ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩২ মিনিট আগে
শিরোনাম

জরিপেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:০২  
আপডেট :
 ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:১০

জরিপেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি। দেশজুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, ফেব্র“য়ারির প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে তফসিল আর মার্চের শুরু থেকে পাঁচ ধাপে হবে এই নির্বাচন।

আট বিভাগে চার ধাপে এবং অবশিষ্টগুলোর মেয়াদ শেষ হলে একসঙ্গে ভোট হবে। সদর উপজেলার সব কেন্দ্রে ভোট হবে ইভিএমে। এবার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রতীকে হবে উপজেলা নির্বাচন। ফলে এবার ভোট নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে আছে বাড়তি আগ্রহ। তবে জাতীয় নির্বাচনে হেরে যাওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় নবনির্বাচিত এমপিদের কাছাকাছি ভিড়তে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিতরা চাচ্ছেন উপজেলায় প্রার্থী হতে। মনোনয়নের দৌড়ে থাকা নেতারা এরই মধ্যে এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে সবার কাছে দোয়া চাইছেন। পুরনো প্রার্থীদের সঙ্গে এবার চারদিকে নতুন মুখের ছড়াছড়ি।

সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার পর স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনেও জয় চায় আওয়ামী লীগ। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে জরিপ চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানা গেছে গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবার উপজেলা নির্বাচনেও মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে জরিপকেই গুরুত্ব দেবে আওয়ামী লীগ। জরিপে একটি প্রশ্নকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কত দিন? দলের রাজনীতিতে ১২ বছর সরাসরি যুক্ত না থাকলে দলের মনোনয়ন নয়Ñএমন মনোভাব দলের সভাপতি শেখ হাসিনার। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত ১০ বছরে অনেক এমপি-মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় নেতার হাত ধরে বিএনপি-জামায়াত থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কিছু এমপি ও নেতার কারণে নবাগত ওই নেতারা স্থানীয় পর্যায়ে দলের পদপদবিও পেয়েছেন। এখন তাদের অনেকের লক্ষ্য নৌকা প্রতীক নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ। এ জন্য স্থানীয় এমপি, জেলার নেতা ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। তাদের কারণে দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত-ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা তবে। উপজেলা নির্বাচনে এবার কৌশলী ভ‚মিকা নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নিজস্ব জরিপ, বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে জনপ্রিয়তায় যিনি সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।

এ জরিপের যে কয়েকটি ধাপ ধরা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত (মহিলা) ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীকে অবশ্যই কমপক্ষে দলের রাজনীতির সঙ্গে ১২ বছর যুক্ত থাকতে হবে। নইলে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন দলীয় সভাপতি। কারণ হিসেবে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, গত ১০ বছরে যারা দলে যোগদান করেছেন, তারা অনেকেই এখন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। অন্যদিকে তাদের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখিও হতে হয়নি। দলের পদপদবিও বাগিয়েছেন। এর ফলে ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢেউ যেন স্থানীয় সরকারেও পড়ে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় প্রধান। এর মধ্যে সঠিক প্রার্থী বাছাই অন্যতম। যিনি দীর্ঘদিন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তৃণমূলে জনপ্রিয়তা আছে, দুঃসময়ে দলের জন্য ত্যাগ আছে তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।’ জানা গেছে, দেশের ৪৯২টি উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত (মহিলা) ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করেন দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪ হাজার ২৩ জন প্রার্থী দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। এবার বেশ কয়েকজন উপজেলা চেয়ারম্যান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলেও তাদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তবে ওই প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইলে বঞ্চিত হবেন না বলে নীতিনির্ধারকরা নিশ্চিত করেছেন। অন্যসব উপজেলায় দলীয় মনোনয়নের বেলায় নানামুখী হিসাব-নিকাশ এবং প্রার্থীদের যোগ্যতার পাশাপাশি সাংগঠনিক দক্ষতার বিষয়টির চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। সে ক্ষেত্রে পরপর দুই দফায় বিজয়ীদের আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

গত সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী উপজেলা নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী থাকবে। বিদ্রোহী হলেই বহিষ্কার করা হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। এখানে বেশ কিছু জরিপ ও দলীয় সভাপতির নিজস্ব জরিপ দেখেই সিদ্ধান্ত হয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত (মহিলা) ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো উড়ে এসে জুড়ে বসাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। যারা দলের জন্য নিবেদিত, পরীক্ষিত ও ত্যাগী তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।’ স্থানীয় সরকার আইনে (উপজেলা পরিষদ) বলা রয়েছে, উপজেলা পরিষদ গঠনের পর প্রথম সভা থেকে পাঁচ বছর মেয়াদ সম্পন্ন হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ২০১৪ সালের ফেব্র“য়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কয়েক ধাপে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসাব অনুযায়ী, যেসব উপজেলা পরিষদের মেয়াদ আগে পূর্ণ হবে, প্রথম পর্যায়ে সেসব উপজেলায় নির্বাচন হবে। চলতি বছর মার্চে উলে­খযোগ্যসংখ্যক উপজেলা নির্বাচনের জন্য উপযোগী হবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আগামী মাসে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। উপজেলা নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আমরা দলীয়ভাবে করি, জোটগতভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আমরা কখনো করিনি। এমনকি সিটি করপোরেশন নির্বাচনও আমরা দলীয়ভাবে দলীয় প্রতীকেই করেছি। এবার আমাদের দলের সভাপতি আমাদের নেত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে নৌকা প্রতীকে হবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ জরিপ চালিয়েছে, সেই জরিপে যারা এগিয়ে এবং যোগ্য, তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাদের স্বাক্ষরসহ সম্ভাব্য তিনজন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠাবেন। সেখান থেকে উপজেলা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ জরিপ চালিয়েছে, সেই জরিপে যারা এগিয়ে এবং যোগ্য, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এবার যারা উপজেলায় মনোনয়ন চাইবেন তাদের প্রথমে স্থানীয়ভাবে তৃণমূলের স্বীকৃতি নিয়ে আসতে হবে। উপজেলায় বর্ধিত সভা করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে তিন জনের নাম তারা ‘রিকগনাইজড’ করবে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন জনের মধ্যে থেকে কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড একজনকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সুত্রে জানা গেছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো অনুপ্রবেশকারীকে মনোনয়ন দেবে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অন্তত ১২ বছর আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলে তার মনোনয়ন লাভের সম্ভাবনা কম। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল। প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের ৪-৬ জন করে সম্ভাব্য প্রার্থী সরব রয়েছেন। বিএনপির কোন প্রার্থী এখনও পর্যন্ত মাঠে নেই।

এদিকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো অনিয়মের আশঙ্কায় ধানের শীষ প্রতীকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন না করার পক্ষে মতামত দেন স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য। তবে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইলে বিএনপি আপত্তি করবে না।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে সারাদেশের প্রতিটি কেন্দ্রে প্রশাসন আর আওয়ামী লীগ মিলে ভোট বাক্স ভর্তি করেছে। জনগন ভোট দিতে পারেনি। উপজেলা নির্বাচনেও সেই একই কায়দায় আরেকটি প্রহসন করতে চাচ্ছে তারা। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির পর বর্তমান নির্বাচন কমিশনার ও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এখন কোনো নির্বাচনেই মানুষের আগ্রহ নেই। রিজভী বলেন, বিগত এক দশক ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় নির্বাচনসহ একাধিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি। কখনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সেখানে ক্ষমতাসীনরা কিভাবে অনিয়ম করে তা দেশের নতুন প্রজš§ ও বিদেশিদের সামনে প্রমাণ করতে এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবে এসব নির্বাচনে অংশ নেয়া হয়েছে। বারবার ক্ষমতাসীনদের অনিয়মের চিত্র প্রকাশ পেয়েছে, প্রমাণ হয়েছে। নতুন করে সেই চিত্র আর প্রকাশ করার দরকার কি?

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রায় সবাই একমত হয়েছেন। তারা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতির পর বর্তমান সরকার ও ইসির অধীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায় না। কারণ, সব নির্বাচনের ফলাফলই পূর্বনির্ধারিত এবং ইসির ভ‚মিকাও একই থাকবে। তাই শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে এই সরকার ও ইসিকে বৈধতা দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। এই মনোভাবের কথা বিএনপি শিগগির ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত