ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হচ্ছে?

  মোস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২১, ২১:৪৯  
আপডেট :
 ২৩ এপ্রিল ২০২১, ২২:০২

হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হচ্ছে?

সমঝোতার গুঞ্জন চললেও হেফাজতে ইসলামের বিষয়ে ‘সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে’ ঠিক এমন কৌশল অবলম্বন করছে সরকার। এ লক্ষ্যে ধর্মভিত্তিক এ সংগঠনের অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বলবত রাখছে। তবে ঢালাওভাবে সব নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

বিভিন্ন ইস্যুতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নেতাদেরই গ্রেপ্তার করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এমনটা নিশ্চিত করেছেন। সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের সাম্প্রতিক প্রকাশ্য বক্তব্যেও তা অনেকটা স্পষ্ট।

দলের নীতিনির্ধারকদের মতে, সরকার হেফাজত ইস্যুতে ধর্ম ও দেশের আলেম সমাজকে কোনোভাবেই নিজেদের প্রতিপক্ষ বানাতে চায় না। বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার স্বীকৃতি প্রদানে সরকারের সঙ্গে আলেম সমাজের একটা সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। যেটি ভিন্ন মতাদর্শী হেফাজতের কিছু নেতাকে কেন্দ্র করে সেই সম্পর্ক ভেস্তে দিতে চান না। আবার ধর্মকে ব্যবহার করে হেফাজতে ইসলাম আবার কোন ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড না করতে পারে সে বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এজন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হেফাজত নেতাদেরই বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের যোগসূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘ধর্মকে ভিত্তি করে নানা সময় হেফাজতের ইসলাম বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে। তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সারা বিশ্ববাসী দেখেছে। তারা মূলত আইএসআই ও পাকিস্তানের মতাদর্শী। বিএনপি-জায়ামাতের অনুসারী। তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান চলমান থাকবে। কোন ছাড়া দেয়া হবে না। যারা ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িত ছিল, তাদের সবাইকে আইন অনুযায়ী কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘হেফাজতের যেসব নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তারা সবাই বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তথ্য-প্রমাণ নিয়েই তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেটা হেফাজতই হোক আর জামায়াত-বিএনপিই হোক। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলছে।’

‘তবে যারা রাজনীতি বা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নন তাদের বিরুদ্ধ কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না। সরকার দেশের আলেম সমাজকে তথা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সবাইকে নিজেদের প্রতিপক্ষ বানাতে চায় না। ভোটের মাঠেও তারা সরকারের প্রতিপক্ষ নয়। তাই শুধু দুষ্কৃতকারী নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বজায় থাকছে। এ বিষয়গুলো সর্তকতার সাথে করা হচ্ছে।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে গত ২৬মার্চ থেকে টানা তিনদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং রাজধানীর ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়। ওই ঘটনার পরপরই সরকার হেফাজতের বিষয়ে নড়েচড়ে বসে। সেই সঙ্গে বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করা হয়।

সাম্প্রতিক হেফাজতের সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়। সাম্প্রতিক মামলা ছাড়াও ২০১৩ সালের মতিঝিল শাপলা চত্বরের হেফাজতের তাণ্ডবের স্থবির থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করা হয়। পুলিশের বিভিন্ন শাখা এসব মামলাগুলো তদন্ত করছে।

ইতিমধ্যে হেফাজতের অভিযুক্ত নেতাদের গ্রেপ্তার শুরু করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মামুনুল হকসহ হেফাজতের ১৭ জন শীর্ষ নেতাকে। তাদের অনেকেই এখন রিমান্ডে রয়েছেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় পাঁচ’শ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অভিযুক্ত হেফাজতের অন্য শীর্ষ নেতারাও যেকোনো সময় আটক হতে পারেন। এমন প্রেক্ষাপটে ব্যাপক চাপে পড়ে যাওয়া হেফাজত ইসলামের নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে সমঝোতা করা চেষ্টা করছে।

সূত্র জানায়, নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা। তবে ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেফাজতের যেসব নেতাকর্মী বিভিন্ন ইস্যুতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

যদিও সমঝোতার বিষয়ে এখনো সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কিছুই জানানো হয়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সহিংসতার ঘটনাগুলোর ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কোনও ছাড় হবে না বলেও হুঁশিয়ারি করা হচ্ছে।

এ নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও সরকার দলের নেতারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্প্রতি প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। ওই সাক্ষাতের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার-মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে কেউ দেখা করতে চাইলে, দেখা করতেই পারে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেখা করেছেন। কিন্তু তাতে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো ব্যত্যয় হবে না।’

তিনি বলেন, ‘সরকার কোনো আলেম বা ধর্মীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করছে না, গ্রেপ্তার করছে দুষ্কৃতকারীদের।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের ব্যানার ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় সহিংসতা করা হয়েছে, এর স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকার আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ১৪ দলের আলোচনা সভায় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, হেফাজত ইস্যুতে সরকার সঠিকভাবেই এগোচ্ছে। নীতির প্রশ্নে শক্তভাবে দাঁড়ালে ২০১৩ সালের ৫ মে তাণ্ডবের পরই হেফাজত প্রশ্নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

হেফাজত ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা সহিংসতার সাথে সরাসরি জড়িত ভিডিও দেখে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের সহায়তায় সরকার সাম্প্রদায়িক দানবীয় অপশক্তিকে মোকাবেলা করেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে।’

সাম্প্রতিক হেফাজতের কর্মকাণ্ডের ঘটনার পরপরই শক্ত অবস্থানের কথা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সহিংসতায় শুধু হেফাজত একা নয়, হেফাজতের সাথে বিএনপি-জামায়াতও জড়িত।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের তাণ্ডবের চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ কি বসে বসে শুধু এসব সহ্য করবে, তারা তো সহ্য করবে না।’

আরও পড়ুন

শাপলা চত্বরের সন্ত্রাসেই আটকা পড়ছে হেফাজত

সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টায় হেফাজত

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত