ব্রিসবেনে অ্যাশেজ উত্তাপ
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:২৬
আগামীকাল ব্রিসবেনের গাব্বায় শুরু হতে যাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অ্যাশেজ সিরিজ। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে কন্ডিশনের সঙ্গে অপরিচিত সফরকারী ইংল্যান্ডকে পেস আক্রমণ দিয়ে ঘায়েল করতে চাইবে স্টিভ স্মিথের নেতৃত্বাধীন নবরূপের অস্ট্রেলিয়া।
সিরিজের প্রথম দুই টেস্টের জন্য ঘোষিত অস্ট্রেলিয়া দল নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছেন, বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তবে দলে থাকা তিন পেসার মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড এবং প্যাট কামিন্সের বোলিং আক্রমণ দিয়েই ২০১৩ সালে গাব্বা মাঠে মিচেল জনসনের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আশা করছে অজিরা।
পক্ষান্তরে এখনো পরীক্ষা মেলেনি ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইনআপেরও। তার উপর দলটির জন্য বড় ধাক্কা নাইট ক্লাবের বাইরে মারামারির ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে দল থেকে বাদ পড়া তারকা অলরাউন্ডার বেন স্টোকস।
উনিশ শতকে শুরু হওয়া দ্বিপাক্ষিক এ সিরিজ মানেই তুমুল উত্তেজনা। তার উপর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আসন্ন সিরিজে ইংল্যান্ডকে ‘যুদ্ধ’ মোকাবেলা করতে হবে বলে আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন। কেবলমাত্র ওয়ার্নার নন দলের অনেক খেলোয়াড়ই চার বছর আগে সফরকারী দলকে জনসনের কীর্তির কথা স্মরণ করিয়ে রেখেছেন।
চার বছর আগে জনসনের ৯ উইকেট শিকারের সুবাদে গাব্বা টেস্টে ৩৮১ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিল অজিরা। শেষ পর্যন্ত ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছিল ইংলিশদের।
স্টার্কের নেতৃত্বাধীন তিন পেসার এক টেস্টে কখনো এক সঙ্গে বোলিং করেননি। তবে তারপরও অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা পেস কম্বিনেশন হিসেবে স্বীকৃতি মিলেছে তাদের। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে তাদের ক্যারিয়ারের স্ট্রাইক রেট অনেক ভাল।
তাছাড়া গাব্বায় অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। এ মাঠে ১৯৮৮ সাল থেকে কো ম্যাচে হারেনি স্বাগতিকরা, গত ৩১ বছরে কোন ম্যাচে জয়ী হতে পারিনি ইংলিশরা।
অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ জয়ের আশায় মুখ্য হয়ে উঠতে পারেন স্টার্ক এবং ইংল্যান্ডের বড় দুই ব্যাটসম্যান অধিনায়ক জো রুট ও সাবেক অধিনায়ক এলিস্টার কুককে টার্গেট করেছেন তিনি।
স্টার্ক বলেন,‘ইংল্যান্ড দলের প্রধান দুই ব্যাটসম্যান হচ্ছেন কুক ও রুট, যারা দারুণ সব ক্রিকেট খেলেছেন এবং দেশে ও দেশের বাইরে সত্যিকারার্থে ভাল করেছেন।’
‘এই দু’জনের উভয়ের প্রতিই আমাদের খুব বেশি নজর রাখতে হবে এবং আশা করছি স্বল্প রানেই তাদের থামাতে পারব। তাদের বিপক্ষে সাফল্য পেলে তাদের অনভিজ্ঞ ব্যাটিং অর্ডার ধ্বসে দিতে সমস্যা হবেনা।’
স্টার্ক বলেন চার বছর আগে গাব্বায় জনসনের জ্বলে ওঠার ভিডিও দেখে তাকে ম্যাচ জয়ী পারফরমেন্সে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বলেন,‘আমরা সকলেই অনুপ্রাণিত। আপনি যখনই ঐ সিরিজের উল্লেখযোগ্য অংশ দেখবেন আপনি অনুপ্রাণিত হবেনই। অবিশ্বাস্য সিরিজ ছিল এটি।’
‘তার বোলিং এবং আগ্রাসন দেখে অনেক ইংলিশের চোখেই ভয় ধরে গিয়েছিল। একজন বোলার হিসেবে এবং ব্যাটসম্যানদের সংগ্রাম করতে দেখাটা সব সময়ই অনেক বড় বিষয়।’
বোলিং কোচ এবং সাবেক ইংল্যান্ড মেন্টর ডেভিড সাকেরের সংগৃহীত ভিডিও দেখে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানের বিষয়ে ইতোমধ্যেই নিজেদের হোমওয়ার্ক ও পরিকল্পনা সাজিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
স্টার্ক বলেন,‘দলে সাকেরকে পাওয়াটা অনেক বড় বিষয়। তিনি এক সময় ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। সুতরাং তার মেধা মেধা কাজে লাগানোটা আমাদের জন্য অনেক মূল্যবান কিছু হবে।
একই মানের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ী হতে তিন পেসার ছাড়াও অধিনায়ক স্মিথ এবং ওয়ার্নারকে অসি দলের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে ইংলিশরা তাকিয়ে থাকবে ব্যাটসম্যান কুক, রুট এবং পেস বোলার জেমস এন্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডের দিকে।
অনভিজ্ঞ তিনটি দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সম্মানজনক স্কোর নিয়েই গাব্বা টেস্ট শুরু করতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। দলটির অস্ট্রেলিয়ান কোচ ট্রেভর বেলিস বলেছেন যে কোন কিছুর জন্যই প্রস্তুত তারা। তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া শুরুতেই প্রতিপক্ষকে আঘাত হানতে পছন্দ করে এবং আমরাও শক্তভাবেই মাঠে নামার বিষয়ে নিজেরা আলোচনা করেছি। একটা অ্যাশেজ টেস্টে আপনি যতটুকু সম্ভব আমাদের প্রবলতা দেখবেন। আমরা এখানে সংখ্যা বাড়াতে আসিনি। আমরা এখানে জিততে এসেছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী।’
অস্ট্রেলিয়া দল:
স্টিভ স্মিথ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, ক্যামেরন ব্যানক্রফট, জ্যাকসন বার্ড, প্যাট কামিন্স, পিটার হ্যান্ডসকম্ব, জশ হ্যাজেলউড, উসমান খাজা, নাথান লিয়ন, শন মার্শ, টিম পেইন(উইকেটরক্ষক), চাদ সেয়ার্স, মিচেল স্টার্ক।
ইংল্যান্ড দল:
জো রুট(অধিনায়ক), মঈন আলী, জনি বেয়ারস্টো (উইকেটরক্ষক), জ্যাক বল, গ্যারি ব্যালেন্স, স্টুয়ার্ট ব্রড, এলিস্টার কুক, ম্যাসন ক্রেন, টম কারান, বেন স্টোকস, ডেভিড মালান, ক্রেইগ ওভারটন, মার্ক স্টোনম্যান, জেমস ভিন্স, ক্রিস ওকস।
