এসব কর্মসূচি এড়িয়ে চলছেন। অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টনের আগে সেই ওয়ার্ডের বিক্ষুব্ধদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আপসের চেষ্টা করছেন। নিরাপদ দূরত্বে দায়িত্ব পালনের জন্য অনেকে কম সংঘাতপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব নিতে চাইছেন।

তবে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীরাই তাদের নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিন রুটিন করে উত্তরার নির্বাচনী প্রচারণায় আসছেন। আবার রাতে ঢাকায় ফিরছেন। এটাই এখন তাদের নিত্যনৈমেত্তিক রুটিন বলে জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতারা।

বিএনপির সূত্র জানায়, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী করা হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানকে। তিনি নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর একদিন মাঠে ছিলেন। এরপর আর তাকে কেউ খুঁজে পায়নি। কমিটির সদস্য সচিব বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে।

এছাড়া ৩৪ সদস্যের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব ও আবদুল হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও হাবিব-উন নবী খান সোহেল, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, তাবিথ আউয়াল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, নেছারুল হক, হেলাল খান, হাসান জাফির তুহিনকে সক্রিয়ভাবে দেখা যাচ্ছে না।

এর বাইরে সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফাত আলী সপু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম সহ দলের নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, বজলুল বাসিত আঞ্জু, আব্দুল আলীম নকী, সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ইশরাক হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, আনোয়ার হোসেন নিয়মিত মাঠে রয়েছেন।

এই আসনের সাতটি থানা কমিটির মধ্যে একমাত্র খিলখেত থানা বিএনপির নেতারা সক্রিয় রয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণখান থানা বিএনপির সভাপতি শাহাবুদ্দিন সাগর একদিনও প্রচারণায় আসেননি। এই থানার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর নির্বাচনী প্রচারণার শুরু দিন থাকলেও বিক্ষুব্ধ নেতাদের তাড়া খেয়ে আর আসেননি। বিমানবন্দর থানার সভাপতি জুলহাস মোল্লা একদিন প্রচারণায় ছিলেন। উত্তরা পূর্ব থানার সভাপতি সালাম সরকার নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিনই করোনা আক্রান্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। উত্তরা পশ্চিম থানা বিএনপির সভাপতি আফাজউদ্দিন তার নিজ থানায় নতুন কমিটি দিয়েই বিদেশে গেছেন। তুরাগ থানা সভাপতি আমানউল্লাহ আমান নিষ্ক্রিয়, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ খোকাকে একদিন মাঠে দেখা গেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন থানা যুবদলের সভাপতি আলমাস হোসেন। উত্তরখান থানা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবীবকে গত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রাথীর কার্যালয়ে নৌকা প্রতীকের ব্যাজ বুকে নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু এবারের সংসদীয় নির্বাচনে তাকে কোথাও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের।

ইসিতে অভিযোগ বিএনপির

বাংলাদেম জার্নাল/কেএস/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত