ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

সব বাসেই ‘ডিজেলচালিত’ স্টিকার!

  মো. ফরহাদ উজজামান

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ২০:৫৭  
আপডেট :
 ১৩ নভেম্বর ২০২১, ২০:৫৯

সব বাসেই ‘ডিজেলচালিত’ স্টিকার!
প্রতীকী ছবি

ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পর গণপরিবহনেও ভাড়া বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তারপরও নির্ধারিত মূল্যর চেয়ে অতিরিক্ত বাস ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য থামছে না। ডিজেল ও সিএনজিচালিত বাসে আলাদা স্টিকার লাগানোর কথা থাকলেও শুধু ডিজেলচালিত বাসে স্টিকার দেখা গেছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেয়া হচ্ছে বাসগুলোতে। এতে যাত্রীদের সঙ্গে বাস কন্ডাক্টর-চালকের সঙ্গে ঘটছে বাকবিতণ্ডা। নির্ধারিত গন্তব্যের বাসে ভাড়ার চার্ট না থাকাসহ বেশকিছু অনিয়মের বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন বিআরটিএ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।

যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চার্ট দেখতে চাইলেও তা দেখানো হচ্ছে না। যে যার মত আদায় করছে বাড়তি ভাড়া। এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। প্রশাসনের নজরদারি কিছু জায়গায় থাকলেও সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের বচসার ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ জানিয়েছেন, আগামীকাল থেকে সিটিং-গেইটলক সার্ভিস বন্ধ থাকবে। এ নির্দেশনা না মানলে বাসের লাইসেন্স ও রুট পারমিট বাতিল করা হবে। বাস মালিকের বিরুদ্ধেও নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, প্রতিটি বাসে ডিজেল ও সিএনজিচালিত বাসে আলাদা স্টিকার লাগানো হবে। তখন সিএনজিচালিত বাস বাড়তি ভাড়া নিতে পারবে না।

শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ডিজেলচালিত বাসের স্টিকার লাগানো দেখা গেলেও সিএনজিচালিত বাসের কোনো স্টিকার দেখা যায়নি। আবার অনেক বাসে কোনো স্টিকারই চোখে পড়েনি।

ধানমণ্ডির মিরপুর সড়কে ট্রাফিক সিগন্যালে দাড়িয়ে ছিল ঠিকানা পরিহনের একটি বাস। ইপিজেড থেকে সায়দাবাদ তাদের গন্তব্য। তবে বাসের সামনে বা ভেতরে কোথাও নেই ডিজেল বা সিএনজিচালিত স্টিকার।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বাসের চালক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখনো স্টিকার লাগানো হয়নি। তবে আমারা এখন বাস ডিজেলেই চালাই। আগে কী ছিলো জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি।

তবে এর আগে বাস পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় চলাচলরত ৬ হাজার বাসের মধ্যে ১৯৬টি সিএনজিচালিত বাস। শতকরা হিসাবে যা ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ।

তবে বাস মালিকের দেয়া তথ্যের ১৯৬টি বাসের একটির দেখাও মেলেনি সড়কে।

যাত্রীরাও অভিযোগ করে বলছেন, সড়কে আমরা কোনো সিএনজিচালিত বাসের দেখা পাইনি।

আজিমপুর থেকে মহাখালী যাবেন শরিফুল মিয়া। উঠেছেন বিকাশ পরিবহনের একটি বাসে। বিরক্তি কণ্ঠে তিনি অভিযোগ করে বলেন, সারাদিনে একটা বাসেও সিএনজিচালিত কোনো স্টিকার দেখিনি। বেশিরভাগ বাসেই স্টিকার নেই, যেগুলোতে আছে তার সবই ডিজেলচালিত। আবার ভাড়াও নেয়া হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডাক্তার সঞ্জীব দাস বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বর্ধিত ভাড়া কার্যকরের পর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কিনা, বাসে স্টিকার লাগানো আছে কিনা এবং ডিজেলচালিত বাস ও না হলেও নতুন নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কিনা, তা আমরা মনিটরিং করছি।

অভিযানের সময় আমরা দেখতে পেয়েছি, সরকারের নির্ধারিত নতুন ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এজন্য আজ ৮টা গাড়িকে ১৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনার সময় যাত্রীদের বিভিন্ন অভিযোগও পেয়েছি। যারা ডিজেলচালিত বাস পরিচালনা না করেও নতুন ভাড়া নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও জরিমানা করা হচ্ছে।

অভিযানের সময় সিএনজিচালিত কোনো স্টিকারের বাস পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসের সামনে সিএনজিচালিত কোনো স্টিকারে বাস দেখিনি। তবে ডিজেলচালিত স্টিকার দেখেছি। যাদের কোনো স্টিকার নেই তাদের কাউকে জরিমানা ও অন্যদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এমন অভিযান কতোদিন থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, পরিস্থিতি যতদিন স্বাবাবিক হবে না, ততোদিন চলবে। তবে কোনো বাসে সিএনজিচালিত দেখা না যাওয়ার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। এর পরদিন থেকেই বাদ দিয়ে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয় গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। সড়ক পথে তিন দিন এবং নৌপথে দুদিন ধর্মঘটের পর সরকারিভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৮ নভেম্বর) থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে বাস ও লঞ্চ মালিক সমিতি। এরপর থেকেই শুরু হয় ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য।

বাংলাদেশ জার্নাল/এফজেড/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত