ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ: রিজভী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০১৯, ১৩:২০

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ: রিজভী

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সত্যের অপলাপ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশে সব টেলিভিশন চ্যানেল এখন পূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করছে- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বছরের সেরা মিথ্যাচার। স্বাধীন দেশে মানুষ এখন পরাধীন। সত্য প্রচারের জন্য গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয় এবং গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের জেল, জুলুম ও গুমের শিকার হতে হয়। সত্য লেখনির জন্য অনেককে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী তার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন-টেলিভিশন আমি দিতেও পারি, নিতেও পারি। অর্থাৎ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। সুতরাং গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তার কর্মের সাথে সম্পূর্ণ বিপরীত। তার বক্তব্য সত্যের অপলাপ।

তিনি বলেন, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে আওয়ামী রসগোল্লা গেলাতে বাধ্য করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে টিভি চ্যানেলগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে টেলিভিশন মালিক ও সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের করার কিছুই থাকে না। তাদেরকে বাধ্য হয়ে সরকারি ট্যাবলেট গিলতে হচ্ছে। সত্য প্রচার করতে গেলে তাদের পরিণতি হবে ‘আমার দেশ পত্রিকা কিংবা দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি চ্যানেলের মতো। যদি কেউ সত্য ও স্বাধীন মতামত গণমাধ্যমে প্রকাশক করে তাহলে তার ওপর নেমে আসবে অকথ্য জুলুমের ধারালো তরবারি। যেমন নেমে এসেছে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কিংবা বর্ষীয়ান লেখক-কলামিষ্ট শফিক রেহমানের ওপর। বর্তমানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপন করছে বলেই গণতন্ত্র এখন ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিনিয়ত হুমকির মধ্যে রয়েছে বলেই জনসমাজে গভীর শুন্যতা বিরাজ করছে। সরকারের দমন নীতির প্রবল উত্থানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর ক্রমাগত দুরমুজ পেটানো হচ্ছে।

রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের ৫৬৮তম দিন আজ। অবৈধ মিডনাইট সরকারের প্রতিহিংসার কারাগারে তার শারীরিক অসুস্থতার ক্রমাগত অবনতি হলেও ক্ষমতা হারানোর ভয়ে মুক্তি দিচ্ছে না সরকার। এ সরকার মানবতাবোধ শুন্য এবং বেআইনি কাজে এতো অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, তারা বেগম খালেদা জিয়ার বিপদজনক অসুস্থতাও ভ্রক্ষেপ করছে না। সরকারের অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ প্রমান করে বেগম জিয়ার প্রাণনাশ করতে এক গভীর ষড়যন্ত্রে মেতেছে তারা।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন এখনি! আপনাদের দুর্দিন আসতেও বেশি সময় লাগবে না। সময় সব সময় একরকম থাকে না। বাতাস সব সময় একদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়না। প্রতিহিংসা আর দাম্ভিকতার পতন শ্বাশ্বত ও অনিবার্য।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আলোচনা সভায় বলেছেন, পঁচাত্তর সালের ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড জিয়াউর রহমান। ষড়যন্ত্রের পুনরাবৃত্তি একই সূঁত্রে গাথা। আগস্টেরই ২১ তারিখে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকেও নিশ্চিহ্ন করতে প্রকাশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। এখনো ওদের ষড়যন্ত্র চলছে। এখনো বাতাসে চক্রান্তের গন্ধ আসছে।

তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য যদি সত্য হয়, তাহলে ১৫ আগস্টের মর্মষ্পর্শী ঘটনার পর আওয়ামী লীগেরই লোকজন সরকার গঠন করলো কিভাবে? ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি ১৫ আগস্টের বিষয়ে এইচটি ইমামকে জিজ্ঞেস করুন তাহলেই সব উত্তর পেয়ে যাবেন। যারা সেদিন লাশ ডিঙিয়ে মোশতাক সরকারের স্পীকার থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি ছিলেন এদের অনেকেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং তারা এমপি হলেন কিভাবে? তৎকালীন সেনাপ্রধানের কোন দায় নেই, অথচ মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের নাম কেন টেনে নিয়ে আসেন সেটি আমরা জানি। সেটি হলো-জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তা, যা নানা কুৎসা রটানোর পরেও আজও তা বিন্দুমাত্র মলিন হয়নি।

রিজভী বলেন, ১৫ আগস্টের সময় বিএনপি’র সৃষ্টি হয়নি এবং শহীদ জিয়াউর রহমান তখন তো কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন না। তাহলে তাকে অভিযুক্ত করতে আওয়ামী নেতারা এতো তৎপর কেন? তৎকালীন সেনাপ্রধানের কোন দায় নেই কেন? কারণ তিনি আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। ইতিহাসই এর প্রমান। যে ব্যক্তিরা সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের প্লট তৈরি করেছিল, যে ব্যক্তিরা খন্দকার মোশতাকের শপথে অংশ নিতে বঙ্গভবনে গিয়েছিল। সেই ব্যক্তিরাই এখন সরকারের চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে। পঁচাত্তরে আওয়ামী লীগের লোকেরাই একজন আরেকজনকে হত্যা করেছে, একজন আরেকজনের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেছে। আজকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এই আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, নিজেদের ক্ষমতা মগ্নতার কারণে তারা সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী এবং সেই হত্যার প্লট যারা তৈরি করেছিল সেইসব ব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা করতে পিছপা হয় না।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএস/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত