ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

ছাত্রদলকে প্রতিহত করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা, সংহতি জানিয়েছে ছাত্রলীগ: সাদ্দাম

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২২, ১৬:৪২

ছাত্রদলকে প্রতিহত করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা, সংহতি জানিয়েছে ছাত্রলীগ: সাদ্দাম
ছবি: প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলকে প্রতিহত করেছে এবং ছাত্রলীগ তাদের সাথে সংহতি জানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

তিনি বলেন, ‘রাজাকারদের পাশে থাকার কারণে, সন্ত্রাসের ভাষায় রাজনীতি করার কারণে এতদিন তারা (ছাত্রদল) ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারে নাই। নতুন করে তারা আবার পায়তার করলে আবার ছাত্রসমাজ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত। তাদের হামলায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে এবং তারাই ছাত্রদলকে প্রতিহত করেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়েছে।’

মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষ প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রদল রাজাকার, সন্ত্রাসী এবং খুনিদের পৃষ্ঠপোষক। সাম্প্রতিককালে তাদের সংগঠনের ভাষা হলো সন্ত্রাসের ভাষা। তারা রীতিমতো কিলিং মিশন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে। অস্থিতিশীলতা তৈরি করে ছাত্রদের লাশের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য তারা এখানে এসেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যে কোনো মূল্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন শিক্ষাজীবন চায়। তারা নির্বিঘ্নে ক্লাস করবে, হলে থাকবে, পরীক্ষা দেবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা। শিক্ষাঙ্গন কোনোভাবেই যাতে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল না হয় সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যখন সাংগঠনিকভাবে সন্ত্রাসকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার পায়তারা করছে, স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের তাদের উপর ক্ষোভ রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবং বিভিন্ন দলমতের শিক্ষার্থীরা, প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার শিক্ষার্থীরা আজ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রদলের ক্যাডাররা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বহিরাগতদের সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। তাদের বেশরিভাগই অছাত্র, বেশিরভাগই চিহ্নিত ছাত্রশিবিরের ক্যাডার। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং আমরা (ছাত্রলীগ) সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের সাথে সংহতি জানাই। ছাত্রলীগ সবসময়ই শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মোকাবেলা করতে চায়। তাদের ভাষা যদি সন্ত্রাসের ভাষা হয়ে থাকে তবে আমরা অবশ্যই স্লোগান-মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো এবং এই ক্যাম্পাস কখনো সন্ত্রাসীদের আস্তানা হবে না সেটি আমরা নিশ্চিত করবো।’

সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের অবস্থান কী— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে কোনো মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে চায়। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সন্ত্রাসের একটি অঙ্গন ছিল। এটা শিক্ষাঙ্গন ছিল না, রনাঙ্গন ছিল। ‌অনেক লড়াই সংগ্রাম করে আমরা আজকে একটি সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস তৈরি করতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে একটি গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবেশ রয়েছে। আজকে বিশ্ববিদ্যালয়র অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই, টেন্ডারবাজি নেই, হানাহানি সংঘর্ষের ঘটনা নেই। ২০০১ থেকে ২০০৬ এর সময়ে এখানে যারা সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে, ভয়ের এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তাদেরকে পরাজিত করেই কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিবাচক সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ ফিরে এসেছে। নতুন করে যদি তারা আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে তা হলে ছাত্রলীগ সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করিয়ে দিতে চাই আমাদের গণজাগরণের আন্দোলনের সময় যারা রাজাকারদের পাশে দাঁড়িয়েছে, যারা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, নিজামীদের মুক্তি চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করেছে, সকল প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন ঐকবধ্য হয়ে তখন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে। রাজাকারদের পাশে থাকার কারণে, সন্ত্রাসের ভাষায় রাজনীতি করার কারণে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারে নাই। নতুন করে তারা আবার পায়তার করলে আবার ছাত্রসমাজ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত। তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা সন্ত্রাসের ভাষা পরিত্যাগ করুক, রাজাকারদের পৃষ্ঠপোষকতা পরিত্যাগ করুক। লন্ডনের ফতোয়া যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র কায়েম করতে চায়, কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করতে চায়, সেক্ষেত্রে অতীতের ধারাবাহিকতায় আমরা ঐকবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।’

ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অনেককে লাঠিসোটা বা রড নিয়ে দেখা গিয়েছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ ধরণের কোনো নির্দেশনা ছিল কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এটার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমরা সরাসরি দেখেছি যে, ছাত্রদল দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ক্যাম্পাসে এসেছে। আমাদের নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিরোধ করার অধিকার রয়েছে। সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করার ‌অধিকার রয়েছে। সে জায়গা থেকে আমরা স্লোগান দিয়েছি, শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসের কথা বলেছি। শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছিল, তাদের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি। অস্ত্র ধারণ করা ছাত্রদলের চরিত্র। এটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নয়।’

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করেছে, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রদলের যারা এই বক্তব্য দিচ্ছে তারা মূলত তাদের সন্ত্রাসী চরিত্র আড়াল করার জন্য এই বক্তব্য দিচ্ছে। আমরা দেখেছি তাদের মিছিলে কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী থাকে না। তাদের কেউই রানিং স্টুডেন্ট নয়। সবসময় যে কোনো ঘটনা ঘটলে তারা ছাত্রলীগের উপর দায় গড়ানোর চেষ্টা করে। আমরা সবসময়ই বলি এটি তাদের মনযোগ আকর্ষণ করার একটি চেষ্টা। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের নাম বলে গণমাধ্যম ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে তারা যাতে আলোচনায় আসতে পারে সেটিই তাদের প্রত্যাশা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীকে ক্লাস বাদ দিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগের আজকের ‘প্রোগ্রামে’ থাকতে হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে এসেছে। কাউকে জোর করা হয়নি। কারণ তারা জানে, রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে তাদের শিক্ষাজীবন প্রভাবিত হতে পারে। তাদের অতীতের অভিজ্ঞতা তো আমরা জানি। চার বছরের অনার্স তাদের আট বছরে করতে হয়েছে। তাদের শিক্ষাজীবন যাতে ব্যহত না হয়, ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ যাতে ব্যহত না হয় সেজন্য তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ‌অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানা যায়। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ সংবাদ সম্মেলন করতে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত