ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

দ্বিতীয় বিয়ে সুখ না কষ্টের কারণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:১৮

দ্বিতীয় বিয়ে সুখ না কষ্টের কারণ

মৃত্যু! ছোট্ট একটি শব্দ, যা আমাদের নিয়ে যায় অজানা কোন রাজ্যে, যার সম্পর্কে আমরা প্রায় কিছুই জানিনা। যখন মৃত্যুর ডাক এসে যায়, ভালবাসার জীবনসঙ্গী, আদরের সন্তানেরা, সবচাইতে আপন বাবা-মা কেউ তাদের বন্ধন দিয়ে ধরে রাখতে পারেনা।

তবে জীবনসঙ্গীর অকালপ্রয়াণ শোকাবহ ও খুবই কষ্টদায়ক। তাই পুনরায় বিয়ে নারী বা পুরুষের যৌক্তিক আইনি অধিকার। এটা নবজীবনের সন্ধান দেয়। কিন্তু অনেক সময় দ্বিতীয় বিয়ে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

জীবনসঙ্গীর অকালপ্রয়াণ সবাই বিয়ে করেন না। বেশির ভাগ নারী স্বামী মারা গেলে সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। কিন্তু পুরুষদের অনেকেই দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কারও কারও পরিবারে হয়তোবা দ্বিতীয় বিয়ে করার রীতি প্রচলিত আছে। ছেলেরা ছোটবেলা থেকে সংসারের কাজে অনভ্যস্ত। তাই ভীতি কাজ করে। সন্তানের লালন-পালন স্ত্রীরাই করেন। এই ব্যাপারটা এড়াতে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পুরুষেরা দেরি করেন না।

ছেলেমেয়েরা অনিচ্ছুক হলেও আত্মীয়স্বজনের অনেকেই প্রবল উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে আসেন। তারা উদ্বুদ্ধ করেন। পুরুষ মানুষের বউ ছাড়া কি চলে? কে তাঁকে দেখবে? ছেলেমেয়ে আর কয়দিন। নানা রকম বিচিত্র যুক্তি। বিপত্নীকের মা, বোন, ভাবিরাও উসকানিতে কম যান না। নতুন নতুন সব উপসর্গ যোগ হয়। এখন অনেকে ধর্মীয় রীতির দোহাই দেন। বলেন, বিয়ে করাই উত্তম। পুরুষ মানুষের বিয়ে করাই উত্তম। একা থাকা ঠিক না।

তবে যাঁরা স্ত্রীকে ভালোবাসতেন অথবা আর সংসারের বাঁধনে জড়াতে চান না। যাঁরা ঘরকুনো; মানুষের সঙ্গে তেমন মেশেন না, তারা বিয়ে করে নতুন ঝামেলায় জড়াতে চান না। সন্তানদের নিয়ে থাকেন বা নিজের মতো থাকেন। আবার অনেকে আছেন এসব ভুলে থাকতে কাজকে আপন করে নেন। বাইরে ব্যস্ততা বাড়িয়ে দেন।

অনেকে আছেন সামাজিক চাপ, জৈবিক তাড়না আর মানসিক জটিলতা মোকাবিলার জন্য বিয়ে করতে বাধ্য হন। পুরুষশাসিত সমাজে দ্বিতীয় বিয়ে তেমন কোনো ব্যাপার নয়। সবাই এটা মেনে নেয়। চাপে থাকে সন্তানেরা। তারা না পারে সইতে না পারে কিছু করতে। বংশের নতুন নতুন প্রদীপ জ্বালানোর জন্য আত্মীয়স্বজন অস্থির হয়ে পড়েন। জৈবিক তাড়না অনেকে স্বীকার করতে লজ্জা পান। কিন্তু বাস্তবে এটা মেনে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। এতে অনেক অঘটন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

সঙ্গীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে যেমন অনেক কিছুরই সমাধান, তেমনি অনেক সমস্যারও সৃষ্টি করে। নানা রকম পারিবারিক সংকট দেখা দেয়। বাবা বা মায়ের নতুন বিয়ের প্রতি সন্তানদের সমর্থন বিরল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্তানদের মধ্যে মনোজটিলতা দেখা দেয়। তারা মানতে পারে না। বিয়ে যতটা না দেয় মানসিক প্রশান্তি; তার চেয়ে ক্ষেত্রবিশেষে সার্বিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনও জীবনকাহিনি জেনেছি, বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর সন্তানেরা অনেক দূরে সরে গেছে। বাবা ও সন্তানের যে স্বাভাবিক সম্পর্ক ও আনন্দ; তা নষ্ট হয়েছে। এই মানসিক চাপও একজন বাবার জন্য বিব্রতকর ও দুঃসহ। একজন বিপত্নীক বিয়ে চান; কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সন্তানদের সঙ্গে দূরত্বও চান না। সম্পত্তির বণ্টন নিয়ে তীব্র টানাপোড়েন ও মামলা-মোকদ্দমা চলতে থাকে। নতুন মায়ের সঙ্গে সন্তানদের দুর্ব্যবহার; দূরত্ব, মন্দ ও তিক্ত সম্পর্ক; কিংবা স্বামীর আগের পক্ষের সন্তানদের সঙ্গে নতুন মায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহার রীতিমতো সাহিত্যের অনুষঙ্গ। এই জটিল পরিস্থিতির দুই পিঠেই আছে অনেক যুক্তি ও কষ্টের গল্প।

যদি দ্বিতীয়বারের মত বিয়ের পিঁড়িতে বসতেই হয়, তবে তার আগে অবশ্যই সন্তানদের চাহিদা, যুক্তি-প্রতিযুক্তি, বক্তব্য সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। যাঁর সঙ্গে বিয়ে, তাঁকে নিজ সংসারের বাস্তব পরিস্থিতি, সন্তানদের মনোভাব, মানিয়ে নেওয়ার সহায়তা- এসব বিষয়ে আলোচনা থাকতে হবে। এছাড়াও নবাগতকেও বুঝতে হবে। তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আগ্রহ, আত্মবিশ্বাসকে মূল্যায়ন করতে হবে।

তবে যাই হোক বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কোন পরিস্থিতিতে বিয়ে, কেন, সমস্যা-সংকট, সুবিধা-অসুবিধা সব ইস্যু ঠান্ডা মাথায় বিচার-বিশ্লেষণ করে নেওয়াই উত্তম।

জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত