ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

আহারে! যদি সুজন বেঁচে যেতো: চয়নিকা চৌধুরী

  বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:০৪

আহারে! যদি সুজন বেঁচে যেতো: চয়নিকা চৌধুরী

‘বিস্ময়ে ভ্রমি, বিস্ময়ে! সহজ কথা যায় না বলা সহজে। সত্যি তাই। তারপরও সহজ করে ভেবেই কিছু লিখবো ঠিক করেছি। কিন্ত আজ ‘গহীন বালুচর’ দেখে বাসায় ফিরে দেখলাম অরুণ, আমার ছেলে, মেয়ে সবাই যে যার ঘরে। আমি লাঞ্চ করতে করতে পুরো ছবিটার ভিতরেই ছিলাম। খেয়াল করে দেখলাম হঠাত, আমি কারো সাথেই কথা বলছিনা। চুপচাপ অনেকক্ষণ আমাদের প্রিয় ডাইনিং টেবিলে বসে থাকলাম। এক মুহুর্তের জন্যও গহীন বালুচর মাথা থেকে সরছেই না।

তার মানেটা খুব খুব স্পষ্ট। পরিচালক বদরুল আনাম সৌদ সফল হয়েছেন। তার পরিশ্রম, চেষ্টা ব্যার্থ হয়নি। সুনিপুণ নির্মাণ ‘গহীন বালুচর’। বাংলাদেশের মিষ্টি এক প্রেমের ছবি দেখে উঠলাম। যেখানে প্রথমেই গল্পে ডুবে যেতে হলো আমাকে। গল্প আমাকে বেঁধে ফেললো।

‘ভালোবাসায় বুক ভাসাইয়া’ আর ‘তারে দেখি আমি রোদ্দুরে’ আহ! বাপ্পা মজুমদার, মুন্নি আর লিজার গান কানে সারাক্ষন লেগে আছে এখনো। সাথে দারুণ ফটোগ্রাফি। কী যে সুন্দর! একদম মনের মত। নাজিবার হলুদের নাচ আর কোরিওগ্রাফিও অসাধারণ ছিল। অজস্র ধন্যবাদ সুরকার ইমন সাহাকে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এত্ত ভালো, এতটাই ভালো! মন ছুঁয়ে যায়!

বদরুল আনাম সৌদ, সুবর্ণা মুস্তাফা ও চয়নিকা চৌধুরী

কিন্ত কী যে মুশকিল কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি! মুন, নীলাঞ্জনা, তানভীর, নতুন তিন মুখ যে পাকা অভিনয় শিল্পীর মত অভিনয় করলো! অবাক হয়েছি। যত বড় সোকল্ড সুপারষ্টার আসুক না কেন তাদের জায়গাতে, এর চেয়ে বেশি ভালো করতেই পারতো না আমি শিওর। মনে হয়েছে এই চরিত্রের জন্য ওরাই পারফেক্ট। ১০০% ভাগ। সৌদ ভাই আপনি স্বার্থক। বোঝাই গিয়েছে কত্ত যত্নবান ছিলেন, কতটাই সিনসিয়ার ছিলেন আপনি তাদের অভিনয়ের ব্যাপারে।

সিনিয়ররা সবসময় ভালো করেন। কথায় আছে ওল্ড ইজ গোল্ড। তাই সুবর্ণা মুস্তাফা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আফরোজা বানু, ফজলুর রহমান বাবু তাদের কথা না বললেও চলবে। যা আমাকে মানায় না। তারা ফ্যান্টাসটিক ছিলেন। কিন্ত আলাদা করে আমি দুইজন মানুষের কথা আমি বলতেই চাই। অভিনেতা শাহাদাত-যিনি একাই তার অভিনয় দিয়ে চোখ ভাসিয়েছেন বার বার। হলে বসে ট্যিসু দিয়ে চোখ মুছতে হচ্ছিল। মাঝে মাঝে চোখের জলে ঝাপ্সা হচ্ছিল স্ক্রিন। শাহাদাত, এ আপনি কী করেছেন! কাঁদানো অনেক কঠিন এক কাজ। আমি তো আপনার মহাফ্যান হয়ে গেলাম। আহ! কী যত্ন! সৌদ ভাই আপনি স্বার্থক।

জিতু আহসান। ব্যাক্তিগত জীবন যাপনে এত্ত অনেষ্ট সহজ সরল মানুষটাকে তো আমার মারতে ইচ্ছা করেছে! এত্ত খারাপ হয় মানুষ! কী নিখুত অভিনয়! ইশ! কী করে এত্ত ভালো অভিনয় জিতু করলেন। স্পীচলেস আমি। আর রুনা খান। তিনি ভালো অভিনয় করেন কে না জানে! কিন্ত এই প্রথম তাকে আমার এত্ত সুন্দর লেগেছে! কী যে মায়ায় ভরা তার মুখ, অভিব্যাক্তি! যা বোঝাতে পারবো না লিখে।

'গহীন বালুচর' দেখার পর চয়নিকা চৌধুরী ও দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রীরা

গ্রাম বাংলার ফটোগ্রাফি সত্যি দারুণ। ধন্যবাদ আপনার ডিওপি কমলকে। সুন্দর এডিটিং। টানটান উত্তেজনা ভরা ছিল পুরো সিনেমা জুড়ে। শেষটায় বুক ভার হয়ে গেলো! এত্ত ব্যাথা হচ্ছিল! কষ্টে এক সময় শ্বাস নিতে পারছিলাম না। আহারে! যদি সুজন বেঁচে যেতো! যদি পারুল চোখ খুলে সুন্দর পৃথিবী দেখতো! কিন্ত তাতো হবে না। এটা বদরুল আনাম সৌদ-এর ‘গহীন বালুচর’!

সুবর্ণা মূস্তাফা এবং বদরুল আনাম সৌদ। আমি মুগ্ধ। আমি আপ্লুত। কারণ এমন একটি সিনেমা দেখলাম, যা সবার সাথে বসে একসাথে দেখা যায়। আপনাদের দুই জনকেই স্যালুট। সব কিছুই খুব খুব পারফেক্ট ছিল। কাষ্টিং ১০০% ঠিকঠাক। আমি জানি, এমন একটা আবেগী ছবি দেখতে হলে গিয়ে মানুষ দেখবে। একবার না, বার বার দেখবে। আর বাসায় যেতে যেতে ভাববে, কী গর্বের বিষয় যে, আমাদের দেশে এমন মেধাসম্পন্ন, বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালক আছেন। আবারো অভিনন্দন দুই জনকেই। জয় হোক ‘গহীন বালুচর’-এর। জয় হোক আমাদের বাংলা সিনেমার।

--জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।

কেআই/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত