ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

রায় নিয়ে যা ভাবছে বিএনপি

  কিরণ শেখ

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:৫৯

রায় নিয়ে যা ভাবছে বিএনপি
ফাইল ছবি

কারাবন্দী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি আদালতের ওপরও ভরসা রাখছে বিএনপি। যদিও দলটি আশঙ্কা করছে, বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা সরিয়ে ভিন্ন রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তাই দলটি এই দিন আদালতের ভেতরে ও বাইরে বড় ধরনের শোডাউনের পরিকল্পনা করেছে। আর এই দিন খালেদা জিয়ার জামিন না হলে একদফার আন্দোলনে যাবে দলটি। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এবং নেতাদের বক্তব্যে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রটি জানায়, বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে ঘিরে আদালত ও আদালতের বাইরে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সরকারকে চাপে রাখতে গত রোববার ও মঙ্গলবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। আর এই দিন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা পোশাক পরে হাইকোর্টের ভেতরে শোডাউন করবেন। বিএনপির এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আদালতের বাইরে শোডাউন করবে বলে দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এছাড়া এই দিন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে ঘিরে শুধু ঢাকায় নয় সারাদেশেও শোডাউন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি।

তবে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বাংলাদেশ জার্নালকে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের ভেতরে আমরা শুধু আইনজীবীরা থাকবো। আর শোডাউন করার কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই। কারণ আমরা আদালতের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই না। কারণ জামিন উনার প্রাপ্য। কিন্তু আদালতের বাইরে (শোডাউন) হতে পারে। আর আদালতের ওপর সরকার চাপ প্রয়োগ করছে।

এবিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে যে রিপোর্ট দিয়েছে, সেই রিপোর্টটিকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কোনো রিপোর্ট দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা খুব পরিস্কারভাবে লক্ষ্য করছি, অত্যন্ত সচেতনভাবে খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে কারাগারে আটকে রাখার জন্য সরকার কাজ করছে এবং এভাবে তারা (সরকার) বড় রকমের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। আর প্রতিবারই বিভিন্নভাবে সরকার তার জামিনকে বাধাগ্রস্ত করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে কালকের দিনটার দিকে দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। সবার চোখ আপিল বিভাগের দিকে। সবার প্রত্যাশা, দেশে যদি আইনের শাসন থেকে থাকে সত্যিকার অর্থে এই মামলার যে নজির রয়েছে, তাতে উনাকে (খালেদা জিয়া) জামিন না দেয়ার কোনো সুযোগ নাই। তাহলে কী হবে আগামী দিন? বেগম খালেদা জিয়ার আইনগত যে অধিকার, সেখান থেকে বঞ্চিত করে উনাকে যদি জামিন দেয়া না হয়, উনি যদি সুবিচার না পান তাহলে বাংলাদেশের মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের যে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে, সেটাই করবে। তাই বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার জামিন না হলে তার মুক্তি আন্দোলন শুরু হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি হবে। দেশের মানুষ গভীর আশা নিয়ে সর্বোচ্চ বিচারালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। দুঃশাসনকবলিত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল ও ভরসার জায়গা হলো দেশের বিচারালয়। আমরা এখনও বিচার বিভাগকে বিশ্বাস করি। বিশেষ করে সুপ্রিমকোর্ট নিরপেক্ষ থেকে ন্যায়বিচার করবেন, আইনের শাসন কায়েম থাকবে বলে আশা করি। তাই আমরা আশা করি, মহামান্য আদালত চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তার প্রাপ্য হক জামিন দিয়ে মুক্ত পরিবেশে পছন্দমতো হাসপাতালে স্বাধীনভাবে সুচিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেবেন। আইন, সংবিধান, মানবাধিকার, বয়সসহ সকল বিবেচনা অনুযায়ী জামিন পাওয়া তার ন্যায়সঙ্গত অধিকার। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা চেয়ারপারসনের জামিন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। আমরা আরো আশা করি, উচ্চ আদালত সবকিছু বিবেচনা করে সঠিক রায় দেবেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা সরকারকে বলবো, বেগম জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার জীবনহানির শংকায় শংকিত আমরা। গোটা দেশবাসী গভীর উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছে। জামিন আটকে দিতে আদালতে নগ্ন হস্তক্ষেপ করবেন না। ন্যায়বিচারে বাধা দেবেন না। মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন দিন। তার জামিনই এখন দেশবাসীর কাছে মুখ্য। তাহলেই বোঝা যাবে, প্রধানমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্যের সাথে কাজের মিল আছে।

গত বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন হবে বলে প্রত্যাশা করেছিল বিএনপির শীর্ষ নেতাকর্মীরা। কিন্তু শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় হতাশ দলটির নেতাকর্মীরা। এজন্য গত ৫ ডিসেম্বর দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, খালেদার মুক্তির দাবিতে ১২ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত বিক্ষোভসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করবে বিএনপি।

গত ১৮ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সবশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানাতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার রিপোর্ট গত ৫ ডিসেম্বর আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। কিন্তু খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পরে খালেদার স্বাস্থ্যগত তথ্যের বিষয়ে আদালতের কাছে সময় চেয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় প্রধান বিচারপতি এ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। আর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দাখিলের পাশপাশি ওইদিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার জামিন শুনানিও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে সেটিও পেছানো হয়।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক। এই রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা বাতিল ও খালাস চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন খালেদা জিয়া। এর গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে দেয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এছাড়া বিচারিক আদালতে থাকা মামলাটির নথি তলব করেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে নথি পাঠাতে বলা হয়।

বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি গত ২০ জুন হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আদালতে তুলে ধরেন তার আইনজীবীরা। শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ জুলাই জামিন আবেদন খারিজ করেন। পরে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে তার আইনজীবীরা আপিল বিভাগে যান।

অপরদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

প্রসঙ্গত, দুর্নীতির পৃথক দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রয়েছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত