ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

নেপালের গণমাধ্যমেও কাঠগড়ায় ত্রিভুবন

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০১৮, ১০:১৩  
আপডেট :
 ১৮ মার্চ ২০১৮, ১২:৩৬

নেপালের গণমাধ্যমেও কাঠগড়ায় ত্রিভুবন

নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে দেশটির গণমাধ্যমে। দেশটির প্রভাবশালী দুটি গণমাধ্যমে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে অব্যবস্থাপনা এবং উদ্ধার তৎপরতায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতির কথা বলা হয়েছে। এতে মন্তব্য করা হয়, এসব সমস্যা না থাকলে হয়তো ওই ট্র্যাজেডি এড়ানো যেত।

নেপালের টাইমস ডটকমে শুক্রবার প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়, কোন রানওয়েতে নামতে হবে, তা নিয়ে পাইলট ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি অব্যবস্থাপনারই উদাহরণ।

দেশটির প্রবীণ সম্পাদক ও মানবাধিকারকর্মী কনক মণি দীক্ষিতের লেখা নিবন্ধে বলা হয়, ইউএস-বাংলার বিমানটিকে প্রথমে ২ নম্বর রানওয়ে দিয়ে অবতরণ করার কথা বলে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। তখন বিমান নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের (এটিসি) সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন কো-পাইলট পৃথুলা রশীদ। এরপর ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান যোগাযোগ শুরু করেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে আবিদকে জানানো হয়, ২ নম্ব্বর রানওয়েতে নামার অনুমতি নিলেও বিমানটি যাচ্ছে ২০ নম্বর রানওয়ের দিকে।

কনক লিখেছেন, এ থেকেই বোঝা যায় যে, পাইলটের মনে দুই রানওয়ে নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি ছিল। এ সময় আরেকটি বিমানের একজন নেপালি পাইলট এটিসির সঙ্গে ইউএস-বাংলার পাইলটদের কথোপকথন শোনেন। সেখানে এটিসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ইউএস-বাংলার পাইলটকে কিছুটা অগোছালো মনে হচ্ছে। তখন তাকে রাডারের সাহায্য নিয়ে বিপজ্জনক পথ থেকে সরে আসতে বলা হয়।

কনক লিখেছেন, এরপর বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এক কর্মকর্তা তাকে সতর্ক করেন। ইউএস-বাংলার পাইলট ২০ নম্বর রানওয়েতে নামার অনুমতিই চান। ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান আবার বলে ওঠেন, 'রানওয়ে ২-এ নামার জন্য প্রস্তুত' (যদিও এর আগে ২০ রানওয়েতে নামতে অনুমতি নিয়েছিলেন তিনি)। এই সময় এটিসি নামার অনুমতি দেয়। এরপর শেষবারের মতো এটিসি বলে, ইউএস-বাংলার বিমানটি 'অন ফাইনাল ফর ২০'।

নেপালের দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট স্থানীয় শিখরনিউজ ডটকমের বরাত দিয়ে গত বৃহস্পতিবার ভিডিওচিত্রসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে গাগালপেদি এলাকায় বিমানটি অনেক নিচে নেমে আসে। ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২০০ ফুট ওপর দিয়ে যাচ্ছিল বিমানটি। এ সময় মনে হচ্ছিল, বিমানটি যেন পাহাড়ের পাদদেশে বিধ্বস্ত হতে যাচ্ছে। যাত্রীরা এ সময় জানালা দিয়ে গাছপালা-ঝোপজঙ্গল দেখতে পান। নিবন্ধে বলা হয়, ওই ভিডিও দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, দিনের আলোতেও পথ হারিয়ে ফেলেছিল ইউএস-বাংলার বিমানটি। তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (এটিসি) থেকে বিমানটিকে 'ভিজ্যুয়াল ফ্লাইট রুলস' থেকে ইনস্ট্রুমেন্টাল ফ্লাইং'-এ যেতে বলা হলো না? কারণ, বিমানটিকে বিপজ্জনকভাবে উড়তে দেখা যাচ্ছিল।

এতে বলা হয়, সর্বশেষ ইউএস-বাংলার পাইলট জিজ্ঞেস করেছিলেন, অবতরণ করতে পারবেন কি-না। তখন এটিসি থেকে বলা হয়েছিল, 'আমি আবার বলছি, ঘুরে যান।' এর পরই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

কনক লিখেছেন, এই অপর্যাপ্ত রেডিও যোগাযোগ আবার ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মনোযোগ দিতে বাধ্য করেছে। প্রশ্ন উঠছে বিমানবন্দরটির নিরাপত্তা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে। যে জায়গায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, তার কাছেই ছিল জনঅধ্যুষিত শহর এবং বিমানটি এর আগে বিপজ্জনকভাবে টার্মিনাল ভবন, হ্যাঙ্গার, পার্কিং বে ও ট্যাক্সিওয়েজের ওপর দিয়ে ওড়াউড়ি করছিল। কনক লিখেছেন, ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেন দেশের লজ্জায় পরিণত না হয়, এ জন্য উন্নতিকল্পে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি লিখেছেন, জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় কর্মীবহর ও সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে।

যথাযথ সরঞ্জামের অভাবে প্রাণহানি বেড়েছে : গতকাল শনিবার হিমালয়ান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্তের পর যথাযথ সরঞ্জামের অভাবে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে। উদ্ধারকারীদের কাছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলে বহু যাত্রীকে বাঁচানো যেত।

উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অগ্নিনির্বাপক কর্মী বলেছেন, যে ২২ জনকে সেদিন জীবিত উদ্ধার করা হয়, তাদের বেশির ভাগকেই উদ্ধার করা হয় এমন জায়গা থেকে যেখানে আগুনই ধরেনি। তারা বিমানটির ও তার আশপাশের জ্বলন্ত আগুনের কাছে যেতেই পারেননি। কারণ আগুনের কাছে যাওয়ার মতো তাদের উপযুক্ত সরঞ্জাম ছিল না। অথচ এ ধরনের পরিস্থিতিতে সেসব সরঞ্জাম থাকা বাধ্যতামূলক।

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের নিয়মানুযায়ী ঘটনার তিন মিনিটের মধ্যে সেসব সরঞ্জাম সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক। ওই উদ্ধারকর্মী বলেন, 'অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি অগ্নিনির্বাপক স্যুট না থাকায় আমাদের আধঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।'

ময়নাতদন্তে নিয়োজিত ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে হিমালয়ান টাইমস বলছে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যে ৪৯ জন নিহত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। বিধ্বস্তের পর বেশ চাপের মধ্যেও তারা অনেক সময় বেঁচে ছিলেন। অন্য এক উদ্ধারকারী হিমালয়ান টাইমসকে বলেন, 'আমরা তাদেরই বাঁচাতে পেরেছি যারা ভাগ্যক্রমে আগুন থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।'

সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব নেপালের (সিএএএন) কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, উদ্ধারকারীদের জন্য শুধু অগ্নিনির্বাপক স্যুট ইস্যু করা হয়েছে, যা ত্রিভুবন বিমানবন্দরের ওইদিনের ঘটনার জন্য যথেষ্ট ছিল না। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বলেন, 'মূলত যেখানে আগুন ছিল, সেখানে যাওয়ার মতো পোশাক ও সরঞ্জাম থাকলে তারা (উদ্ধারকারী) আরও মানুষকে জীবিত উদ্ধার করতে পারত।'

দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ২৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিক শাহরিন আহমেদ জানান, তিনি দেখেছেন যে, অন্য যাত্রীরা পুড়ছে, চিৎকার করছে এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। একটি বিমান সংস্থার পাইলট বলেন, ইউএস-বাংলার বিমানটির দুর্ঘটনার পরে কর্তৃপক্ষের বিলম্বিত তৎপরতাই বলে দিচ্ছে জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি কী অবস্থায় আছে। ত্রিভুবন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা ৯ নম্বর ক্যাটাগরির (বড় বিমান) দুর্ঘটনা সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত (সনদপত্র আছে)। তবে ওই পাইলট বলেন, তারা তো ক্যাটাগরি ৫ বিমানের দুর্ঘটনাই সামাল দিতে ভয়াবহ দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে।

/এসকে/

আরও পড়ুন :

১৭ বাংলাদেশির মরদেহ শনাক্ত

১৮ কি.মি. দূরে থাকতেই ল্যান্ডিং গিয়ার খুলে যায় ইউএস-বাংলা ফ্লাইটের (ভিডিও)

  • সর্বশেষ
  • পঠিত