ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

যশোরে সৌদি প্রবাসীও ‘গায়েবি’ মামলার আসামি

  যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৩১  
আপডেট :
 ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৩

যশোরে সৌদি প্রবাসীও ‘গায়েবি’ মামলার আসামি

যশোরে পুলিশের দায়ের করা তিন মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ২৩২ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার তিনটি থানায় পৃথক এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়।

এর মধ্যে কোতয়ালী থানায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাড. সাবেরুল হক সাবুসহ ৩১ জন, বাঘারপাড়ায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুবসহ ১৬২ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়াও চৌগাছায় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম চঞ্চল, উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আসাদুজ্জামান আসাদসহ ৩৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি প্রবাসীকেও আসামি করা হয়েছে।

বিএনপির দাবি, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য পুলিশ গায়েবি মামলা দিয়েছে। এসব ঘটনার নূন্যতম কোনো সত্যতা নেই।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে যশোর প্রেসক্লাবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সাজা বাতিলের দাবিতে গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করে জেলা বিএনপি। রাতে কোতয়ালী থানায় এসআই হায়াৎ মাহমুদ বাদি হয়ে বিএনপির ৩১ নেতাকর্মীর নামে নাশকতার মামলা করেন।

আসামিরা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক, জেলা যুবদলের সভাপতি আনসারুল হক রানা ও সাধারণ সম্পাদক এম তমাল আহমেদ। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মুজিব সড়ক থেকে পুলিশের হাতে আটক জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কবির হোসেন বাবুসহ ৩ জনকে কথিত ওই নাশকতার মামলায় আসামি করা হয়েছে।

শুক্রবার আটককৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। অপর দুইজন হলেন যুবদল কর্মী সাইফুল ইসলাম বাবু ও জাহাঙ্গীর হোসেন।

এ ছাড়া সদর উপজেলার কচুয়া মোল্লাপাড়ার হারুন মোল্লার ছেলে খলিলুর রহমান নামে এক যুবককে আটক করে নাশকতার মামলায় আদালতে চালান দেয়া হয়েছে।

অপর আসামিরা হলেন, জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক অ্যাড. হাজি আনিছুর রহমান মুকুল, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান ধনি, বিএনপি নেতা সাবেক পৌর কাউন্সিলর অ্যাড. জুলফিকার আলী জুলু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর, শহরের বকচরের রহমান ড্রাইভারের ছেলে নুরুল আমিন, সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে রিপন, কিসমত নওয়াপাড়া মৃত মুজিবার মোল্লার ছেলে আনোয়ার হোসেন লাল্টু, আড়পাড়ার মৃত ওলিয়ার রহমানের ছেলে আমিনুর রহমান মধু, শেখহাটি দক্ষিণপাড়ার আমিরুল ইসলামের ছেলে ঝন্টু, নমিজারের ছেলে রাজ্জাক, হাবিবুর রহমানের ছেলে শিমুল, শেখহাটির আতিয়ার রহমানের ছেলে কামাল হোসেন, মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে আলতাফ হোসেন, ঝুমঝুমপুরের ইমান আলীর ছেলে ওবায়দুর রহমান, তালবাড়িয়ার আবুল হোসেনের ছেলে কবির হোসেন, শেখহাটির মৃত হাশেম আলী মোল্লার ছেলে আবু সাঈদ, বাহাদুরপুরের বানু বিশ্বাসের ছেলে রুহুল আমিন, কিসমত নওয়াপাড়ার আফসার আলীর ছেলে আজিজুর রহমান, কিসমত নওয়াপাড়ার আজিজের ছেলে রাজু আহমেদ, শেখহাটির মনোয়ার হোসেনের ছেলে বেনজির বিশ্বাস, ইছালী কারিকরপাড়ার মৃত মতলেবের ছেলে রাসেল, বকচর বিহারী কলোনির নওশেরের ছেলে লিটু ও বকচর এল মার্কেটের সামনের মৃত মিয়াজান মোড়লের ছেলে শাহাজান মোড়ল।

এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বাঘারপাড়ায় আসামি বিএনপির ১৬২ নেতাকর্মী: বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল হাই মনা, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক শামসুর রহমানসহ ১৬২ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে বাঘারপাড়া থানা পুলিশ। এসআই আবদুল মতিন বাদী হয়ে বুধবার মামলা দায়ের করেন। এর আগে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাঘারপাড়া থানা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব জানান, বাঘারপাড়া থানা পুলিশ বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে একের পর এক মিথ্যা মামলা করছে। এ মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক রয়েছে। যারা বিভিন্ন মাদরাসা ও স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করেন। অথচ পুলিশ এসব নিরীহ মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

চৌগাছায় সৌদি প্রবাসীসহ ৩৯ জন আসামি: চৌগাছায় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হালিম চঞ্চল, উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম মোর্শেদসহ ৩৯ জন নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। আসামিরা তালিকায় একজন সৌদিপ্রবাসীর নামও রয়েছে।

বুধবার যশোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে এই মামলা করেন। এই মামলার আটক ৯ আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, মামলার ১৫ নম্বরের আসামি উপজেলার ধুলিয়ানি ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের মৃত সুবহান আলীর ছেলে আরজান আলী দুই বছর ধরে সৌদি আরবে প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী শিখা বেগম।

তিনি জানান, আরজান আলী দুই বছর আগে সৌদি আরবে গেছেন। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। অথচ তাকে কথিত নাশকতার মামলায় আসামি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে মামলার বাদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, আরজান সৌদী প্রবাসী, তদন্তে প্রমাণিত হলে তার নাম বাদ পড়বে। এতে চিন্তার কিছু নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে এসআই মোশাররফ বলেন, মামলার এজাহারে ভুলক্রমে সৌদি প্রবাসীর নাম উঠতে পারে। তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, পুলিশ গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। একের পর এক গায়েবি মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও পুলিশের হয়রানি কমেনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত