ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা করছে মন্ত্রণালয়

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৩৫  
আপডেট :
 ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৫৭

যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা করছে মন্ত্রণালয়

শিক্ষা প্রশাসনে কর্মরত যোগ্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব কর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে শিক্ষা প্রশাসনের অধিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসানো হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মেধা, পেশাদারিত্ব, সততা ও দক্ষতাকে। সারাদেশের মাঠপর্যায়ের শিক্ষা প্রশাসনকে আরও গতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত করতেই এমন উদ্যোগ বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ যোগ্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেন। এসময় তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই এবং আইন-কানুন ও বিধি-বিধান সম্পর্কে ধারণার অভাব রয়েছে এমন মেধাহীন কর্মকর্তাদের আর শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হবে না।

শিক্ষামন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডসহ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর বা সংস্থায় পদ শূন্য হলে (বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার পদের বিপরীতে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়ার সময়) সেখানে নিয়োগ দেওয়ার উপযুক্ত কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার অযোগ্যরা নানা মহল থেকে তদবির করতে থাকে। এতে পদায়নে দেরি হয়। এ সমস্যা সমাধানের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে একটি ফিটলিস্ট প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। এ ধরনের একটি তালিকা তৈরি করুন।

মন্ত্রীর এ নির্দেশের পর মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট শাখা তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। এ কাজে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকেও (মাউশি) সম্পৃক্ত করা হতে পারে।

এদিকে গত কয়েক বছর ধরে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজেই। তার সঙ্গে থাকছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন ও অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন। এবার মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগেও একই নিয়ম চালু করা হয়েছে।

অন্যদিকে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর অধ্যক্ষ পদে পদায়নের জন্য যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করতে গত ৮ অক্টোবর ৬৮ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার সঙ্গে ছিলেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, সচিব মো. আলমগীর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাস।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। তবে বিসিএসের বিভিন্ন ব্যাচে মেধা তালিকার প্রথম দিকে থাকা ও একাডেমিক ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রি পাওয়া কর্মকর্তারা সাধারণত রাজধানীর বাইরে যেতে চান না। সবাই ঢাকায় থাকতে চান। তাই এ ধরনের তালিকা করা হলেও তালিকাভুক্ত ক্যাডারদের রাজধানীর বাইরে পদায়ন করা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হবে।

তিনি জানান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। তালিকা তৈরির পর যোগ্যদের যথাস্থানে পদায়ন করতে শিক্ষা প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল হতে পারে।

ব্যক্তিগত তথ্যাবলি বা পার্সোনাল ডাটাশিট (পিডিএস), বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর), ডেস্ক বা কর্মস্থলের পারফরম্যান্স (কৃতিত্ব) মূল্যায়ন করে কর্মকর্তাদের হালনাগাদ এ তালিকা প্রণয়ন করা হবে। যাদের পিডিএস এবং এসিআর ইতিমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তাদের শাস্তিমূলক বদলি করা হবে।

যোগ্যদের তালিকা প্রণয়নের পর তাদের পর্যায়ক্রমে মাউশি, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), শিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্প, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), মাউশির নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়, সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ এবং গুরুত্বপূর্ণ ও অপেক্ষাকৃত বেশি ছাত্রছাত্রী থাকা সরকারি কলেজের প্রশাসনিক পদে (অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ বা বিভাগীয় প্রধান) পদায়ন করা হবে।

এদিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, মাউশি, ডিআইএ এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, অদক্ষ, বিএনপি-জামায়াতের সুবিধাভোগী ও বিতর্কিত কর্মকর্তারা এখনও বহালতবিয়তে আছেন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি কলেজে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পদায়ন ও বদলি নিয়ন্ত্রণ করতে তাই সম্প্রতি অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের ফিটলিস্ট তৈরির নীতিমালা প্রণয়ন করেছে মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী, চাকরিতে নূন্যতম ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা অধ্যক্ষ এবং ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফরমে শিক্ষা সচিব বরাবর আবেদন করতে হবে। এতে আবেদনকারীর বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) সন্তোষজনক হতে হবে। কর্মকর্তাদের যোগ্যতার পাশাপাশি সততা, দেশপ্রেম, সাহস, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ফিটলিস্ট তৈরি করার কথা। যদিও প্রভাবশালীদের তদবিরের চাপে ফিটলিস্ট অনুযায়ী অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পারছে না মন্ত্রণালয়।

ডিপি/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত